Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Gora Season 2

বাংলায় এত বেশি গোয়েন্দায় আমি ক্লান্ত, তবে গোরা একদম অ্যান্টি গোয়েন্দা: ঋত্বিক

বাংলায় গোয়েন্দাদের ভিড়ে দিব্যি নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছিল ভুলো, খিটখিটে, আধপাগলা ‘গোরা’। জনপ্রিয় সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়ন মুক্তি পাবে ৩০ জুন। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি ঋত্বিক চক্রবর্তী।

Ritwick Chakraborty

ঋত্বিক চক্রবর্তী। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

প্রশ্ন: বাঙালির এত গোয়েন্দাপ্রীতি কেন বলুন তো?

ঋত্বিক: বাঙালি যে খুব গোয়েন্দাপ্রিয়, তা ঠিক বলা যায় না। তবে প্রচুর গোয়েন্দা গল্প হচ্ছে। অনেক দর্শক পছন্দও করছেন। আবার পাশাপাশি এটাও কিন্তু ঠিক যে, অনেকে বিরক্ত। গোয়েন্দা গল্প ছেড়ে এ বার তাঁরা নতুন কিছু চাইছেন। তাই বাঙালির গোয়েন্দাপ্রীতি কিন্তু মিশ্র বলে আমার মনে হয়। তবে কিছু গল্প অনেকে দেখেন। নতুন গোয়েন্দা গল্প বানালে সেগুলোও চলবে— এই আশায় আরও নতুন কাজ হয়। এই ভাবেই বাজারটা চলছে। আমি নিজে কিন্তু খুব একটা গোয়েন্দাভক্ত নই।

প্রশ্ন: সেটা কি খালি অভিনয়ের ক্ষেত্রে বলছেন, না কি পাঠক হিসাবেও?

ঋত্বিক: ছোটবেলায় আমি সবই পড়েছি। প্রথমে ফেলুদা, তার পর আরও একটু বড় হয়ে ব্যোমকেশ। পড়তে ভালই লেগেছে। এখনও কিছু কিছু থ্রিলার পড়তে ভাল লাগে। তবে গোয়েন্দা গল্প মানেই যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাতদিন বসে বই পড়ব, তেমন নই। নেটফ্লিক্সে থ্রিলার সিরিজ় দেখতে খারাপ লাগে না। সময়টাও হু হু করে কেটে যায়। কিন্তু আমরা যে হেতু সব ফরম্যাটে খুব বেশি সংখ্যায় গোয়েন্দা গল্প বানাচ্ছি— সিনেমা, ওয়েব সিরিজ়, অডিয়ো সিরিজ়, এত বেশি গোয়েন্দায় আমি নিজে হয়তো একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

প্রশ্ন: সাধারণ গোয়েন্দা গল্পে দর্শক ক্লান্ত হয়ে পড়েন বলেই কি ‘গোরা’র মতো কমেডি-ডিটেকটিভ সিরিজ় বেশি সফল?

ঋত্বিক: কথাটা শুনতে একটু বিতর্কিত লাগতে পারে। কিন্তু ফেলুদা-ব্যোমকেশের চরিত্রগুলো তো আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। টু সাম এক্সটেন্ট দে আর ক্লিশেড। গোরা তা নয়। সে একেবারে অ্যান্টি-গোয়েন্দা। ভুলে যায়, ক্লুও মনে রাখত পারে না। ওয়েব সিরিজ় খুব চরিত্র-নির্ভর। তাই গোরার চরিত্রটাই দর্শকের কাছে বড় আকর্ষণ। সে রহস্য সমাধান করার পাশাপাশি নিজেও নানা রকম কাণ্ড করছে। তাই আপনার সঙ্গে আমি খানিকটা একমত। গোরার জনপ্রিয়তার পিছনে এটা অবশ্যই একটা বড় কারণ।

Ritwick Chakraborty

গোরা চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনি পর্দায় সাধারণত সাট্‌ল অভিনয় করেন, সেখানে গোরা সারা ক্ষণ পর্দায় নানা রকম কাণ্ড ঘটাচ্ছে। এমন চরিত্রে অভিনয় করা কি বেশি চ্যালেঞ্জিং?

ঋত্বিক: চ্যালেঞ্জের চেয়েও মজার। সত্যিই আমার কাছে যে চরিত্রগুলো আসে সেগুলো বেশির ভাগই বাস্তবের কাছাকাছি। সেখানে গোরাকে ছকে বাঁধা যায় না। আমার খুব প্রিয় একটা চরিত্র। এমনিতে একই চরিত্রে বার বার অভিনয় করতে গেলে একটা একঘেয়েমি চলে আসে। কিন্তু গোরার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। দ্বিতীয় সিজ়ন শুট করেও দারুণ লাগল। প্রথম সিজ়নে ওর অনেকগুলো দিক দর্শকের দেখা বাকি থেকে গিয়েছিল। মনে হয়, এই সিজ়নে আবার এই চরিত্রটাকে নতুন করে চিনবেন দর্শক।

প্রশ্ন: ‘গোরা’ প্রথম ওয়েব সিরিজ় ছিল আপনার। তার পর থেকে বেশ কয়েকটা করেছেন। ওটিটি মাধ্যমটা ভাল লেগে গেল তা হলে?

ঋত্বিক: ‘গোরা’র পর ‘মুক্তি’ করেছিলাম। তার পর ‘সাবাশ ফেলুদা’। অনেকগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। যেমন রাজের (চক্রবর্তী, পরিচালক) ‘আবার প্রলয়’, ‘মিস্টার কলিকেতা’ বলে হইচই-এরই একটা সিরিজ়— বেশ কয়েকটা পর পর আছে। অভিনেতাদের কাছে ফিল্ম, টেলিভিশন বা ওটিটি-র ফারাক সে ভাবে হয় না। বরং ওয়েব সিরিজ়ে গল্পটা অনেকটা বিস্তারিত বলা হয় এবং বেশির ভাগ গল্পই ভীষণ চরিত্র-নির্ভর। তাই কাজ করতে মজাই লাগে।

প্রশ্ন: আপনি নিজে কখনও ভেবেছিলেন, এক দিন গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করবেন?

ঋত্বিক: কী কী চরিত্র পাব, সেটা নিয়ে আমি নিজে খুব একটা ভাবি না। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক, কেউ যদি আমায় গোয়েন্দার চরিত্রে ভাবতে চান, তিনি কিন্তু ঠিক আমার মধ্যে গোয়েন্দা খুঁজে নিতে পারেন। কারণ, আমি তো অভিনেতা। আমি তো গোয়েন্দা এবং খুনি দুই-ই হতে চাই। তাই যিনি দেখতে চাইবেন, তাঁরও একটা দেখার চোখ থাকতে হবে।

Ritwick Chakraborty

প্রশ্ন: কোন ধরনের ছবি বা চরিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছেন, তা নিয়ে কখনওই কি ভাবেন না?

ঋত্বিক: আমি কোনও কিছু নিয়েই খুব বেশি ভাবি না। তবে কোন কোন চরিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছি, সেই হিসাবটা নতুন অভিনেতারাই রাখবেন। এক জন সিজ়ন্‌ড অভিনেতা যদি সেই তালিকা বানায়, তা হলে আমার মনে হয়, সে তার কাজটা ঠিক মতো করছে না। কারণ, যা আসছে, সেগুলো নতুন ভাবে ফুটিয়ে তোলাই তার কাজ। যা আসছে না, সেই তালিকাটা তো সব সময়ই বেশি হবে। সেই প্রত্যাশার বোঝা বওয়ার মতো কাঁধ আমি তৈরি করিনি। এখন যদি আমি বসে থাকি, আমি শার্লক গোত্রীয় কোনও গোয়েন্দার চরিত্র পাব, তা হলে তো আমার দুঃখ বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। আর যদি কোনও দিন চলে আসে, তখন নিশ্চয়ই কাজটা নিয়ে ভাবব। আগে থেকে ভেবে কোনও লাভ নেই।

প্রশ্ন: শিল্পীসত্তা বাদ রেখে লাভ-ক্ষতির হিসাব করেন না? বছরে ক’টা ছবি করছেন, পুজোয় নিজের ছবি আসছে কি না, এই ভাবনাগুলোও কি কখনও মনে আসে না?

ঋত্বিক: পুজোয় আমার ছবি আসছে কি না, সেটা নিয়ে সত্যিই ভাবি না। কিন্তু বছরে ক’টা ছবি করলাম, তার হিসাব আমার থাকে। কারণ, বছরে খুব কম ছবি করি না। তবে বাণিজ্যের দিকটা অভিনেতার চেয়ে যদি প্রযোজকেরা বেশি মন দিয়ে ভাবেন, তা হলে সেটা সিনেমার জন্য বেশি ভাল হয়। কোন ছবি কবে মুক্তি পাবে, কী ভাবে পাবে, কোথায় পাবে— এগুলো ভাবা তো অভিনেতার কাজ নয়।

প্রশ্ন: আপনার সতীর্থদের মধ্যে অনেকেই মুম্বইয়ে যাতায়াত বাড়িয়েছেন। আপনার ইচ্ছে নেই?

ঋত্বিক: ইচ্ছে নেই বলব না, তবে আমার উদ্যোগটা একটু কম রয়েছে (হাসি)। এখন অবশ্য অনেক কাজই প্যান ইন্ডিয়ান হয়ে গিয়েছে। হিন্দি ছবিতে কাস্টিংয়ের প্রক্রিয়াটা বেশ স্বচ্ছ। মুম্বইয়ের বড় কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাছে সব অভিনেতারই নম্বর রয়েছে। তাই আমাদের কাছে এখন সব খবরই আসে। সে রকম ভাল চরিত্র হলে, আমার ডেট যদি মিলে যায়, তা হলে নিশ্চয়ই করব। তবে অনেক প্রস্তাব এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে চরিত্র পছন্দ হয়নি, আবার কিছু ক্ষেত্রে অন্য নানা কারণে অনেক দূর কথা এগিয়েও হয়নি।

প্রশ্ন: এখনও কাজ বাছার ক্ষেত্রে শুধু চরিত্রই দেখেন?

ঋত্বিক: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই। কিন্তু এটা তো আমার পেশাও। শুধু অপছন্দ হচ্ছে বলে কাজটা করব না, এই বাহুল্য কোনও পেশাতেই থাকে না। তাই এখন চরিত্র সবার আগে দেখি। কিন্তু তার পর পরিচালক এবং বাকি কিছু ফ্যাক্টরও দেখে নিই।

প্রশ্ন: আপনি তো প্রচুর নতুন পরিচালকের সঙ্গে সহজেই কাজ করেন?

ঋত্বিক: নতুনদের সঙ্গে কাজ করাটা আমার কাছে ঝুঁকি মনে হয় না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শুটিংয়ের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। কিন্তু নতুনরা সেই নিয়মের বাইরে গিয়েও ভাবতে পারে। তাতে ছবির মধ্যে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে সব সময়ই উৎসাহী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE