বিষয়টি যেন ছোট গল্পের মতো। 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ'! বছরের শুরুতে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়কে ঘিরে পরিচালক-ফেডারেশনের যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে দিন দুয়েক আগে তার সাময়িক সমাধান হয়েছে। কয়েক দফা শর্ত রাখা পরিচালক গিল্ড-এর সদস্যেরা কাজে যোগ না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই পর্বও আপাতত ইতি। কিন্তু সমস্যা যে মেটেনি ফের আভাস মিলল সোমবার। দিন কয়েক ধরেই শোনা যাচ্ছিল, পরিচালকদের পুরোনো গিল্ড ইআইএমপিডিএ (ইস্ট ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন) নাকি নতুন করে জেগে উঠছে। সোমবার রাতে সেই খবর আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে স্বীকার করে নিলেন সংগঠনের সম্পাদক শুভম। তাঁর কথায়, "আমাদের এই সংগঠন শতাব্দীপ্রাচীন। সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদার, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, তপন সিংহের মতো পরিচালকেরা এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে সম্ভবত কোনও মতানৈক্য থেকেই নতুন পরিচালক সংগঠনের জন্ম। যেখানে যোগ দেন বহু পরিচালক। তাঁদেরই কিছু আবার ফিরে আসছেন।"
শুধু ফিরে আসছেন না, মাত্র হাজার টাকায় তাঁরা সদস্য পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। খবর, নতুন সংগঠনের সদস্য হতে গেলে নাকি দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এ-ও শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশনও নাকি আগামী দিনে পুরনো গিল্ড-এর সদস্যদের সমর্থন জানাবে। তাঁদের সব রকম সুবিধা দেবে, যা নাকি নতুন সংগঠনের সদস্যেরা পাবেন না। তাঁদের সদস্য পরিচয়পত্রকে মান্যতা দেবে না ফেডারেশন।
এই কারণেই কি 'ঘর ওয়াপসি' ঘটছে পরিচালকদের? না কি ফেডারেশনের সঙ্গে নিত্য বিবাদ এড়াতেই এই পন্থা?
টলিউডের অন্দরে এর জবাব রয়েছে। কেউ বলছেন, পুরনো গোষ্ঠী নাকি ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ঘনিষ্ঠ। তুলনায় নতুন গোষ্ঠীর সদস্যেরা প্রতিবাদী, বিদ্রোহী। তাই নাকি এই ব্যবস্থা। অনেকের দাবি, পরিচালকদের মধ্যেই মতভেদ তৈরি হচ্ছে। তাই কিছু পরিচালক সরে যাচ্ছেন।
ডিএইআই-এর সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়েরও কি তাই মত? যোগাযোগ করতেই বিষয়টি এড়িয়ে যান সম্পাদক। সভাপতির দাবি, তিনি বিন্দুবিসর্গ জানেন না। কারা ফিরলেন পুরনো ঘরে? প্রশ্ন রাখতে শুভম বলেন, "অনেকেই ফিরেছেন। তালিকা দেখে নাম বলতে হবে। বেশ কিছু পরিচালক ফিরে এসেছেন। আমাদের সদস্যসংখ্যা এই মুহূর্তে বেড়ে ৭৫০।" কেন ফিরছেন পরিচালকেরা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত আবারও কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তাই কিছু পরিচালক ফিরে এসেছেন। তিনি আরও জানালেন, পরিচালকদের নতুন সংগঠনে বড় পর্দার থেকে ছোট পর্দার পরিচালকের সংখ্যা বেশি। এখানে শুধুই সিনেমার পরিচালকেরা আছেন। সেই কারণেও অনেকে ফিরে আসতে পারেন। যাঁরা ফিরছেন তাঁদের প্রত্যেককে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
যাঁদের নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত তাঁরাও কি ফিরে আসছেন? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিচালক কৌশিকের সঙ্গে। তবে তিনি ফোনে অধরা। একই ভাবে সাড়া দেননি শ্রীজিৎ-ও। কথা বলেছেন জয়দীপ। তাঁর সাফ কথা, "আমার কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। আমি যেখানে ছিলাম অর্থাৎ নতুন গিল্ড-এই আপাতত আছি।" এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, আরও পরিচালক নাকি শীঘ্রই যোগ দিতে চলেছেন পুরোনো সংগঠনে। যাঁর সভাপতি ছিলেন সদ্যপ্রয়াত পরিচালক রাজা মিত্র।
সাধারণত, একটি সংগঠন ভেঙে নতুন সংগঠন তৈরি হলে একটা সময়ের পর পুরনো সংগঠনের অস্তিত্ব বিলুপ্তি ঘটে। নতুন সংগঠন পুরনোর জায়গা নিয়ে নেয়। পরিচালকদের সংগঠনের ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়নি। সে কথা জানিয়েছেন পুরনো সংগঠনের সম্পাদক। অর্থাৎ, দুটো সংগঠন সমান্তরাল ভাবে থেকেই গিয়েছে। এ ভাবে একটি বিভাগের দু'টি সংগঠন থাকতে পারে? স্বার্থসিদ্ধির কারণে দুই সংগঠনের মধ্যে পরিচালকদের যাওয়া-আসা নীতি এবং আইনসম্মত? এই জবাব নেই পুরনো পরিচালক সংগঠনের সম্পাদকের কাছে। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত। তিনি কোন সংগঠনে থাকবেন, বুঝতে পারছেন না। নতুন ছবির কাজে হাত দিতে চলেছেন। কোন সংগঠনে থাকলে মসৃণ ভাবে কাজ করতে পারবেন, প্রশ্ন তাঁরও।
পরিচালকদের ঘরবদল নিয়ে কী বলছেন ফেডারেশন সভাপতি? প্রতিবারের মতো এ বারেও স্বরূপ নীরব।