Advertisement
E-Paper

পাথরের মিসাইল ছোড়েন বাহুবলী

শাহরুখ-সলমন নেই। রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের স্টারেরা। তাতেই প্রথম সপ্তাহে ২৫০ কোটি। লিখছেন গৌতম চক্রবর্তীএই রকম রথ ‘বেনহার’ বা ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ ছবিতেও দেখা যায়নি। সামনে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া ঘোড়া, তার পর এয়ারোডাইনামিক্সের নীতি মেনে লম্বা, বাঁকানো এক কাঠের ফলা, পিছনে দাঁড়িয়ে অজেয় যোদ্ধা ‘বাহুবলী’। শাহরুখ-সলমন নেই। রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের স্টারেরা। তাতেই প্রথম সপ্তাহে ২৫০ কোটি।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০০:০১

এই রকম রথ ‘বেনহার’ বা ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ ছবিতেও দেখা যায়নি। সামনে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া ঘোড়া, তার পর এয়ারোডাইনামিক্সের নীতি মেনে লম্বা, বাঁকানো এক কাঠের ফলা, পিছনে দাঁড়িয়ে অজেয় যোদ্ধা ‘বাহুবলী’। ঘোড়ার আগে হেলিকপ্টারের পাখার মতো দেখতে কাঁটার বল। রথ যত ছোটে, কাঁটার পাখা তত জোরে ঘুরতে ঘুরতে আগুয়ান শত্রুদের কচুকাটা করে দেয়।

মাহিষ্মতী বনাম কালাকেয়া রাজ্যের এই যুদ্ধে আরও কত অস্ত্রই যে ব্যবহৃত হয়েছিল! নিউক্লিয়ার মিসাইল ছিল না, কিন্তু বড় বড় পাথর তো ছিল! প্যারাস্যুটের মতো কাপড়ের দু’পাশে পাথরের গোলা বেঁধে দেওয়া, নির্ভুল লক্ষ্যে উড়ে যাচ্ছে সেই পাথর-বাঁধা কাপড়, উড়তে উড়তে এক সময় সে সটান শত্রুসেনার ওপর নেমে আসে। কয়েকশো লোক তখনই আহত হয়ে পপাত ধরণীতলে! পাথরবাঁধা কাপড় কী ভাবে স্কাড মিসাইলের মতো নির্ভুল লক্ষ্যে উড়ে যায়, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, প্লবতা ইত্যাদি সেখানে কী ভাবে কাজ করে ইত্যাদি বালখিল্য পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন তুলে বিব্রত করবেন না। রাজামৌলির পরিচালনায় ২৫০ কোটি টাকায় তৈরি, ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি ‘বাহুবলী দ্য বিগিনিং’ এ রকমই। জাঁকজমকে ভরপুর ভিস্যুয়াল ফিস্ট! যাবতীয় কার্যকারণ বোধ, যুক্তি-তর্ক দূরে সরিয়ে তখন সিনেমাটা উপভোগ করাই আসল।

যুদ্ধ তো শেষ পাতে। তার আগে শিবা (প্রভাস) যে ভাবে তার প্রেমিকা অবন্তিকা (তমান্না)কে নিয়ে তুষারধসের মধ্যে একটা পাথরের চাঙড়কে স্লেজগাড়ির মতো ব্যবহার করে পালায়, দেখার মতো। রাজার সৈন্যরা তাদের ধরতে এসে গিয়েছে, দূর আকাশে তখন রামধনুর সমুদ্রে ঢেউ। নামছে তুষারধস, স্রোতের মতো ছুটে আসছে বরফকুচি। রাজপুত্র শিবা পাথরের চাঙড়ে প্রেমিকাকে নিয়ে বসে পড়ে, চাঙড় ছুটতে থাকে, দু’ধারে, পিছনে ধেয়ে যেতে থাকে হিমেল তুষারসমুদ্র।

শুধুই রাজপুত্র, রাজকন্যার গল্প নয়। এই ছবির নায়ক শিবা টারজানের মতোই গাছের ডাল ধরে বড় বড় খাদ পেরিয়ে যায়। ছোটবেলায় রাজপুত্র শিবাকে বাঁচাতে তার ধাত্রী-মা জলে ভাসিয়ে দেয়, ‘হে ঈশ্বর, আমার পাপের শাস্তি আমাকে দিও। এই শিশুকে নয়।’ অরণ্যচারী এক উপজাতি মায়ের কোলে মানুষ হয় সে। সিসিল ডি মিলের ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ ছবিতেও তো শিশু মোজেসকে এ ভাবেই ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল! কালাকেয়া রাজ্যের দুষ্ট রাজাটা যে ভাবে ‘কিলিকিলি’ নামের উদ্ভট ভাষায় কথা বলতে বলতে, জার্মান উপকথার দেবতা ‘থর’-এর মতো হাতুড়ি নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে এল, একেবারে ‘লর্ড অব দ্য রিংস’। ‘স্টার ওয়র্স’ আর ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ ছবির কোনও কোনও চরিত্র উদ্ভট ভাষায় কথা বলেছিল। কিলিকিলিও সে রকম ভাষা। সেই ভাষায় নাকি ৭৫০টা শব্দ ও ৪০টি ব্যাকরণের নিয়ম রয়েছে। ভারতীয় ছবিতে এ সব আগে কখনও হয়নি। একটি দৃশ্যে পাহাড়ের ওপর নায়িকা তমান্নার শরীরে এক ঝাঁক নীল প্রজাপতি, একটু পরে জলের নীচে নীল মাছেরা খেলা করতে থাকে তার হাতে। কখনও বা সে মেয়ে তিরধনুক হাতে গাছে উঠে শত্রুর অপেক্ষায়। আর তার ওপরের ডালে শুয়ে নায়ক শিবা সেই সুন্দরীর বাহুলতায় এঁকে দেয় রঙিন ট্যাটু। জেম্স ক্যামেরনের ‘অবতার’ ছবির দূরাগত কোনও প্রভাব থাকল?

প্রভাব থাকতেই পারে। কিন্তু টুকলিবাজি নয়। সব কিছু মিলিয়ে এক ধরনের ‘প্লাস্টিক আর্ট’। সাবু সিরিলের সেট ডিজাইনিং-এ মাহিষ্মতীর রাজপ্রাসাদ যেমন! আলো-জ্বলা প্রাসাদকে কখনও দূর থেকে মনে হয়, দাক্ষিণাত্যের রাজপ্রাসাদ। কখনও বা মনে হয়, রাজস্থানের ছোঁয়া আছেও বুঝি! ছবির শুরুতে বিশাল এক খাড়াই জলপ্রপাত। সেখানে আদিবাসীদের বাস। আর প্রপাতের উৎসে যদি কেউ পৌঁছায়? হিমালয়ের মতো তুষারঢাকা পাহাড়, মাহিষ্মতীর রাজপ্রাসাদ আর বিদ্রোহীদের জঙ্গুলে আস্তানা। নায়ক শিবা প্রকাণ্ড এক শিবলিঙ্গকে ঘাড়ে করে জলপ্রপাতের দেওয়াল বেয়ে উঠতে থাকে। ‘টারজান’, ‘অবতার’, ‘সুপারম্যান’ থেকে ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’, রাজা, রানি, আদিবাসী, শিবলিঙ্গ সবই নমনীয় ভাবে নিজস্ব উপায়ে মিলেমিশে আছে। কোনওটিই প্রবল নয়। হাতির রথ টানা আছে, আছে রানা ডুগ্গুবাটির সঙ্গে খ্যাপা ষাঁড়ের বুলফাইট। রিলিজের প্রথম সপ্তাহেই হিন্দিতে ডাব করা এই তেলুগু ছবি কেন ১০০ কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা করে নিশ্চয় পরিষ্কার। হিন্দি, তেলুগু, তামিল মিলিয়ে আরও বেশি— ২৫০ কোটি।

এই ছবিতে শিবা আর শিবার বাবা মহেন্দ্র বাহুবলী এই দুটি চরিত্রেই তেলুগু ছবির তারকা প্রভাস। পাঁচ বছর ধরে শ্যুটিং, শরীর তৈরির জন্য নায়ক নিজের বিয়েটাও পিছিয়ে দিয়েছিলেন, বাড়িতে তৈরি করেছিলেন দেড় কোটি টাকার জিম, পেশিবহুল চেহারা বানাতে রোজ ৪০টি ডিমের সাদা অংশ খেতেন এ সব তথ্য ইতিমধ্যেই বহুচর্চিত। হলে বসে মনে হল, তাঁর পরিশ্রম সার্থক। প্রভাস এবং ভিলেন বল্লাল দেব (রানা ডুগ্গুবাটি) দু’জনেই দুর্দান্ত। কলকাতার কত তন্বী শ্যামা যে এর পর দীর্ঘশ্বাসে বাঁধিয়ে এই দুই নায়ককে বুকের ফটোফ্রেমে রেখে দেবে, ভাবলে ঈর্ষা হয়। পুরুষরা বরং কিঞ্চিৎ দুঃখ পাবেন। তমান্নাকে প্রভাস যে ভাবে গাছের পাতা ছিঁড়ে কাজল পরিয়ে দিলেন, স্ট্রবেরি দিয়ে লিপস্টিক, তার পরও তাঁকে কাঠ-কাঠ লাগল যে! মহারানি শিবরঞ্জনীর চরিত্রে রামাইয়া কৃষ্ণন বেশ ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতি। দুর্গের সামনে বসে তিনি যে ভাবে মাহিষ্মতী বনাম কিলিকিলি যুদ্ধ দেখলেন, একের পর এক হুকুম দিলেন, চমৎকার! মনে হল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বাড়ির ছাদে বসে কোনও মহিলা ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইন যুদ্ধ দেখছেন! ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ও ব্যয়বহুল রূপকথার আড়ালে কি থেকে গেল গোপন কোনও রাজনীতি?

তবু, অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের জন্য। চেন্নাই এক্সপ্রেস ছবিতে যিনি দীপিকার বাবা হয়েছিলেন, সেই সাথায়ারাজ এখানে কাটাপ্পা নামে বিশ্বস্ত এক সেনানায়কের চরিত্রে। শেষ দৃশ্যে জানা গেল, তিনিই বিশ্বাসঘাতক। শিবার বাবা রাজা অমরেন্দ্র বাহুবলীকে তিনিই খুন করেছিলেন। কেন? এই প্রশ্নেই বাহুবলীর দ্য বিগিনিং শেষ। আগামী ২০১৬ সালে শেষ অংশ।

অতএব, এত প্রশংসা সত্ত্বেও নম্বর দেওয়া গেল না। উত্তেজনার ক্লাইম্যাক্সে এসে দর্শক খামোখা এক বছরের আঁচ পোয়াবেন কোন দুঃখে? অতএব, ফার্স্ট ডিভিশনের সম্ভাবনা সত্ত্বেও রেজাল্ট উইথহেল্ড! পরিচালক যদি অর্ধেক পরীক্ষা দেন, সমালোচক আর নম্বর দেবেন কী ভাবে?

আনাচে কানাচে

‘সহজিয়া’ রথ: রথের আগে ছেলে সহজকে নিয়ে মা প্রিয়াঙ্কা। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

রোল-বদল: শ্যুটিংয়ের ফাঁকে শ্রাবন্তী। ছবি: কৌশিক সরকার।

abpnewsletters bahubali cinema review bahubali review gautam chakraborty bahubali the begining ananda plus latest ananda plus cover story bahubali storyline
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy