Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩
Irrfan Khan

ইরফানের মৃত্যুতে আমি কি একা হয়ে গেলাম, লিখলেন তাঁর স্ত্রী

একটাই নালিশ আছে আমার ইরফানের বিরুদ্ধে। জীবনকে প্রবল ভাবে বাঁচতে শিখিয়ে দিল!

স্ত্রী সুতপা ও সন্তানদের সঙ্গে ইরফান খান। —ফাইল চিত্র

স্ত্রী সুতপা ও সন্তানদের সঙ্গে ইরফান খান। —ফাইল চিত্র

সুতপা সিকদার
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ১৭:১২
Share: Save:

আজ লিখতে গিয়ে কী করে বলি যে ইরফানকে নিয়ে যা বলব তার সবটাই ব্যক্তিগত? যখন সারা বিশ্ব জানাচ্ছে, ইরফানের চলে যাওয়া মানে তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি। কী করেই বা বলি আমি একা? যখন বিশ্বের অগুনতি মানুষ আজ আমার পাশে! আমি দেখছি কত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি তাদের জন্য আজ বলি, ইরফানের এই চলে যাওয়া কোনও ক্ষতি নয়, এই যাওয়ার মধ্যে অর্জন আছে। এই অর্জন...পূর্ণতা ইরফান শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে আমাদের। এই অর্জনের কথা বেশিরভাগ মানুষ জানেন না। তাই আজ সকলকে বলতে চাই। ইরফানের চলে যাওয়া বা যা কিছু অবিশ্বাস্য তা আসলে ইরফানের ভাষায় ‘ম্যাজিকাল’। ইরফান আপেক্ষিক বাস্তবতা পছন্দ করত না। ও বলত থাকা আর না-থাকা, দুইয়ের মধ্যেই ছন্দ আছে, যাদু আছে। এরকম নয় যে আমায় দেখা যাচ্ছে না মানে আমি নেই।

Advertisement

একটাই নালিশ আছে আমার ইরফানের বিরুদ্ধে। জীবনকে প্রবল ভাবে বাঁচতে শিখিয়ে দিল! সব কিছুর বিষয় এত খুঁতখুঁতে, কোনও কিছুকেই এলাম, নিয়ে নিলাম— এ ভাবে দেখিইনি। সাধারণ কিছুই নয় যেন।ঝড়, আলো, অন্ধকার জীবনের সব মুহূর্তেই একটা ছন্দ গেঁথে দিয়েছিল ইরফান। সেই ছন্দে গান ভাসত আমাদের জীবনে। জীবনটা আমাদের কাছে সেই ‘মাস্টারক্লাস’। তাই যখন সেই অনাহূত অতিথির প্রবেশ ঘটল আমাদের জীবনে, ততদিনে আমি শিখে গিয়েছি ঝড়ের মধ্যে, বেদনার মধ্যে ছন্দকে ধরে রাখার মন্ত্র। যা-ই আসুক জীবনে, কোনও ছন্দপতন না হয়। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা আমার কাছে ছিল একটা স্ক্রিপ্টের মতো, যা যা পারফর্ম্যান্স হত, সব আমার নজরে।

ওখানেই ‘পারফেক্ট’হওয়ার চেষ্টা করতাম। এই জার্নিতে আশ্চর্য সব মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাদের। লিস্টটা বড্ড লম্বা। তার মধ্যেও যাঁদের কথা বলতে চাই তাঁরা হলেন অঙ্কোলজিস্ট নীতেশ রোহতাগি।উনি প্রথম আমাদের হাতটা ধরেন। তারপর চিকিৎসচ ডান ক্রেল (ইউকে)। চিকিৎসক শিদ্রাভি (ইউকে)। আমার হৃদস্পন্দন, আমার অন্ধকার দিনের আলো কোকিলাবেন হাসপাতালের চিকিৎসক সেবান্তি লিমায়ে। না, বোঝাতে পারব না, কী অভূতপূর্ব, বেদনাময়, উত্তেজনাপূর্ণ এই জার্নি! এর ইন্টারলিউড একেবারে আলাদা। এই আড়াই বছরের সঙ্গে আমার আর ইরফানের ৩৫ বছরের দাম্পত্যের কোনও মিল নেই। এর শুরু, মাঝের চলন, সবই অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টর ইরফানের হাতে ছিল।

আরও পড়ুন: দুধওয়ালার মেয়ের সঙ্গে কৈশোরের প্রেম ভাঙার দুঃখও শেয়ার করেছিলেন স্ত্রী ও প্রিয় বন্ধু সুতপার সঙ্গে

Advertisement

আমাদের বিয়ে আসলে বিয়ে নয়। একটা ‘ইউনিয়ন’। আমার পরিবারকে আজ দেখি একটা নৌকোর মধ্যে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার ছেলেরা, বাবিল আর আয়ান এখন নৌকো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর ইরফান বলছে, ‘ওয়াহা নেহি, ইহাসে মোড়ো।’ কিন্তু জীবনটা সিনেমা নয়। তাই এখানে ‘রিটেক’হয় না।আমি চাইব আমার বাচ্চারা ওদের বাবার ভাবনায়, বাবার শিক্ষায় সাবধানে এই জীবন নৌকায় ঝড় পেরিয়ে যাক।

এই লেখার শেষে চেয়েছিলাম ছেলেরা যদি ওদের বাবার শিক্ষার কোনও দিক বলতে চায়।

বাবিল: ‘নিজেকে সমর্পণ কর নৃত্যময় অনিশ্চিতের কাছে। বিশ্বাস রাখ ভাগ্যের কাছে যা ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়।’

আয়ান: ‘নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখ। মন যেন তোমায় নিয়ন্ত্রণ না করে।’

আরও পড়ুন: মাত্র ২৩৭ টাকার জন্য এক দিন হাত পাততে হয়েছিল ইরফানকে!

আমাদের অশ্রু ঝরে পড়বে। আমরা ইরফানের পছন্দের ‘রাত কি রানি’সেই গাছ লাগাব যেখানে বর্ণিল জয়যাত্রার পর ইরফান আরাম করছে।সময় লাগবে, কিন্তু ধীরে ধীরে ওই গাছের সুগন্ধ সেই সব মানুষের গায়ে এসে লাগবে যাদের শুধুমাত্র ইরফানের ফ্যান বলতে চাই না।

যারা আগামী দিনে আমার পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.