সালটা ২০১৮, যে বছরে ছবির জগতে গল্পই আসল নায়ক। ছোট বাজেটের হলেও, শুধু মাত্র কনটেন্টের জোরে বক্স অফিসে ও দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে একাধিক ছবি। সেই বছরেই কিন্তু আদ্যোপান্ত কমার্শিয়াল ছবি ‘সিম্বা’ বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছে। একই বছরে পরপর দুটো ব্লকবাস্টার। সালটা রণবীর সিংহের জন্য লাকি বটে! ফোনের ও পারে একবাক্যে সে কথা স্বীকার করলেন রণবীর নিজেও, ‘‘পুরো বছরটা ম্যাজিকাল! এক দিকে আলাউদ্দিন খিলজির মতো ঐতিহাসিক চরিত্রে, অন্য দিকে পুলিশ। ‘পদ্মাবত’-এ প্রচুর এনার্জির প্রয়োজন ছিল চরিত্রটার জন্য। আবার ‘সিম্বা’ নিখাদ এন্টারটেনমেন্ট মুভি। ‘সিম্বা’ হিট হওয়া আমার কাছে খুব জরুরি ছিল। না হলে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ছাড়া আর কেউ আমার সঙ্গে ছবি করতেন না।’’
এ তো গেল রণবীরের কর্মজগৎ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও বছরটা চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ‘‘নভেম্বর মাসটা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। লেক কোমোতে আমাদের বিয়েটা পুরো স্বপ্নের মতো। পুরো কৃতিত্বই অবশ্য আমার স্ত্রী দীপিকার। ও-ই সব পরিকল্পনা করেছে। এর বেশি আর কী-ই বা চাইতে পারি!’’
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। নতুন বছরের গোড়াতেই মুক্তি পেয়েছে ‘গাল্লি বয়’-এর ট্রেলার। ট্রেলারের ভিউজ় বলে দিচ্ছে ছবির জনপ্রিয়তা। ট্রেলারে হিরের মতোই দ্যুতি ছড়াচ্ছে রণবীর-আলিয়া জুটি। তার পরেই ‘এইট্টি থ্রি’, যেখানে কপিল দেবের মতো এক জন খেলোয়াড়কে পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন রণবীর। ‘‘কেরিয়ারের গোড়াতেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, প্রত্যেকটা ছবিতে ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করব। ভিন্ন পেশার, চরিত্রের মানুষকে ফুটিয়ে তোলাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। আমি সব জঁরের ছবির অভিনেতা হিসেবেই পরিচিত হতে চাই।’’ এত রকম চরিত্রে অভিনয় করেন বলেই হয়তো প্রত্যেক স্তরের মানুষকে স্পর্শও করে তাঁর অভিনয়।
রণবীরের প্রাপ্তির ঘর এখন পূর্ণ। এত পাওয়ার মাঝে ভয় করে না কিছু হারিয়ে ফেলার? স্পষ্ট উত্তর, ‘‘না। কারণ সাফল্যে যেমন ভেসে যাই না, ব্যর্থতাও আমাকে হতাশ করতে পারে না। আমি মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী। ছবির ফল ভাল-খারাপ যা-ই হোক না কেন, মেনে নিই। জীবনে অনেক ব্যর্থতা দেখেছি। মনে করি, পৃথিবীতে সব ভালর সঙ্গে যেমন কিছু খারাপ থাকে, সব খারাপের সঙ্গেও কিছু ভাল থাকে।’’
কেরিয়ারের শুরুতে রণবীরকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। এখন হয়তো সেই জয় উপভোগের সময়। কর্মজগতে সিনিয়রদের সঙ্গ পাওয়াকেও নিজের সৌভাগ্য বলেই মনে করেন তিনি। ‘‘আমি খুব ভাগ্যবান যে, নব্বইয়ের দশকের ছবি দেখে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় অক্ষয়কুমার, অনিল কপূর, গোবিন্দর যে ছবি বেরোত, সব দেখতাম। আর তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, বড় হয়ে ওঁদের মতো অভিনয় করব। আর এখন যখন তাঁদের সামনে দেখি, তাঁরা আমার কাজের প্রশংসা করেন, তখন অদ্ভুত অনুভূতি হয়! সম্প্রতি ‘গাল্লি বয়’-এর ট্রেলার দেখে অমিতাভ বচ্চন স্যর অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ করেছেন। কাঁধে সিনিয়রদের এই হাতটাই আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।’’
কাজের জগতে এত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন রণবীর। ছবির শুটিং, প্রোমোশন, সাকসেস পার্টি— সব কিছুর পরে তিনি যখন বাড়ি ফেরেন, তখন পাঁচ জনের মতোই সাধারণ, ‘‘বাড়ি ফিরে দীপিকার সঙ্গে সময় কাটাতে চেষ্টা করি। কর্ম ও ব্যক্তি জীবনে ব্যালান্স বজায় রাখতে চাই। সেটা সম্ভবও হচ্ছে দীপিকার জন্য। ও ভীষণ ডিসিপ্লিন্ড। আশা করি, দীপিকার কিছু গুণ আমার মধ্যে আসবে।’’
নতুন কিছু জানা ও শেখার আগ্রহ তাঁর বরাবরের। আলাপচারিতার শেষে বাংলা ভাষা শেখার ইচ্ছেও প্রকাশ করলেন তিনি। এই যুগে অনেক বাঙালিই যেখানে ঠিকঠাক বাংলা শিখে উঠতে পারছেন না, সেখানে রণবীর হয়তো শিগগিরই এই মিষ্টি ভাষাও শিখে ফেলবেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy