Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Tapas Paul

‘শিল্পীদের রাজনীতি করা উচিত নয়’, মনে করছেন টলিউডের একাংশ

“শিল্পীদের বোধহয় রাজনীতি করা উচিত নয়। সকাল থেকেই এই কথাটা মাথায় ঘুরছে। তাপস পালের মতো একজন প্রতিভাবান শিল্পীর শেষটা কি এ রকম হওয়া উচিত ছিল?”

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:০০
Share: Save:

সকাল থেকেই মন ভাল নেই টলিপাড়ার। টলিউড হারিয়েছে তার অন্যতম প্রিয় অভিনেতা তাপস পালকে। প্রথমটায় চমকে গিয়েছিলেন অনেকে। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সন্ধ্যা রায়-রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়রা।শতাব্দী রায় ফোন তোলেননি। জানা গিয়েছে, শোকে নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। অনবরত কেঁদে চলেছেন।সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে নতুন প্রজন্মের অঙ্কুশ, সবার মুখে একটাই কথা—কেন এত কম বয়সে হারিয়ে গেলেন? বিষাদমাখা গলায় সৌমিত্র বললেন, “একে একে সবাই চলে যাচ্ছে।”

এক সময় রটনা ছিল, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রসেনজিৎ আর তাপসের নাকি জোর রেষারেষি।বাস্তবে যে এমনটা নয়, তা অনেক আগেই খোলসা করে বলেছিলেন প্রসেনজিৎ। তাপসের হঠাৎ চলে যাওয়া বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁরও। বললেন,“কাজের ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও অনেক বড় মাপের শিল্পী ছিল। কাছের বন্ধুকে হারালাম।”

গলা বুজে এল শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের। বললেন, “কোন ছোটবেলা থেকে ওঁকে দেখছি।কাজের প্রতি কী অসম্ভব ডেডিকেশন। দুটো ছবিতে অভিনয় করেছি ওঁর সঙ্গে। একটি ছবিতে আমার বাবা হয়েছিলেন এবং আর একটিতে দাদা। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।”

২০১৩-তে ‘খিলাড়ি’ ছবিতে তাপসের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন অভিনেতা অঙ্কুশ। ইমোশনাল তিনিও। বললেন, “মনে আছে ‘খিলাড়ি’ ছবিতে তাপসদার ক্লাইম্যাক্সে একটা ফাইট সিকোয়েন্স ছিল। উফ সে কী এনার্জি, বডি ফিটনেস। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ওই বয়সেও এত ভালবাসা, সে দিনই বুঝেছিলাম প্রথম।” আপন খেয়ালে থাকা মানুষটা যে এত মজাও করতে পারতেন, ‘খিলাড়ি’র সেটেই প্রথম বুঝেছিলেন অঙ্কুশ।

আরও পড়ুন-আমাদের কাছে তাপস আঙ্কল মানেই, একটার পর একটা ব্লকবাস্টার ছবি: সোহম

শ্রীলেখা মিত্রের গলায় অন্য সুর। কিছুটা কি অভিমানী তিনি? তাঁর কথায়,“শিল্পীদের বোধহয় রাজনীতি করা উচিত নয়। সকাল থেকেই এই কথাটা মাথায় ঘুরছে। তাপস পালের মতো একজন প্রতিভাবান শিল্পীর শেষটা কি এ রকম হওয়া উচিত ছিল?”

পরিচালক দেবাদিত্য-র গলাতেও যেন শ্রীলেখারই সুর। বললেন, “যাঁরা ওঁকে ভালবাসতেন, তাঁদের কাছে ওঁর চলে যাওয়াটা ক্ষোভ হয়ে জমে থাকবে। ওঁর নিজেরও কিছু ক্যাজুয়ালিটি ছিল। বুম্বাদার মধ্যে নিজেকে মেনটেন করার যে ব্যাপারটা ছিল তা তাপসদার মধ্যে ছিল না। এর মধ্যে যুক্ত হয় রাজনীতি। যে ভাবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, সে ভাবে ধরে রাখতে পারলেন কি?” দেবাদিত্যের ছবি ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাপস পাল।

পরিচালক বলছিলেন, “অনেক বছর আগের কথা। ‘আটটা আট ...’ সবে মুক্তি পেয়েছে। মুম্বই গিয়েছিলাম কর্মসূত্রে। মাধুরীর সঙ্গে দেখা হয়। ওঁকে আমার ছবির একটা ডিভিডি উপহার দিই। তিনি কভার ছবি দেখেই বলেন, ‘আরে, ইয়ে তো তাপস হ্যায়। মেরি পহেলি ফিল্ম কি হিরো। ক্যয়সা হ্যয় ও? কল লাগাও উসকো।’ ফোন করি তাপসদাকে। কথা হয় ওদের। এর পর ওই দিন আমায় প্রায় ৫/৬ বার ফোন করে তাপসদা জিজ্ঞাসা করতে থাকেন,‘এই মাধুরী আমার নামে কী বলল রে?’ এতটাই ছেলেমানুষ ছিলেন উনি।

বসন্তে আর দোল খেলা হবে না কেদারের। ৬১ বছরেই থমকে গেলেন ‘সাহেব’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE