উত্তপ্ত ঢাকার অমর একুশে বইমেলা। আর তার কেন্দ্রে দুই নারী— এক জন তসলিমা নাসরিন, আর এক জন বাংলাদেশের অভিনেত্রী ও প্রকাশক সনজানা মেহেরান।
এ বছর মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই সনজানা সরব হয়েছিলেন বদলে যাওয়া মেলার চরিত্র নিয়ে। তাঁর দাবি ছিল, নতুন পরিবেশ, অচেনা আবহে বইমেলা ছন্দ হারিয়েছে। এরই মধ্যে তিনি প্রকাশ করেছিলেন তসলিমা নাসরিনের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ ‘চুম্বন’। তার পর থেকেই দোকান ‘গুঁড়িয়ে’ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল সনজানাকে। সমাজমাধ্যমে গত দু’দিন এ নিয়ে সকলকে অবগত করেছিলেন তিনি। আশঙ্কাও করেছিলেন বড়সড় হামলার। ঠিক সেটাই সত্যি হয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। বইমেলা প্রাঙ্গণে তাঁর দোকানে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে একদল উন্মত্ত জনতা। তাঁর স্বামীকে কোনও রকমে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে পুলিশ। সনজানা কোথায়, জানা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, নিরাপত্তার স্বার্থে নজরবন্দি রাখা হয়েছে তাঁকে গোপন আস্তানায়।
এরই মধ্যে অভিনেত্রীর সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে একাধিক হুমকি এসেছে। এমনকি বইমেলা থেকে তসলিমার বইটি সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করা হয়েছিল কিছু কর্তাব্যক্তির তরফেও। সোমবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে সনজানা জানিয়ে দেন, তিনি বই সরিয়ে ফেলছেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁদের প্রকাশনা সংস্থা ‘সব্যসাচী’র স্টল ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তবে কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চেষ্টায় এখনও অক্ষত রয়েছে সেটি, জানা গিয়েছে সনজানা ঘনিষ্ঠদের তরফে। আপাতত তালাবন্ধ সে দোকান। সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল।
বইমেলায় তাঁর উপর হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কা ছিল বলেই সোমবার রাতে হামলার সময় সনজানা মেলাপ্রাঙ্গণে থাকলেও দোকানে ছিলেন না। তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরাই সরিয়ে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু দোকান বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যান তাঁর স্বামী শতাব্দী ভব। শেষ পর্যন্ত দোকান বন্ধ করে তাঁকে যখন বার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, সে সময় ফের ভবর উপর চড়াও হন একদল মানুষ। পুলিশ না-থাকলে তিনি কতটা অক্ষত থাকতেন, সে বিষয়ে সন্দিগ্ধ সনজানা-ঘনিষ্ঠেরা।
আরও পড়ুন:
সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সনজানা জানিয়েছিলেন, প্রতি বছর তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ বইমেলায় ফি-বছর সেই বই বিক্রিও হয়। সে দেশে তসলিমার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় অল্পবিস্তর হুমকিও পেতে হয়। কিন্তু কোনও দিনই তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তাই ডাকাবুকো অভিনেত্রী এ সব নিয়ে মাথা ঘামাননি কখনও। এ বছরও তিনি প্রকাশ করেছেন তসলিমার বই। তার পর থেকেই একের পর এক হুমকিবার্তা আসছে তাঁর কাছে। নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও সনজানা দাবি করেছিলেন, আগামী শুক্রবার আরও একটি বই প্রকাশ পাবে তসলিমার।
জানা গিয়েছে, সংবাদমাধ্যমে এই কথোপকথন প্রকাশের পরই শুরু হয়ে যায় তাণ্ডব। বইমেলায় তাঁদের প্রকাশনা স্টলের সামনে এক ল মানুষ জড়ো হয়ে ধিক্কার দিতে থাকেন। সে সময়ই দোকান ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি ঘোরালো হতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে শতাব্দী ভবকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তিনি পুলিশি হেফাজতেই থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু সনজানা কোথায়? সূত্রের খবর, তিনি গোপন আস্তানায় নজরবন্দি। বাইরে পা রাখতে পারছেন না। সব কাজ আটকে গিয়েছে তাঁর। বাংলাদেশ বইমেলার মেয়াদ চলতি মাসের পুরোটাই। সব্যসাচী প্রকাশনা সংস্থা কি পরে আবার খুলবে? সেই উত্তর পাওয়া যায়নি।