Advertisement
E-Paper

রাজত্ব বিনাশ

এমনটাই মনে করছে টলিউড। এই অবস্থায় রাজ চক্রবর্তী-কে উদ্ধার করতে পারে আগামী মাসের ‘যোদ্ধা’। তিনি নিজে কী ভাবছেন? মুম্বইতে বসে মনের কথা বললেন ইন্দ্রনীল রায়-কে।বাইরে মেঘলা। মুম্বইয়ের হোটেলে তখন সবে ব্রেকফাস্ট অর্ডার করেছেন। স্ক্র্যাম্বলড্ এগস, টোস্ট এবং ফ্রেশ অরেঞ্জ জ্যুস। ডিম নিয়ে বোধহয় বরাবরই একটু খুঁতখুঁতে তিনি। পনেরো বছর আগে টালিগঞ্জে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের বাড়িতে যখন থাকতেন চার জন স্ট্রাগলার মিলে, সপ্তাহে একদিন একটা ডিম চার ভাগ করে খেতেন তাঁরা। সেখান থেকে সত্যি অনেকটা পথ অতিক্রম করেছেন রাজ চক্রবর্তী।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০

বাইরে মেঘলা।

মুম্বইয়ের হোটেলে তখন সবে ব্রেকফাস্ট অর্ডার করেছেন। স্ক্র্যাম্বলড্ এগস, টোস্ট এবং ফ্রেশ অরেঞ্জ জ্যুস।

ডিম নিয়ে বোধহয় বরাবরই একটু খুঁতখুঁতে তিনি। পনেরো বছর আগে টালিগঞ্জে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের বাড়িতে যখন থাকতেন চার জন স্ট্রাগলার মিলে, সপ্তাহে একদিন একটা ডিম চার ভাগ করে খেতেন তাঁরা।

সেখান থেকে সত্যি অনেকটা পথ অতিক্রম করেছেন রাজ চক্রবর্তী।

আজ তিনি বাণিজ্যিক বাংলা ছবির তথাকথিত এক নম্বর পরিচালক। কিন্তু সেই সিংহাসন কি আর ঠিক এক মাস বাদে অক্ষত থাকবে?

টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির আনাচে-কানাচে এখন এই প্রশ্নটাই উঁকি মারছে।

একটি বড় অংশ মনে করছে, যে ভাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রাজ সেই ‘মোমেন্টাম’ আর ধরে রাখতে পারছেন না। তাদের ধারণা পরের মাসের ২৬ তারিখ মুক্তি পাওয়া ‘যোদ্ধা’ যদি বক্স অফিসে না চলে, তা হলে রাজ চক্রবর্তীর পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

কোথায় ভুল করেছেন ?

শুধুই কি বেশিমাত্রায় রিমেক ছবি করার জন্যই তাঁর এই হাল?

নাকি হঠাত্‌ কমার্শিয়াল ছবি ছেড়ে শহুরে দর্শককে টানার জন্য ‘মাল্টিপ্লেক্স ছবি’ (পড়ুন ‘লে ছক্কা’ বা ‘প্রলয়’) বানানোয় এই অবস্থা হল তাঁর?

অনেকের আবার ধারণা রাজনীতিতে এতটাই সময় ব্যয় করছেন যে, সিনেমা বানানোর দিকেই আর মন নেই রাজের।

পার্টির বদলে পার্টি-পলিটিক্স করলেই যত আজেবাজে কথা

“পলিটিক্স আমি করি না। আমি একজন নেত্রীকে ফলো করি, যাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে আমার নিজের মায়ের থেকেও বেশি অনেস্ট মনে হয়। সুতরাং রাজনীতিতে বেশি সময় দিচ্ছি বলে আমার ছবি করাতে মন নেই এই প্রচারটা মিথ্যে। আমরা যখন পার্টি করি, তখন তো মিডিয়া কিছু বলে না। সেই ছবি বরং বড় বড় করে ছাপে। পার্টির বদলে পার্টি পলিটিক্স করলেই যত আজেবাজে কথা। আর ‘যোদ্ধা’ যদি না চলে তা হলে সেটা পরিচালক হিসেবে আমার ব্যর্থতার জন্যই ঘটবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিংয়ে যাচ্ছি বলে নয়,” বিরক্তির সঙ্গেই বলে ওঠেন রাজ।

‘যোদ্ধা’র গানের শ্যুটিং সে দিন কারজাতে। তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আবার আড্ডায় ফেরেন রাজ।

রাজ রিমেক বানায়, তাই তার সাফল্য নিয়ে লেখা কম হয় বলে ওঠেন, “কে বলছে আমার শেষ তিনটে ছবি চলেনি? ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ১৫০ দিন চলেছিল। কিন্তু সরি, সেটা নিয়ে কেউ লেখেনি কারণ রাজ চক্রবর্তী তো রিমেক বানায়। ‘প্রলয়’ অনেকেরই ভাল লেগেছিল। কিন্তু দর্শক বোধহয় এটা মানতে পারেননি যে এটা রাজ চক্রবর্তীর ছবি, তাই সে রকম বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। আর ‘বরবাদ’ ফ্লপ হয়েছে এটা বলাটা একটু প্রিম্যাচিওর নয় কি? হ্যাঁ, সুপার ডুপার হয়তো হবে না ‘বরবাদ’। কিন্তু একটা স্টেডি কালেকশন রয়েছে। আর এক মাস পর যখন ‘যোদ্ধা’ সুপারহিট হবে, তখনই দেখবেন আপনারাই ‘ফাটিয়ে দিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী বা ‘দেব-রাজ’য়ের অসামান্য যুগলবন্দি’, বলে বড় আর্টিকেল লিখছেন,” একটানা বলে থামলেন রাজ।

অনেকেরই ধারণা মাঝখানে তাঁর সৃজিত মুখোপাধ্যায় হওয়ার প্রবল ইচ্ছে হয়েছিল। যার ফল, কমার্শিয়াল ঘরানা থেকে সরে গিয়ে সেমি-কমার্শিয়াল ঘরানাতে ঢোকা। তিনি কি স্বীকার করেন এই ভুলটা তিনি করেছিলেন?

“ভুল করিনি। সৃজিত হওয়ার কোনও ইচ্ছেই আমার হয়নি। আমি চাইছিলাম আমার অডিয়েন্স বেস-টা বাড়াতে। কমার্শিয়াল অডিয়েন্স তো আমাকে ভালবাসেই। চাইছিলাম শহুরে দর্শকও আমার ছবি দেখুক। এটা তো কোনও দোষ হতে পারে না,” সাফ বলেন রাজ।

নামীদামি বাড়ি-গাড়ি কিন্তু পলিটিক্স করে বানাইনি

প্রসঙ্গত ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে ‘গুছিয়ে নেওয়া’ পরিচালক তিনি। এই মুহূর্তে যত জন পরিচালক কাজ করছেন তাঁদের মধ্যে ‘ব্যাঙ্ক ব্যালান্স রেস’ হলে এক নম্বর স্থানে থাকবেন রাজ-ই।

এবং এখান থেকেই তাঁকে পরের প্রশ্ন । এই লাইফস্টাইল মেন্টেন করার জন্যই নাকি টিভি সিরিয়াল প্রোডিউস করেন তিনি। তাই সিনেমা বানানোটা আজ তাঁর সেকেন্ড প্রায়োরিটি। তাই কি?

প্রশ্নটা মন দিয়ে শোনেন রাজ। স্ক্র্যাম্বলড্ এগস-এর ওপর মরিচ ছড়িয়ে উত্তর দেন, “একটা জিনিস প্লিজ লিখবেন এই নামীদামি বাড়ি-গাড়ি কিন্তু পলিটিক্স করে রাজ চক্রবর্তী বানায়নি। বানিয়েছে প্রচুর পরিশ্রম করে। হ্যাঁ, স্বপ্ন ছিল আমার যে ভাল বাড়ি হবে, ভাল গাড়ি হবে। আমি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি। কিন্তু যদি কেউ মনে করেন সে কারণেই সিনেমা বানানো থেকে আমার মন সরে গিয়েছে, তা হলে বলি তাঁদের কথা শুনে আমার হাসি পায়,” বলে অরেঞ্জ জ্যুসে চুমুক দেন রাজ।

আমার কোনও অসুবিধে নেই দিদির সঙ্গে রেড রোডে হাঁটতে

কিন্তু অনেকেই যে মনে করেন কথায় কথায় দিদির সফরসঙ্গী হওয়া, মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়া, ১৫ অগস্ট রেড রোডে হাঁটা এ সব করতে গিয়ে তাঁর মনোযোগ চলে গিয়েছে সিনেমা বানানো থেকে?

“আমার মনোসংযোগ অত সহজে নষ্ট হয় না। আর আমার তো কোনও অসুবিধে নেই দিদির সঙ্গে মিটিংয়ে যেতে কী রেড রোডে হাঁটতে। উনি রাজ্যের জন্য এত কিছু করছেন। ওঁর জন্য এইটুকু তো আমি করবই। আর শুনে রাখুন, এতে তো রাজ্যের উন্নতিই হচ্ছে,” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেন রাজ।

রাজ্যের উন্নতি? মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ১৫ অগস্ট রাস্তায় হাঁটলে রাজ্যের উন্নতি কী ভাবে হয়?

“হয় তো। কী করতাম আমরা ১৫ অগস্ট সকালে? হয় ঘুমোতাম, না-হয় সকালে উঠে লুচি-তরকারি আর দুপুরে বিরিয়ানি খেতাম। এখানে তো ইন্ডাস্ট্রির আমরা সবাই একত্রিত হচ্ছি। আমাদের মানুষ চিনছে। আমাদের দেখাদেখি যদি আরও মানুষ ১৫ অগস্টের দিন রাস্তায় হাঁটে, তাতে দেশাত্মবোধক ভাবনা তো তৈরি হয় একটা। আমার কাছে সেটাই অনেক,” গম্ভীর ভাবে বলেন রাজ।

‘যোদ্ধা’ সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় হিট হতে চলেছে

সকালের এই ‘রাজ কী আদালত’-য়ে তাঁর কাছে আরও একটি প্রশ্ন রাখি।

অনেকে মনে করেন রাজ চক্রবর্তী ঠিক সেই অর্থে পরিচালক নন। তিনি হলেন ‘এক্সিকিউটর’। শ্রীকান্ত মোহতা তাঁকে একটা ছবি রিমেক করতে বলেন। সেই অনুযায়ী তাঁকে একটা ডিভিডি দেন, এবং সেই ছবিটা অসম্ভব যত্ন-সহকারে বানিয়ে দেন রাজ। তাঁর কানে কি কখনও পৌঁছেছে এ রকম কোনও অভিযোগ?

“হ্যাঁ, পৌঁছেছে। আমার জীবনে শ্রীকান্ত মোহতার অবদান তো আমি অস্বীকার করতে পারব না। আমার থেকে বেশি সিনেমাটা বোঝে শ্রীকান্তদা। উনি যদি আমাকে একটি ছবি রিমেক করতে বলেন, আমি শুধু চাই যে-লগ্নিটা উনি করেছেন ছবিতে, সেটা যেন আমি তাঁকে ফেরত দিতে পারি। আর কে কী বলল, তাতে কী এসে যায়! আর বলে তো পঞ্চাশটা লোক তাও আবার ফেসবুক আর ট্যুইটারে। তাদের জন্য না আমি ছবি বানাই, না তাদের মতামত আমার জীবনে কোনও বদল ঘটায়,” জোরের সঙ্গে বলেন রাজ।

জিজ্ঞেস করি, এই যে ‘যোদ্ধা’ দেখে লোকে বলছে এটা ‘পুরুষ অরুন্ধতী’ সেই সম্বন্ধে কী বলবেন? সেই রিভেঞ্জ, সেই পিরিয়ড ড্রামা, সেই কম্পিউটার গ্রাফিক্সের আধিক্য?

“ওহ্‌, তাই? ‘পুরুষ অরুন্ধতী’ বলছে বুঝি? ভাল। বললাম না, সব কথার জবাব ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে দেব। আমার মনে হয় ‘যোদ্ধা’ সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় হিট হতে চলেছে। তখন আমার প্রথম ইন্টারভিউ আনন্দ প্লাস-কেই দিতে চাই,” বলেন রাজ।

শেষ প্রশ্ন।

হিরোইনরা তো শোনা যায় হিট ডিরেক্টরদের ‘বন্ধু’ হয়েই থাকা পছন্দ করেন। ‘যোদ্ধা’ যদি হিট না হয়, তা হলে তার পরেও মিমি চক্রবর্তী থাকবেন তাঁর পাশে?

প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেলেন রাজ। হাসতে হাসতেই বলেন, “আপনি তো ধরেই নিচ্ছেন ‘যোদ্ধা’ চলবে না তাই এমন প্রশ্ন করছেন। আর আমি জানি ‘যোদ্ধা’ তো দুর্দান্ত চলবেই। তাই যদি হয় তা হলে এটা ভাবছেন না কেন তার পর আমি আর মিমি কী করব,” বলে উঠে পড়েন রাজ।

বুঝতে পারি, হালিশহরের ‘রাজু’র সাফল্যের পিছনে হয়তো এই আত্মবিশ্বাসটাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

raj chakraborty indraneil roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy