Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

প্রচারের অভাবে দিল্লিতে মার খাচ্ছে বাংলা সিনেমা

না, এটা কোনও ফুটবল মাঠের স্কোর নয়। রাজধানীতে প্রদর্শিত তামিল, তেলুগু, পঞ্জাবি ছবির সঙ্গে বাংলা সিনেমার লড়াইয়ের করুণ এক স্কোরবোর্ড। যেখানে দক্ষিণের সিনেমা বা পঞ্জাবি ভাষার সিনেমা প্রত্যেক সপ্তাহেই তিন থেকে চারটি করে আসে, সেখানে শিবরাত্রির সলতের মতো টিমটিম করে বাংলা সিনেমা। আসে কয়েক মাস পর এক-আধটি।

অপরাজিতা মৈত্র
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ২০:০৮
Share: Save:

স্কোর কখনও ৪-১, কখনও ৬-২ বা নিট ৫-০!

না, এটা কোনও ফুটবল মাঠের স্কোর নয়। রাজধানীতে প্রদর্শিত তামিল, তেলুগু, পঞ্জাবি ছবির সঙ্গে বাংলা সিনেমার লড়াইয়ের করুণ এক স্কোরবোর্ড। যেখানে দক্ষিণের সিনেমা বা পঞ্জাবি ভাষার সিনেমা প্রত্যেক সপ্তাহেই তিন থেকে চারটি করে আসে, সেখানে শিবরাত্রির সলতের মতো টিমটিম করে বাংলা সিনেমা। আসে কয়েক মাস পর এক-আধটি। অনেক সময় এসে সপ্তাহ শেষ হতে না হতে চলেও যায় হল থেকে। দর্শকের অভাবে শো বন্ধ— এমন ঘটনাও ঘটে আকছার।

কিন্তু বাংলা সিনেমার দিল্লিতে না আসার পেছনে কারণ কী? দিল্লির বাঙালি কি হল-বিমুখ? না পর্যাপ্ত ডিস্ট্রিবিউশনের অভাব?

বাংলা সিনেমা দিল্লির হলে সে ভাবে মুক্তি না পাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আগে থেকেই ভাবি যে বাইরে সে ভাবে বাংলা সিনেমা চলবে না। সে অর্থে বাংলা সিনেমার প্রমোশনও হয় না। মানসিকতার পরিবর্তনটা সবার আগে জরুরি।”

অথচ সেখানে রাজধানী ছয়লাপ দক্ষিণী সিনেমায়। টলিউডের এই পোড় খাওয়া নায়কের কথায়, ‘‘তামিল, তেলুগু ভাষার সিনেমা সর্বভারতীয় স্তরে এক সঙ্গে রিলিজ করে, তার একটা বড় কারণ এই যে, এই ভাষাভাষী মানুষেরা নিজের ভাষার সিনেমা হলে এলে তা দেখতে যান। হ্যাঁ, দিল্লির প্রবাসী দক্ষিণীরাও। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাংলা সিনেমা দেখতে যে বেশির ভাগ প্রবাসী বাঙালি হলে যান, তা কিন্তু নয়। আর রিলিজের রিটার্ন সে ভবে না এলে স্বাভাবিক ভাবেই ডিস্ট্রিবিউটররা বাংলা সিনেমা হলে বেশি দিন রাখতে পারেন না”। তবে সে ভাবে বাংলা সিনেমার প্রচার চললে যে দিল্লিতেও বাংলা সিনেমা হলে গিয়ে লোকে দেখবেন— সেই আশা করছেন প্রসেনজিৎ।

একই কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কথায়। বললেন, “দিল্লিতে অনেক বাঙালি থাকলেও তাদের মধ্যে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার লোক কম। মাল্টিপ্লেক্স সমীকরণে টাকা রিটার্ন না এলে বেশি দিন সিনেমা হলে রাখা মুশকিল। দিল্লির তুলনায় বেঙ্গালুরুতে হলে বাংলা সিনেমা বেশি চলে, তিন-চার সপ্তাহ থাকেও। সেখানকার বাঙালিরা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন বলেই হলে বাংলা সিনেমা বেশি দিন থাকে।”

প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই তামিল, তেলেগু সিনেমা দিল্লির হলগুলিতে সারা দেশে একসঙ্গে রিলিজ হয়, সেখানে বাংলা সিনেমা কলকাতার সঙ্গে দিল্লিতেও একই সঙ্গে সব সময় রিলিজ হয় না। বাংলা সিনেমা দিল্লিতে সে ভাবে না আসার জন্য কি সিনেমার প্রমোশন না হওয়াও একটা কারণ? অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কথায়: “বাংলা সিনেমা কলকাতার বাইরে সে ভাবে প্রচার হয় না। তামিল বা তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির থেকেও বড়, ওরা যে ভাবে প্রচার করে বা যত ডিস্ট্রিবিউটর পায়, বাংলা সিনেমার পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। ওরা গোটা দেশে একসঙ্গে সিনেমা রিলিজ করতে পারে। সেখানে বাংলা সিনেমা বাইরে রিলিজের ক্ষেত্রে ইকনমিক ফ্যাক্টর কারণ হতে পারে।”

কিন্তু বাংলা সিনেমার পরিবেশনা ভাল ভাবে হলে দিল্লির বাঙালি যে হলে সিনেমা দেখতে যাবে তার প্রমাণ সম্প্রতি গৌতম ঘোষ পরিচালিত ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘শঙ্খচিল’ সিনেমাটি। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দিল্লিতে গ্রিনরুম থিয়েটার আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাংলা নাট্যোৎসবে ‘শঙ্খচিল’ সিনেমাটি দেখানো হয়। বাঙালি দর্শক নাট্যোৎসবে নাটকের সঙ্গে বাংলা সিনেমা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। প্রসেনজিৎ নিজেও এই আয়োজনে ও দর্শকদের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।

পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবের জন্যই যেন অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার সিনেমার কাছে হেরে যাচ্ছে বাংলা সিনেমা।

আরও খবর

অনেক দিন পর আবার চেনা মুখ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bengali cinema delhi boxoffice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE