Advertisement
E-Paper

মরা হলে জোয়ার এনে হিরো বাহুবলী

দেওয়ালে রং চটেছে বহু দিন। কার্নিস ভেঙে পড়েছে। সিনেমা হলের ভিতরে চেয়ার ভাঙা। দর্শক আসে না। তাই মেরামতিও করাননি মালিক। সেই ভাঙা হলেই আবার চাঁদের, থুড়ি টর্চের আলো ফেলতে হচ্ছে। ভাঙা আসন খুঁজতেই ভিড় করছেন দর্শকেরা। হাততালি দিচ্ছেন পর্দায় বাহুবলী আর বল্লালদেবের মল্লযুদ্ধ দেখে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০৩:০০

দেওয়ালে রং চটেছে বহু দিন। কার্নিস ভেঙে পড়েছে। সিনেমা হলের ভিতরে চেয়ার ভাঙা। দর্শক আসে না। তাই মেরামতিও করাননি মালিক।

সেই ভাঙা হলেই আবার চাঁদের, থুড়ি টর্চের আলো ফেলতে হচ্ছে। ভাঙা আসন খুঁজতেই ভিড় করছেন দর্শকেরা। হাততালি দিচ্ছেন পর্দায় বাহুবলী আর বল্লালদেবের মল্লযুদ্ধ দেখে। উলুবেড়িয়ার নরেন্দ্র সিনেমা হলের ম্যানেজার অরিজিৎ সিংহ রায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, ‘‘আসন ভাঙা। কোথায় বসতে দেব? তাই ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বহু দর্শককে। না হলে আমাদের আয় আরও অনেকটা বাড়ত।’’

অরিজিৎবাবুর সুরই এখন গ্রাম বাংলার সিংহভাগ হলমালিকের মুখে। মাল্টিপ্লেক্সের জাঁক আর পাইরেসির চাপ— এই দুইয়ের চাপে ধুঁকতে বসা সিঙ্গল স্ক্রিন হলের মালিকেরা বাহুবলীর বাহুবলেই অনেক দিন পরে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন। জলপাইগুড়ির শ্রীদয়াল সিনেমার মালিক পরীক্ষিৎ ঘোষ তো নিজে ভেবে বাহুবলী টু-এর জন্য নতুন পোস্টারই বানিয়ে ফেলেছেন। তা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরীক্ষিৎবাবুর কথায়, ‘‘গত দেড় বছরে আমার যা ব্যবসা হয়েছে, বাহুবলী একা সেই ব্যবসা করেছে।’’

২৮ এপ্রিল মুক্তি পাওয়ার পরে কেটেছে এক সপ্তাহ। পৃথিবী জুড়ে ৮০০ কোটিরও বেশি কামিয়ে ফেলেছে ‘বাহুবলী টু’। সেই জোয়ারে ভাসছে এ রাজ্যও। যে সব হলে শেষ কবে ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝোলাতে হয়েছিল মনে পড়ে না, সেখানেও এখন দর্শকের রমরমা।
বাগনানের ‘শিবানী’তে অন্য ছবির ক্ষেত্রে গড়ে প্রতি সপ্তাহে টিকিট বিক্রি হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা করে। এ সপ্তাহ শেষে দেখা যাচ্ছে টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার। হলের অন্যতম মালিক শুভময় মাইতি বলছেন, ‘‘এখন ভিড় হয় ইদ, পুজো, দেওয়ালি এই
সব দিনে। বাহুবলীর টানে উৎসব ছাড়াই এক সপ্তাহ ধরে হলের সামনে ভিড়।’’ তাঁর হলে
অন্য ছবির ক্ষেত্রে প্রথম দু-একদিন ছাড়া দর্শক হয় শো প্রতি জনা কুড়ি করে। বাহুবলী দর্শক টেনেছে প্রতি শো-তে গড়ে ৩০০ জন। শুভময়বাবুর কথায়, ‘‘সিনেমা হলের মরা দিনে এটা কম কথা নয়!’’

বিজ্ঞাপন: জলপাইগুড়ির শ্রীদয়াল সিনেমা হলের এই পোস্টারই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

সিনেমা হলের মরা দিনের কথাই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন তাঁর ‘সিনেমাওয়ালা’ ছবিতে। আজ বাহুবলী গ্রাম বাংলার সেই সিনেমাওয়ালাদের সুদিন ফিরিয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের এমনই খেলা, এখন কৌশিককেই টুইটারে সরব হতে হয়েছে বাহুবলীর জন্য তাঁর ছবি ‘বিসর্জন’ পর্দা পাচ্ছে না বলে!

আরও পড়ুন:‘বাহুবলী ৩’ করতে গেলে একটা শর্ত দিলেন পরিচালক

ভাগ্যকেই অবশ্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন কোচবিহারের ব্যাঙচাতরা রোডের একটি হলের ম্যানেজার যতীন্দ্রনাথ সাহা। জানিয়ে দিচ্ছেন, “ছবি শুরুর পর প্রথম সপ্তাহে ২ লক্ষেরও বেশি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এই হল-এর ৬৮ বছরের ইতিহাসে এমন হয়নি।’’ শিলিগুড়ির বাবুপাড়ার নিউ সিনেমা হলের ম্যানেজার সুজন দে জানাচ্ছেন, ‘‘গত শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমোতে পারিনি। এই সপ্তাহান্তে আবার শুরু হয়েছে টিকিটের আবদারে শয়ে শয়ে ফোন। কত নামীদামি লোকের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’

সিঙ্গল স্ক্রিন হল মাল্টিপ্লেক্সের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারে না। সে কারণেই দর্শক হলমুখী হন না বলে একটা মত রয়েছে। বাগনানের ‘শিবানীর’ মালিক শুভময়বাবু অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড বসিয়েছি। ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও বছরের বেশির ভাগ সময়েই দর্শক পাইনি।’’ তাই ছবি সবার পছন্দ হলে যে দর্শক হল-এ আসেন, তা বাহুবলী দেখিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন হলমালিকেরা। ইম্পা-র প্রদর্শক বিভাগের সভাপতি সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘বাহুবলী টু অনেক দিন পরে হলগুলির ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দলে দলে মানুষ হলে যাচ্ছেন। এমন ঘটনা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি।’’

হলমালিকেরা চাইছেন, বাহুবলীর মতো অন্তত দু’টি ছবি হোক বছরে। তা হলেই ফিরবে সিনেমাওয়ালাদের ভাগ্য।

Baahubali 2: The Conclusion Indian Cinema Cinema Hall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy