Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষীরের বদলে চিনির বরফি

গল্পের বরফি বিট্টি মিশ্রকে (কৃতী) লাভলি সুইটসের বরফির মতোই আদরে ও প্রশ্রয়ে বড় করে তুলেছে বাবা (পঙ্কজ ত্রিপাঠী)। ছাদে ব্রেকড্যান্স বা ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতির মতোই বেপরোয়া বিট্টি।

সোহিনী দাস
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৯:০০
Share: Save:

‘ঝুমকা’ হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের বরেলী। মধ্যপ্রদেশের এই ছোট্ট শহর ঘিরেই রূপকথা বুনতে বসেছিলেন পরিচালক। তাতে রাজা-রানি বা ঢাল-তলোয়ার নেই। আছে সাধারণ মধ্যবিত্তের গল্প। যেখানে রোজকার যুদ্ধ আছে, আছে হেরে যাওয়াও। সমাজের লাল চোখ আছে। আর সে সবের মধ্যেও বেঁচে আছে একফালি স্বপ্ন।

গল্পের বরফি বিট্টি মিশ্রকে (কৃতী) লাভলি সুইটসের বরফির মতোই আদরে ও প্রশ্রয়ে বড় করে তুলেছে বাবা (পঙ্কজ ত্রিপাঠী)। ছাদে ব্রেকড্যান্স বা ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতির মতোই বেপরোয়া বিট্টি। ছেলেদের মতো লাগামছাড়া বিট্টিকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই স্কুলশিক্ষিকা মায়ের (সীমা পাহওয়া)। প্রথম ছবি ‘নীল বাট্টে সান্নাটা’-তেও মা-মেয়ের গল্প বলেছিলেন পরিচালক অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি। এখানেও বাবা-আর মেয়ের ছকভাঙা সম্পর্কের সেই সহজ সেতুটুকু বেঁধে দিতে পেরেছেন তিনি।

প্রেম আর কমেডি থাকলেও এ গল্প আসলে হেরোদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সাম্প্রতিক কালে ‘পিঙ্ক’ থেকে শুরু করে ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’ ছবিগুলোতে বারবার উঠে এসেছে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টা। কিন্তু সেই চিরাচরিত লাইন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেও বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফিরে এসেছেন পরিচালক। বারবার পাত্রপক্ষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়া বিট্টি ইলেকট্রিসিটি ডিপার্টমেন্টে একটা ছোটোখাটো চাকরি করে। প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েক জায়গায় মনে হলেও, এ গল্প একেবারেই লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে চিৎকার নয়।

এ গল্প বরং কোণঠাসাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তার একদিকে অদম্য বিট্টি, আর একদিকে প্রিন্টিং প্রেস চালানো বন্ধু চিরাগ দুবে (আয়ুষ্মান)।

চিরাগের প্রেস থেকে ছাপানো বই পড়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিল বিট্টি। জানতে পেরেছিল, এমন কেউও আছে, যে তাকে তার মতো করে পছন্দ করে। এখানেই প্রথম জয় বিট্টির। শুরু হয় লেখক প্রীতম বিদ্রোহীর (রাজকুমার়) খোঁজ। আর সেই সূত্রেই যোগাযোগ বইয়ের প্রকাশক চিরাগের সঙ্গে। প্রীতমকে খোঁজার ফাঁকে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে সে। কোথাও একটা তৈরি হয় ভালবাসার জায়গাও। এ দিকে, প্রেমে একবার হেরেছে চিরাগ।
আর নয়। এ বারে বাজিমাত করতে সে সাজাতে থাকে নতুন গুটি।

ছবিতে বিট্টির ভূমিকায় কৃতী শ্যানন যথাযথ। আয়ুষ্মান খুরানার অভিনয় প্রথম দিকে ভাল লাগলে, আবেগের দৃশ্যে বেশ দুর্বল ঠেকেছে। তবে ছবির ইউএসপি অবশ্যই রাজকুমার রাও। ক্লাসের সবচেয়ে বোকাসোকা ছেলেটি থেকে তথাকথিত ‘টপৌরি’ হয়ে ওঠার যাতায়াতে প্রথম থেকেই তিনি দশে চোদ্দো। বেশ কয়েক বার তো ভুলই হয়ে যাচ্ছিল, থিয়েটার দেখছি না তো! ভাল লেগেছে পঙ্কজ ত্রিপাঠী ও সীমা পাহওয়াকেও। মন কেড়েছে নীতিশ তিওয়ারি ও শ্রেয়স জৈনের সংলাপ। উপরি পাওনা সূত্রধরের ভূমিকায় জাভেদ আখতারের কণ্ঠ।

‘সাজন’ ছবিতে এমন গল্পের ইঙ্গিত থাকলেও, এ ছবি ত্রিকোণ প্রেমের গল্প নয়। প্রীতমকে খুঁজে পেতে বিট্টি সেতু করে চিরাগকে। আর প্রীতমকে খুঁজে এনে চিরাগ চেয়েছিল বিট্টির জীবনে নিজের একখানা পার্মানেন্ট চেয়ার। তার জন্য কম কাঠখড় পোড়ায়নি সে। আর প্রীতম কী চেয়েছিল?

সেটাই গল্প। তথাকথিত আনস্মার্ট ছেলের খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার গল্প। কিন্তু হ্যাপি এন্ডিংয়ের লোভে বরফিতে ক্ষীরের বদলে যেন চিনিই বেশি ঢেলে ফেলেছেন অশ্বিনী। একটা মাত্রায় গিয়ে বড্ড বেশি প্রত্যাশিত হয়ে গেল ছবিখানা। অন্ধকারে আয়ুষ্মানের চিঠি পড়ার দৃশ্যে মনে পড়ে গেল ‘কাল হো না হো’ ছবির শাহরুখকে। কিন্তু আয়ুষ্মানের সেই মারকাটারি ক্যারিশমা নেই। তাই গোটা দৃশ্যখানাই হয়ে উঠল বড্ড জোলো।

সতীত্ব কিংবা বিবাহবিচ্ছেদের মতো ঘটনা যে আজকের সমাজে একসঙ্গে থাকতে চাওয়া দু’জন মানুষের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, পরিচালক সেই বার্তাও ছোট্ট করে ছুঁয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ছবির শেষটাও যদি প্রেমের না হয়ে প্রথা ভাঙাই হতো, তা হলে বোধহয় মন্দ হতো না। ‘নীল বাট্টে সান্নাটা’-র পর এই ছবি ততটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল না। তা বলে ফেলনাও নয়। ফুরফুরে মেজাজে হাসতে চাইলে চেখে আসা যেতেই পারে অশ্বিনীর ‘বরেলী কী বরফি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE