Advertisement
E-Paper

সিরিয়াল আমাদের পেছনে টানছে, গুহাবাসী করে তুলছে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

ধারাবাহিক থেকে থিয়েটার পারফর্ম্যান্সের মানদণ্ড নিয়ে হতাশ তিনি। হইচই সিরিজের ব্যোমকশ। অরিন্দম শীলের নতুন ছবি। অঞ্জন দত্তর বিনয় বাদল দীনেশের ছবি নিয়ে ব্যস্ত তিনি। কথোপকথনে বিস্ফোরক অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৯
অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

ধারাবাহিক থেকে থিয়েটার পারফর্ম্যান্সের মানদণ্ড নিয়ে হতাশ তিনি। হইচই সিরিজের ব্যোমকশ। অরিন্দম শীলের নতুন ছবি। অঞ্জন দত্তর বিনয় বাদল দীনেশের ছবি নিয়ে ব্যস্ত তিনি। কথোপকথনে বিস্ফোরক অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

ইদানীং ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুখ আপনি...

আমার কোনও কিছু নিয়ে তাড়াহুড়ো ছিল না। সিনেমায় অভিনয় করার অদম্য ইচ্ছেও ছিল না। থিয়েটার নিয়ে হ্যাপি ছিলাম।

তা হলে বেশ অনেক দিন আগে এক বার মেদিনীপুরে ফিরে গিয়েছিলেন কেন?

ওহ্! সে তো টাকাপয়সা ছিল না বলে। থিয়েটার করে তো পয়সা হয় না। আর কোনও দিন হবেও না।

মেদিনীপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে কলকাতায় ফ্ল্যাট এটা কেমন করে হলো?

এটা তো সিনেমা আর ধারাবাহিকের জন্যই হয়েছে।

একটা কথা বলুন তো, ইন্ডাস্ট্রিতে বলা হয় থিয়েটার করে এসে সিনেমা কর। থিয়েটার কি সিনেমার জোগানদার?

এটা খুব ভুল কথা। আমাদের এখানে এখন যে থিয়েটার হয় সেখানে কতটা অভিনয় শেখা যায়? জানি না। আজ থেকে পনেরো বছর আগে আমি অবশ্য শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার মনে হয় না এখন থিয়েটারে কেউ কিছু শেখে। থিয়েটারে পারফর্ম্যান্সের মানদণ্ডও আজ আর ঠিক নেই।

আরও পড়ুন, মা হলেন একতা, বিয়েতে অনীহা জিতেন্দ্র কন্যার

একটু বুঝিয়ে বলুন না...

ধরুন দেবশংকর হালদার মঞ্চে অভিনয় করছে। এক দল মানুষ আছেন তাঁর অন্ধ প্রশংসা করছেন। আর এক দল আছেন অন্ধ নিন্দে করছেন। কিন্তু এক জন নতুন অভিনেতা, সে ততটা রপ্ত করে উঠতে পারেনি। কিন্তু তার সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট আছে। সে-ও অভিনয় করলে এক ভাবে এক দল প্রশংসা করছে, আর এক দল নিন্দে করছে। মুশকিল হল, দীর্ঘ দিনের চর্চা, যাকে আমরা স্কিল, অভিনেতার বোধ, ক্ষমতা, বিচারের মানদণ্ড— সমাজ থেকে অবসলিট হয়ে গেছে। মুড়ি-মিছরি মিশছে না শুধু, এক রকম দেখতে হয়ে গেছে। আর কোয়ালিটি বলে কিছু নেই।

ফেসবুক যে জায়গায় যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে শিক্ষিতজনেরা হাত বা গা নোংরা করতে চাইবে না। ফলে এটা নিম্ন বা মধ্যমেধার হাতেই পড়বে। আর মধ্যমেধার কোনও দায় কোনও দিন ছিল না যে কোয়ালিটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দায় শুধু নিজের অস্তিত্বটাকে বাঁচিয়ে রাখার। তবে সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে কিছু শিখে এলে তো ভালই হয়। এখানে তো সে রকম প্রতিষ্ঠান নেই। তাই গরিবের ছেলে থিয়েটারকে সবাই আঁকড়ায়। আসলে আমাদের প্রদেশে খাদ্য উৎসবের মতো অভিনয়ের উৎসব চলছে। এখনও কেমন কে অভিনয় করছে এগুলো নিয়ে কথা হয়। কিন্তু আগামী দশ বছরে সেটাও থাকবে না। আমি আশাব্যঞ্জক কিছু দেখছি না।


‘মুড়ি-মিছরি মিশছে না শুধু, এক রকম দেখতে হয়ে গেছে। আর কোয়ালিটি বলে কিছু নেই’, মত অনির্বাণের।

একটু আপনার অভিনয় প্রসঙ্গে ফিরি। অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে ধারাবাহিক করতে হল কেন?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য তো অভিনেতা। তাই অভিনয়ের সমস্ত ফরম্যাটে আমি নিজেকে নিয়ে যেতে চাই। আমি একটি রেডিও চ্যানেলে শ্রুতিনাটক করতে চেয়েছিলাম। করছিও। আমার খুব ইচ্ছে ছিল যাত্রা করার। সিনেমার জন্য পারছি না। আমার ইচ্ছে আছে ফোক থিয়েটর আলকাপ, গম্ভীরা এগুলো পারফর্ম করা। হয়ে উঠছে না। সেই জায়গা থেকে টেলিভিশন। টেলিভিশন হচ্ছে থিয়েটরের মতো অ্যাক্টরস্ মিডিয়াম। পরিচালক নিশ্চয়ই আছেন।

ধারাবাহিক দেখে এখনও লোকে নাক সিঁটকোয় কেন?

আমাদের এখানে না অন্তর্কলহ আছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিতদা বা আরও অনেকে বাংলা ছবিতে ‘আধুনিকতা’ আনতে চাইছেন। ফর্মে। চিন্তায়। লেসবিয়ানিজম, হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে ছবি হচ্ছে। আর ঠিক এক সময়ে ধারাবাহিক আমাদের পেছনে টানছে। গুহাবাসী করে তুলছে। আদিম সব বিষয়। ধর্ম। কেউ কাউকে ভালবাসে না। ভালবাসে যারা পুজো করে। যে ভাবে কোনও মানুষ কথা বলে না সে রকম সংলাপ। অদ্ভুত ঈর্ষা। ছড়ানো হচ্ছে।

থিয়েটার, সিনেমা, ধারাবাহিক। কাকে এগিয়ে রাখবেন আপনি?

অবশ্যই থিয়েটার। থিয়েটারের হাত-পা খোলা। স্বাধীনতা পরবর্তী থিয়েটারে বিষয়গত জায়গা নিয়ে, অন্তত রাজনৈতিক থিয়েটারে যা যা চর্চা হয়েছে সিনেমা তার কাছে নেই। থিয়েটার টাকার কাছে দায়বদ্ধ নয়, তাই পারে। সিনেমাকে টাকা তুলে দিতে হবে। আর টেলিভিশনে যার কাছে টাকা আছে সে মনে করেছে তার বিরাট বুদ্ধি। সে মনে করছে, সে জানে কে কী দেখতে চাইছে। নিজের পকেট যাতে বেশি ভরে সেই প্যারামিটারে সে মানুষের দাবি তৈরি করেছে! মানুষ চাইছে এটা।

আরও পড়ুন, পিছনে অমিতাভের পোস্টার! চমকে, লাফিয়ে সরে গেলেন রেখা!

রিসার্চ বা টিআরপি-র গুরুত্ব নেই বলছেন?

না, নেই। টেলিভিশন এমন ফরম্যাট সে যা দেখাবে আপনাকে দেখতে হবে। পালাতে তো পারবেন না। যদি এ রকম হত, প্রত্যেকটা সিরিয়াল প্রগ্রেসিভ কনটেন্ট দেখাতো, মানুষ সেটাই দেখতো। দর্শক কি বলেছিল, ক্রিকেটের মাঠে এক কোণায় তিনটে মেয়েকে দাঁড় করিয়ে দাও তাদের নাচ দেখব? এটা ওখানকার আয়োজকেরা ঠিক করেন। দর্শক ভাল বলতে পারে বা খারাপ।

আপনার কী মনে হয়? ‘গানের ও পারে’ চলল না কেন?

ধরুন আঠারোটা সিরিয়াল। আঠারোটাই যদি ‘গানের ও পারে’র কনটেন্ট রিচ করে তা হলে সেটাই মানুষ দেখবে।

একজোট হওয়ার জায়গাটাই কি নেই?

না না, যত দিন আরও আরও বড়লোক হওয়ার লোভ আছে তত দিন পর্যন্ত কিছুই হবে না। কথায় কথায় ব্রিটিশ টেলিভিশনের কথা বলা হয়। ওদের দেশ আমাদের দেশের মতো ফিনান্সিয়ালি স্টার্ভড নয়। আমাদের দেশে অনেক নেতা-নেত্রী চোর। গরিব মানুষকে ঠেঙিয়ে লোকে বড়লোক। আমাদের দেশে মেট্রোতে এক জন আর এক জনকে না ঠেললে জায়গা পাবে না। এ রকম দেশে টেলিভিশনে লোকনাথ, কালী হবে।

আরও পড়ুন, রণবীরের কাছাকাছি থাকতে জুহুতে নতুন ফ্ল্যাট আলিয়ার, দাম শুনলে চোখ উঠবে কপালে

এত পরিষ্কার ভাবনা। গুছিয়ে কথা বলেন। সিনেমার পরিচালনা আর চিত্রনাট্য কবে হবে?

আমি থিয়েটারের ফর্মে আকৃষ্ট। সিনেমা পরিচালনা করব না। অনেক দিন থিয়েটার করতে পারছি না। কাজের ব্যস্ততা। দুটো নাটকের কাজ করতে গিয়েও হল না। নতুন কিছু পাইনি। আসলে সারাজীবনে পাঁচশো কাজ করলে পাঁচটা থাকবে। ভাবুন অবস্থাটা।

এ পর্যন্ত আপনার ভাললাগা চরিত্র...

ধনঞ্জয়। অন্য লোক হতে হয়েছিল আমাকে। আমার সবটা দিয়েছিলাম। সত্যি, সিনেমার কেরিয়ারে কোনও চরিত্র রিপিট হয়নি। এটা ভাল লাগে।


‘ধনঞ্জয়’-এর লুকে অনির্বাণ।

অভিনেতা থেকে নায়ক হয়ে উঠছেন আপনি...

নায়ক না হওয়াই ভাল। নায়কের অনেক সমস্যা। নায়ক লিমিটেড ডেজিগনেশন। অভিনেতা ভাস্ট। তবে ক্যামেরার সামনে থেকে সরে গেলে সে ‘নো ওয়ান’। তার দল নেই। সংগঠন নেই। অন্য লোকের লেখা লাইন আর চরিত্রের উপর, ইন্ডাস্ট্রির উপর সে নির্ভর করে। সেই ইন্ডাস্ট্রি যদি আমায় অভিনেতা নায়ক করে, হবে তা হলে।

‘ফাইনালি ভালবাসা’ ফাইনালি কেন?

ইনসমনিয়া, আর্থারাইটিস, এইচআইভি পজিটিভ থেকে ভালবাসায় পৌঁছয়। তিনটে আলাদা গল্প কোথাও মিশে যায়। ইনা রিতুর গল্প যেমন চলতে চলতে কোথাও যুক্ত হয়। অসুখ অন্ধকার হলে ভালবাসার আলো এসে পড়ে চরিত্রের ওপর। একটা কোল্ড লাভ স্টোরি। আমি আর সুপ্রভাতদা একটা গল্পে। আর একটায় অরিন্দম শীল, রাইমা সেন আর অর্জুন চক্রবর্তী, সৌরভ দাস। আর একটায় সৌরসেনী আর অঞ্জন দত্ত। আমার চরিত্র এইচআইভি পজিটিভ। মৃত্যুর অপেক্ষায়। সুপ্রভাতদা পুরুষ নার্স। অসুখ থেকে ভালবাসায় পৌঁছনোর এই স্ট্রাকচার অঞ্জন দত্তর ছবিতে আগে এ ভাবে আসেনি।

এই অভিনেতা-নায়ক কি সোহিনী সরকারের সঙ্গে ‘ফাইনালি ভালবাসা’য়?

সোহিনীর সঙ্গে আমার প্রেম নেই। আমি চটপট প্রেমে পড়ে যাই, এটাও ভুল। কলেজে ও রকম হত। এখন চট করে ও সব হয় না। আমি না মা-ঘেঁষা। মহিলাদের সঙ্গে তাই সহজে মিশি। আমি কায়দা করতে পারি না। সেটা কারওর ভাল লাগে হয়তো। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে বিউটি, স্মার্টনেস সব কিছুই নির্ভর করে তার সততার উপর। আমি এটাই মনে করি। যত বেশি মুখোশ তত বেশি কুৎসিত। সে মুখোশ যত সুন্দর হোক না কেন! আর অভিনেতাদের জীবন এক রকম হয় না। আজ চাহিদা আছে। এক দিন ঠিক বাজার পড়বে। লোকে বলবে, উফ, সব দিকে সেই এক মুখ! নতুন অভিনেতা আসবে। আমার জীবন নাটকের নেমেসিস-এর মতোই...

(সেলেব্রিটি ইন্টারভিউ, সেলেব্রিটিদের লাভস্টোরি, তারকাদের বিয়ে, তারকাদের জন্মদিন থেকে স্টার কিডসদের খবর - সমস্ত সেলেব্রিটি গসিপ পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদন বিভাগে।)

Anirban Bhattacharya Tollywood Celebrities Celebrity Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy