Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সামাজিক ব্যাধি জয়ের গল্প বলছে সেলুলয়েড

গল্পের বিকল্প নেই! একটা ভাল গল্প বলার মুন্সিয়ানাই যে বরাবর এ দেশে কোনও সফল ছবির আসল হাতিয়ার, তা এক কথায় মানেন তাবড় চিত্রপরিচালকেরা। বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির মোকাবিলাতেও এ বার সেলুলয়েডে সেই গল্পকে ব্যবহারের চেষ্টাই দেখা গেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি তথা রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি আত্মপ্রকাশ করেছে। আর সেই সূত্রেই রাজ্যের প্রথম সারির বিচারপতিদের পাশে দাঁড়ালেন তারকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়দের মতো টালিগঞ্জের বিশিষ্ট জনেরা।

প্রিমিয়ারে আড্ডা। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও দেবলীনা কুমার। শুক্রবার, নন্দনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রিমিয়ারে আড্ডা। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও দেবলীনা কুমার। শুক্রবার, নন্দনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

গল্পের বিকল্প নেই!
একটা ভাল গল্প বলার মুন্সিয়ানাই যে বরাবর এ দেশে কোনও সফল ছবির আসল হাতিয়ার, তা এক কথায় মানেন তাবড় চিত্রপরিচালকেরা। বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির মোকাবিলাতেও এ বার সেলুলয়েডে সেই গল্পকে ব্যবহারের চেষ্টাই দেখা গেল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি তথা রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি আত্মপ্রকাশ করেছে। আর সেই সূত্রেই রাজ্যের প্রথম সারির বিচারপতিদের পাশে দাঁড়ালেন তারকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়দের মতো টালিগঞ্জের বিশিষ্ট জনেরা।

‘জয়ী’ নামের ওই ছবির প্রেরণা পুরুলিয়ার বীণা কালিন্দী। দিনমজুরের মেয়ে পড়াশোনার তাগিদে ১৩ বছর বয়সে মা-বাবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজের বিয়ে ভেস্তে দেন। গ্রামে আরও অনেক মেয়ের চেতনা গড়ে তুলতেও পথ দেখান।
কন্যাকে অল্পবয়সে সম্প্রদানে ‘গৌরীদানে’র পুণ্যের ঝোঁক দেখা গেলেও বাস্তবে বাল্যবিবাহের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে বড় মাপের সামাজিক অপরাধ। সেটাই মনে করালেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ‘‘নাবালিকা বিয়ের সঙ্গে অনেক সময়েই নারী পাচারও মিশে থাকে,’’ বলছিলেন তিনি। কন্যাশ্রী প্রকল্পে রাজ্য সরকার যে মেয়েদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা শেখানোয় জোর দিচ্ছে, তা-ও উঠে আসে মন্ত্রীর কথায়। তা-বলে নাবালিকাদের সামাজিক অবস্থাটা যে এ রাজ্যে খুব উজ্জ্বল নয়, তা-ও বলাই বাহুল্য। ভিন্‌ রাজ্য বা গ্রাম থেকে শহরে নাবালিকা পাচারের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আর রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে, খাস কলকাতাতেই ৭ জন নাবালিকার এক জনকে সঙ্গতির অভাবে বিয়ে দিতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা।

এই পটভূমির বিরুদ্ধে উজান ঠেলার কথাই বলছে ৩৫ মিনিটের ছবি ‘জয়ী’। বাংলার দর্শকদের জন্যও যা এক রকম স্রোতের উল্টো মুখে হাঁটা। হিন্দির ‘বালিকাবধূ’ বা বাংলার ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিও তো বাল্যবিবাহকে এক রকম গৌরবান্বিতই করে। তাই সিনেমার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোখার বার্তা অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা, মানছেন সকলে। স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি-র সম্পাদক তথা বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, এর আগে মফস্‌সলের কয়েকটি নাট্যদলের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমের মতো সামাজিক সঙ্কটের মোকাবিলায় নাটকও তৈরি করিয়েছেন তাঁরা। একই বিষয়ে আগেও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি হয়েছে। এ বার সেই কাজটাই গুছিয়ে করতে ঋতুপর্ণা, শিবপ্রসাদ-নন্দিতাদের ডাক দিয়েছেন।

শিবপ্রসাদ বলছিলেন, ‘জয়ী’র গোটা কাজটাই সারা হয়েছে, এক ‘তরুণ তুর্কি’ টিমের মাধ্যমে। বীণার আদলে গড়া চরিত্রটির অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার, চিত্রনির্দেশক দীপ্যমান ভট্টাচার্য, শব্দবিন্যাসকারী অমিতকুমার দত্ত বা আবহসঙ্গীতকার বিনীতরঞ্জন মৈত্রদের মতো কারও কারও এটাই প্রথম বড় মাপের কাজ। এই তরুণদের মাঝেই জয়ী-র চিত্রনাট্যে ‘প্রতিবাদী মুখ’ ঋতুপর্ণা। স্কুলের নৃত্যশিক্ষিকার ভূমিকায় রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র মহড়ার ফাঁকে মেয়েদের আত্মমর্যাদার চেতনা গড়ে তুলতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

‘ইচ্ছে’ থেকে ‘বেলাশেষে’— টালিগঞ্জে পরপর হিট ছবির সুবাদে ভাল গল্প-বলিয়ে হিসেবে পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ-নন্দিতার যথেষ্ট নামডাক এখন। ‘জয়ী’তেও তারই ছাপ। গল্প বলার ভঙ্গিতেই বোঝানো হয়েছে বাল্যবিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ। কিংবা আঠেরো বছরের নীচে মেয়েরা শরীরে-মনে বিয়ের জন্য তৈরি থাকে না। অসীমবাবু মনে করালেন, ‘‘নাটকে লোকশিক্ষে হয়, এ তো রামকৃষ্ণই বলেছিলেন।’’ ‘জয়ী’কে বাংলার গ্রামে তো বটেই, দরকারে হিন্দিতে ‘ডাব’ করে আরও বড় পরিসরে পৌঁছে দিতে চান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE