অনেক নায়িকা নিয়ে ছবি করলেই কি বাংলা ছবি হিট হবে বলে ভাবছেন আজকের পরিচালকেরা?
পাওলি: এখন বাংলা ছবির ফ্রেমটা কিন্তু অনেক বদলে গেছে। শুধুমাত্র নায়ক বা নায়িকার ওপর নির্ভর করে আর ছবি চলে না।
তনুশ্রী: এখন টিমওয়ার্কেই সিনেমা ক্লিক করে। যে কারণে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ এত হিট।
তাই যদি হয় তাহলে ‘লড়াই’ বা ‘হিরোগিরি’ চলল না কেন? সেখানে তো রীতিমতো স্টার কাস্টিং!
(গার্গী বলার আগেই পাওলি বেশ উত্তেজিত ভাবেই বললেন)
পাওলি: সিনেমা কিন্তু একটা প্রপার্টির মতো। আমি ভাল ছবির কথা বলছি। এক্ষুনি বাজারে ব্যবসা করল না বলেই সেটা বাজে ছবি এমন বলা যায় না। ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমল গান্ধার’ প্রথমেই হিট ছিল নাকি?
গার্গী: দেখুন, নতুন প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন। ছবির ডিটেলিং সামান্য আলগা হলেই সেটা আর কেউই ধৈর্য নিয়ে দেখে না। ‘লড়াই’য়ের ক্ষেত্রে তেমনই হয়েছে।
তনুশ্রী: আমার কিন্তু ‘হিরোগিরি’ ভাল লেগেছে।
এটা কি দেবকে খুশি করার জন্য বলছেন?
তনুশ্রী: তা কেন? গার্গীদি যে ডিটেলিং-এর এর কথা বলছিল ‘বুনো হাঁস’ করার সময় দেবের মধ্যে সেই ডিটেলিংটা আমি দেখেছিলাম। তখন অনেক কিছু শিখেওছি ওর থেকে। আসলে ভাল লাগাটাও এক এক জনের কাছে এক এক রকম, তাই না?
ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়ক তাহলে এখন কে?
পাওলি: নায়ক-নায়িকাকে এ ভাবে আলাদা করে দেখা কিন্তু বড্ড সেকেলে ব্যাপার! আমরা আজও কেন অভিনেতা হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারি না?
(তনুশ্রী আর গার্গী লাফিয়ে উঠে)
তনুশ্রী: সত্যি তাই! এই ভাগাভাগির মধ্যে বড্ড বেশি জেন্ডার বায়াসনেস আছে।
মোট কথা এক নম্বর কে, এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সবাইকে দিতেই হবে। এড়িয়ে গেলে চলবে না।
পাওলি: আমার মতে বাংলা ছবিতে এক নম্বর নায়ক হল ছবির কনসেপ্ট! তনুশ্রী: আমিও একমত।
নায়িকারা কি আজকাল সহমত প্রকাশ করার জন্য আড্ডা দেন? ইন্ডাস্ট্রিতে বলার মতো নায়ক নেই নাকি?
তনুশ্রী: (চোখ বড় করে) আরে তা কেন? জিৎ, বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), দেব, এঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ করে যে যাঁর মতো একটা শক্ত ভিত তৈরি করেছেন।
আচ্ছা মৈনাক ভৌমিকের এই ছবিতে তো অনেক নায়িকা একসঙ্গে কাজ করছেন। শ্যুটে যদি মেক আপ রুম ভাগাভাগি করে নিতে হয়?
তনুশ্রী: টলি ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের অনেক কষ্ট করে কাজ করতে হয়।আমরা বলি যে আমাদের যেন আলাদা মেক আপ রুম থাকে। কিন্তু এটাও জানি ছবিতে চরিত্র বেশি হলে রুম শেয়ার করতে হবে। এখানেই তো মেক আপ রুম শেয়ার করছি আমরা।
গার্গী: আগে নায়িকারা মেক আপ রুম শেয়ার করতেন না। এখন কাজটা হওয়াই আসল কথা।
এটাও মেনে নিতে হবে যে এখন নায়িকারা কেউ কাউকে হিংসে করেন না?
গার্গী: প্রতিযোগিতা তো থাকবেই।
বড্ড ক্লিশে কথা এটা!
পাওলি: আরে জীবনটাও অনেক ছোট হয়ে আসছে। নায়িকা মানেই যে তারা একে অপরকে হিংসে করবে এটা খুব বাজে কথা। (বেশ রেগে)
গার্গী: পাওলিকে ফ্লোরে মেরে বেরিয়ে যাব… এই ভাবলে ছবিটা মার খাবে।
তনুশ্রী: বরং আমার কো-স্টার যদি শক্তিশালী হয় ছবিটারই লাভ, আর দিন শেষে লাভ আমার অভিনয়েরও।
পাওলি: কো-স্টার শব্দটায় আপত্তি আছে আমার। কো-অ্যাক্টর
বলাই ভাল।
এ বারও পাওলি কিন্তু আপত্তি জানিয়েছেন! (সকলের হাসি) মৈনাক ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’-এ কিন্তু এমনি এমনি ওঁকে ‘অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর’-এর রোলটা দেননি! কো-অ্যাক্টর হিসেবে কাকে পছন্দ?
তনুশ্রী: দেব, পরম (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), রুদ্রনীল।
গার্গী: ‘বিটনুন’-এ ঋত্বিকের সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে। আর বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা তো একটা অভিজ্ঞতা।
পাওলি: ঋত্বিক দারুণ অভিনেতা। বুম্বাদা, পরম, যিশু (সেনগুপ্ত), আবির (চট্টোপাধ্যায়)। কাকে ছেড়ে কার কথা বলি?
বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ কিন্তু এখন গোয়েন্দাদের হাতে। নায়িকারা কী করবে তা হলে?
পাওলি: আমার মনে হয় ‘চার্লিস এঞ্জেলস্’ করি।
গার্গী: কেন, মিস মার্পেল! গোয়েন্দা মানেই পুরুষ নাকি?
নায়িকারা গোয়েন্দা হলে সেখানে সেক্স অ্যাপিল কতটা জরুরি?
(গার্গী প্রশ্নটা প্রায় লুফে নিলেন)
গার্গী: নায়িকা বা নায়ক যেই হোক না কেন আমি মনে করি সেক্স অ্যাপিল অসম্ভব জরুরি। সেক্স অ্যাপিল মানুষের ক্ষেত্রে গ্লামার অ্যাড করে বলে আমার মনে হয়।
মানে ভাল চরিত্রের জন্য চুমুও খাওয়া যেতে পারে?
তনুশ্রী: এই বিষয়টা তো হট কেকের মতো। চিত্রনাট্য আর পরিচালক যদি ভাল হয়, তা হলে আমি ছবিতে বাসনও মাজতে পারি, আবার চুমুও খেতে পারি।
চুমুর বিষয়ে পাওলি এত চুপ কেন?
পাওলি: (মাটির দিকে তাকিয়ে) ছবির জন্য খোলামেলা দৃশ্য যা করার আমি তো অনেক আগেই করেছি। নতুন করে আর কী বলব?
সদ্য দীপিকা পাড়ুকোন বলেছেন তাঁর ক্লিভেজ নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলা যাবে না। নায়িকা হিসেবে কী মনে হয়?
পাওলি: শারীরিক গঠন অনুযায়ী মেয়েদের ক্লিভেজ তো থাকবেই। সেটা নিয়ে কেউ যদি ‘ফ্লন্ট’ করতে চায় করবে। আলাদা করে ক্লিভেজ নিয়ে মন্তব্য কুরুচিকর।
তনুশ্রী: ক্লিভেজের মধ্যে তো এক ধরনের সৌন্দর্য আছে। সেটা নিয়ে রুচিহীন মন্তব্য যারা করে তারা
মানুষ নয়।
গার্গী: দীপিকা বলেছিলেন তাঁর ক্লিভেজ আছে, তিনি দেখিয়েছেন। আমি তো বলব বেশ করেছেন!
আড্ডায় যোগ দিলেন পায়েল সরকার। বাকি তিনজন বলে উঠলেন ‘সার্কাসের নায়িকা এসে গেছে!’
মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’-এ আপনার চরিত্রটা কী?
পায়েল: আমি এখানে গার্গীদির মতোই নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছি। তনুশ্রী যেমন স্টাইলিস্ট। আসলে আমি নিজে যা, ছবিতেও
তাই করছি।
পাওলি: আরে আরে কী বলছিস? তুই যা, তাই করছিস বললে ছবিটা দেখার পর একটা মারও তোর বাইরে
পড়বে না!
পছন্দের সেক্সি সাজ
পাওলি
তনুশ্রী
গার্গী
পায়েল
পোড়া লাল রঙের মলমলের শাড়ি। রেখার মতো কনুই পর্যন্ত হাতাওয়ালা ডিপ কাট চোলি ব্লাউজ। লাল পরলে ভালবাসা গাঢ় হয়
হলুদ শাড়ি। ডিপ কাট হলুদ ব্লাউজ। আলগা ঘাড় -খোঁপা। ছোট্ট দুল
কেন? এই ছবিতে কী এমন আছে?
তনুশ্রী: এই ছবির জন্য আমাদের প্রত্যেকের মার খাওয়ার সম্ভাবনা আছে! মৈনাক খুব মজা করেই কঠিন কথাগুলো বলে ফেলেছে।
পাওলি: আমি তো ভেবেছিলাম মৈনাক ‘বেডরুম’-এর পরে এ বার ‘বাথরুম’ বানাবে। (সকলের হাসি) তবে এই প্রথম দেখলাম আমায় একটা মানুষের মতো চরিত্র দিয়েছে।
কোথাও মনে হচ্ছে না পাওলির চরিত্রটা পেলে ভাল হত?
গার্গী: নাহ্। এখানে একটা কথা বলি। আমি যে সময় নিজেকে সম্পূর্ণ বদলাচ্ছি তখন পাওলি কিন্তু নানা ভাবে আমায় উৎসাহ দিয়েছিল। কলকাতা ছেড়ে মুম্বই গিয়ে কাজ করার যে মানসিক প্রস্তুতি ওকে নিতে দেখেছি তার জন্য ওকে স্যালুট করি।
তনুশ্রী: গার্গীদি আর পাওলির মধ্যে অসম্ভব একটা পজিটিভ ভাইবস্ আছে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।
পাওলি: তনুশ্রী খুব মিষ্টি মেয়ে।
ওকে কেমন ফ্রেঞ্চ লেডিদের মতো দেখতে না?
গার্গী: আসলে ও খুব সংসারী!
তাহলে তনুশ্রীর বিয়েটা কবে?
তনুশ্রী: নাহ! বিয়ে এখন…
গার্গী: (লাফিয়ে উঠে) তোর তো ইচ্ছে আছে বিয়ে করার! এ কী! না কেন বলছিস?
তনুশ্রী: সমাজে থাকলে বিয়ে তো করতেই হবে।
পাওলি: বাবাঃ! বিয়ে আমার কাছে স্বপ্নের মতো!
পায়েল: নাহ্ স্বপ্ন নয়, তবে এখন চুটিয়ে অভিনয় করতে চাই। বিয়ের কথা পরে ভাবব।
গার্গী তো বিয়ে নিয়ে কিছু বলছে না, তবে শোনা যাচ্ছে গার্গীর নাকি জমজমাট প্রেম…
পাওলি: প্রেম ছাড়া আবার বাঁচা যায় নাকি? তবে একটা নয়, অগুনতি প্রেম!
গার্গী: অনেকগুলো ‘পেনলেস’ প্রেম!
তনুশ্রী: তবে ঠিক ক’টা বলা যাবে না!
(সকলের হাসি)
পায়েল: প্রেম হলে দারুণ হয়। অপেক্ষায় আছি...
শনিবার রাতে কীসের অপেক্ষায় থাকেন?
পাওলি: রাতভর পার্টি, বন্ধু আর ওয়াইন! আর কী চাই?
তনুশ্রী: নাহ্ ঠিক পার্টি মুড নয়। বিশেষ বন্ধু আড্ডা।
পায়েল: না বাবা। বন্ধুদের সঙ্গে রাতভর পার্টি চাই-ই চাই!
গার্গী: আর পাগলের মতো নাচ!!
(প্রচণ্ড হাসি)
আচ্ছা, কেউ রাজনীতির কথা ভাবছেন না?
পাওলি: হাজার হাজার মাইল দূরে। তবে প্রকাশ ঝা-র রাজনীতি হলে রাজি আছি। (হাসি)
তনুশ্রী: ধুর! আমি ও সবের তো কিছুই বুঝি না!
গার্গী: আগামী দশ বছর ছবি করব। রাজনীতি না।
পায়েল: রাজনীতি নিয়ে কোনও
প্ল্যান নেই।
পাওলি: কিন্তু তনুশ্রী, আমার একটা নালিশ আছে। সকলে বলে তুই দারুণ রান্না করিস অথচ আমায় খাওয়াসনি!
তনুশ্রী: আরে খাওয়াব। এই তো সার্কাসে এখন সংসার পেতেছি! বিরিয়ানি রেঁধে আনি?
পাওলি: তা হলে রেজালা করব আমি।
গার্গী: আমি কিন্তু দারুণ ডিম বেগুন বানাই।
পায়েল: তা হলে ওয়াইন আর পার্টিটা আমার দায়িত্ব!
পাওলি: শ্যুটেই রান্না করব। এর পর তো মুম্বই চলে যেতে হবে আমায়।
তনুশ্রী: ধুর! প্ল্যানই হবে কেবল…
ছবির প্রযোজক, স্টাইলিস্ট, অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর ইতিমধ্যেই ফ্লোরে যাওয়ার জন্য দরজায় বহু বার টোকা দিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আড্ডা, পার্টি-প্ল্যানিং থেকে জিমে চলে গেছে। গার্গী জেনে নিচ্ছেন কোন কোন কার্ডিও এক্সারসাইজ করলে কোমর আরও একটু সরু হবে…
আসলে কী হচ্ছে? চলচ্চিত্র সার্কাস, না কি সার্কাসে চলচ্চিত্র?
ফোটোশ্যুটের আরও ছবি দেখতে হলে অ্যাপল স্টোর
অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে ABP AR APP-টি ডাউনলোড করে এই ছবিটা স্ক্যান করুন
ছবি: কৌশিক সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy