Advertisement
E-Paper

চাল বদলেও চেনা মাজিদি

এই কাজে মাজিদিকে যাঁরা উতরে দিয়েছেন, তাঁদের প্রথম নাম চিত্রগ্রাহক অনিল মেহতা। বস্তি থেকে জেলখানা— সেটের কাজ ছিল অনেক। প্রোডাকশন ডিজাইনার মানসী ধ্রুব মেহতা, সেট ডিরেক্টর দুর্গাপ্রসাদ মহাপাত্র তাতে ডিসটিংশন নিয়ে পাশ।

সোমেশ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০১

ছবিটার নাম অক্লেশে হতে পারত ‘বিশ সাল বাদ’।

ইরানের মফস্সলে স্কুল যাওয়ার জুতোটুকুও জোটাতে না পারা ভাইবোনের গল্প বলে দুনিয়ার নজর কেড়েছিলেন মাজিদ মাজিদি। সেটা ১৯৯৭ সাল, ছবির নাম ‘চিলড্রেন অব হেভেন’। ২০১৭-এ ফের এক ভাইবোনের গল্প বুনেছেন তিনি। তবে ফারসিতে নয়, হিন্দিতে।

কাজটা সহজ ছিল না। অন্য দেশ, অন্য ভাষা, জীবনকে ভাবার অন্য ধরন। সিনেমার ভাষাও বেশ আলাদা। কোনও দিনই দর্শকের ধরাছোঁয়ার বাইরে নয় তাঁর ছবি। তা বলে একেবারে বাণিজ্যিক বলতে যা বোঝায়, তা-ও নয়। তেহরানের শান্ত শহরতলি আর মুম্বইয়ের ছটফটানো বস্তিও তো এক জিনিস নয়। ফলে ঝুঁকি ছিলই।

কিন্তু ঝুঁকি নেওয়াটা ইদানীং ভালই রপ্ত করেছেন মাজিদি। নিজের ধরন ভাঙছেন নিজেই। না হলে ঠিক এর আগেই হজরত মহম্মদের ছোটবেলা নিয়ে প্রায় হলিউডি ধাঁচে ‘মোহাম্মদ’ করার সাহস হয়তো তিনি পেতেন না। ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ এই পা বাড়িয়ে খেলারই আর এক নমুনা।

বাপ-মা মরা ভাইবোন আমির আর তারা। আমির জড়িয়ে গিয়েছে মাদক বিক্রির চক্রে আর বিয়ে ভাঙা তারা রাতের খদ্দেরে জীবন খুঁজছে। আস্তানা তার ধোবিঘাটে। দুই মেয়ের বাপ, মাঝবয়সি দক্ষিণী পড়শি অক্ষি আবার তাকে চায়। এই সব খোঁজা আর চাওয়া কানাগলিতে ঘোরে, হয় জেলে গিয়ে পৌঁছয় অথবা মর্গে।

চিন্তার জটিলতায় না গিয়ে টানটান গল্প বলাটাই মাজিদির সহজাত। বুদ্ধির বিচ্ছুরণ নয়, বরং আবেগের ওঠাপড়া নিয়েই তাঁর কারবার। আর তার সঙ্গে কিছু ভুলতে না পারা দৃশ্য। বিশ বছর আগের ছবিটিতে যেমন নর্দমা দিয়ে ভেসে চলা এক পাটি কেডস। আর এ বার ঘরে টাঙানো পর্দার পিছনে বালবের আলোয় আমিরের ‘মুককালা মুকাবলা’ ছায়ানাচ! বা, আড়াই মাস বয়সে মায়ের সঙ্গে জেল-কুঠুরিতে চলে আসা শিশুর প্রশ্ন— চাঁদ কী? কেমন দেখতে?গল্পটা মাজিদিই লিখেছেন। হিন্দি সংলাপ লিখে দিয়েছেন তাঁর বন্ধু বিশাল ভরদ্বাজ। এবং বিশালের ছোঁয়াতেই ইরান আরও বেশি করে চলে এসেছে আরব সাগরের তীরে। কিন্তু এ ছবির আসল মজা অন্য জায়গায়। তা হল মুম্বই শহরটা। যে ভাবে এই চামড়া ওঠা শহরটার হাড়-কণ্ঠা তিনি বার করে এনেছেন, তাতে সে-ও যেন জ্যান্ত!

বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস

পরিচালনা: মাজিদ মাজিদি

অভিনয়: ঈশান, মালবিকা, শারদা, গৌতম

৭/১০

এই কাজে মাজিদিকে যাঁরা উতরে দিয়েছেন, তাঁদের প্রথম নাম চিত্রগ্রাহক অনিল মেহতা। বস্তি থেকে জেলখানা— সেটের কাজ ছিল অনেক। প্রোডাকশন ডিজাইনার মানসী ধ্রুব মেহতা, সেট ডিরেক্টর দুর্গাপ্রসাদ মহাপাত্র তাতে ডিসটিংশন নিয়ে পাশ। গোড়া থেকেই মাজিদির ছবি সম্পাদনা করে আসছেন হাসান হাসানদুস্ত। এ বারেও তিনি। ‘মোহাম্মদ’-এর পর ফের মাজিদির ছবিতে সুর দিলেন এ আর রহমান। তাঁর চেনা মেজাজ তো আছেই, ছবির একেবারে শেষে তোলা সুরের মূর্ছনা ভোলার নয়। ছবিটা খুঁটিয়ে দেখলে ভুলভ্রান্তি চোখে পড়ে। কিন্তু তৃপ্তিই বেশি।

কারিগরি নয়, এ ছবির সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমির চরিত্রে নবাগত ঈশান খট্টর। উলোঝুলো চুল আর চোখ ভরা বু্দ্ধিই শুধু নয়। যে সতেজ ফুর্তিতে তিনি ঝলমলিয়ে উঠেছেন, অনায়াসে মিশিয়ে দিয়েছেন অনুভূতির কড়ি ও কোমল, ভবিষ্যতেও তাঁর উপর বাজি ধরা যায়। সেই তুলনায় আড়ষ্ট তারার ভূমিকায় মালবিকা মোহনন। সত্যি বলতে, গল্পের এই চরিত্রটিই দুর্বল।

বাঙালি দর্শকের বাড়তি পাওনা ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে গৌতম ঘোষ। আর বলিউডের প্রাপ্তি দক্ষিণী ছবির অন্যতম শক্তিশালী অভিনেত্রী শারদাকে পর্দায় পাওয়া। একটিও হিন্দি সংলাপ নেই তাঁর মুখে। অনর্গল মালয়ালম আর ঠাস বোনা অভিনয়ে তিনি ছেয়ে রেখেছেন অনেকটা। বিষাদ ছুঁয়ে ফুটে যেন রয়েছে নরম ফুল। দেখতে দেখতে ছায়াদেবীর কথা মনে পড়ে যেতে পারে কারও কারও, এই যা!

Beyond the Clouds Ishaan Khatter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy