পরিচালক সুজিত সরকারের জীবনে, নির্মাণে আজও প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান। ২৯ এপ্রিল অভিনেতার মৃত্যুদিন। মাত্র একটি ছবি ‘পিকু’-তে একসঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। আনন্দবাজার ডট কমকে পরিচালক জানিয়েছেন, ইরফানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার জন্য দুটো ছবিই যথেষ্ট। কারণ, প্রয়াত অভিনেতার মতো উজাড় করে দেওয়া মানবিক মনের শিল্পী তিনি খুব কম দেখেছেন। সেই বিশ্বাস থেকেই তাঁর মনে হয়েছে, “পহেলগাঁও-এ ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনা ইরফানকেও ছুঁয়ে যেত। ও থাকলে কী বলত জানি না। তবে বেঁচে থাকলে বাকিদের মতো ইরফানও তীব্র নিন্দা করত।”

‘পিকু’ ছবির সেটে সুজিত সরকার, দীপিকা পাড়ুকোন, ইরফান খান। ছবি: সংগৃহীত।
পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে ইরফান নেই। সুজিতের মনে হয়, এই তো সে দিন তাঁরা একসঙ্গে শুটিং করেছেন। তাঁর পাশেই আছেন ইরফান। একসঙ্গে অনেক রাত গল্প করা বা ঝালমুড়ি খাওয়ার দিনগুলো তাঁর চোখের সামনে আজও ভাসে। সুজিতের কথায়, “কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব? ওকে নিয়ে অনেক গল্প। অনেক কথা। যখনই নতুন ছবির কথা ভাবি, ইরফান সামনে এসে দাঁড়ায়। ওকে ছাড়া কোনও ছবির পরিচালনা করার কথা ভাবতে কী যে কষ্ট হয়! গত পাঁচ বছরে ওর মতো কোনও অভিনেতা খুঁজে পেলাম না।”
সুজিত-ইরফান জুটির ‘পিকু’র দৃশ্য নিয়ে আজও দর্শকেরা ভেঙে ভেঙে দেখেন। কখনও রিল্সের মাধ্যমে, কখনও বা ইউটিউবে। দর্শকদের মধ্যে ‘পিকু’র সিক্যুয়েল দেখার আগ্রহ প্রবল। মানুষ জানতে চায়, বাবার মৃত্যুর পর ‘পিকু’র কী হল। সুজিত কি তা হলে ‘পিকু ২’ বানাবেন না? না কি ইরফান অভিনীত চরিত্রটি বাদ দিয়ে বানাবেন?

লাহা বাড়িতে শুটিংয়ের সময় দীপিকা-ইরফান-সুজিত। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন শুনে পরিচালক স্তব্ধ। কিছু ক্ষণ পরে বললেন, “কঠিন প্রশ্ন। ইরফান ছাড়া ‘পিকু ২’ আদৌ বানানো সম্ভব কি না সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বার করি।” ইরফানকে নিয়ে বলতে গিয়ে সুজিত জানিয়েছেন, তাঁর মতো মানুষকে পেয়ে নিশ্চয়ই স্বর্গবাসীরাও খুব খুশি। পরিচালক প্রশ্ন করেছেন, স্বর্গে গিয়ে সেই সব মানুষের সঙ্গে ভাল সময় কাটাচ্ছেন ইরফান?
ইরফানকে নিয়ে এক রকম সংলাপ বিনিময় করছেন পরিচালক। জানাচ্ছেন, তাঁর দুই সন্তান বাবিল এবং আয়ান খান ভাল আছেন। সুজিতই এখন বাবিলের অভিভাবক। ইরফান ছেলেকে নিয়ে যা যা স্বপ্ন দেখেছিলেন, সবটাই তিনি এবং প্রয়াত অভিনেতার স্ত্রী সুতপা শিকদার মিলে পূরণ করার চেষ্টা করছেন। বাবিল, সুতপা, সুজিত তিন জনে প্রায়ই একসঙ্গে আলোচনায় বসেন। বাবিলও মনেপ্রাণে চান, তিনি যেন বাবার মতো দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেন।

সেটে আলোচনায় দীপিকা-ইরফান-সুজিত। ছবি: সংগৃহীত।
“তোমাকে আমরা ভুলিনি। আমাদের ভাবনায়, কথায় রোজ তুমি আসো। তুমিও আমাদের ভুলে যেয়ো না। কাজ শেষ করে আমরা তোমার কাছে যাব। তুমিও আমাদের অপেক্ষায় থেকো”, বিশেষ বন্ধু ইরফানের জন্য সুজিতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল এই মনকাড়া মনখারাপ।