Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Freud

আলগা বুনন, দিগ্ভ্রষ্ট সিরিজ়

ফ্রয়েড (ওয়েব সিরিজ়) পরিচালনা: মার্ভিন ক্রেন অভিনয়: রবার্ট ফিনস্টার, এলা রুম্পফ, জর্জ ফ্রেডরিক ৪.৫/১০ প্রথমেই বলে নেওয়া প্রয়োজন, ‘ফ্রয়েড’ কোনও ডকু-ফিচার নয়। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু ফিকশনের ঘনঘটা এতটাই বেশি যে, ফ্রয়েডের মতো বর্ণিল চরিত্র ঢাকা পড়ে গিয়েছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০০:৩৬
Share: Save:

চেতন মন হিমশৈলের চুড়োর মতো। আর জলের তলায় হিমশৈলের যে বিশাল অংশ, তা হল অবচেতন। সাইকোঅ্যানালিস্ট সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের লেখনী ও তত্ত্ব সম্পর্কে যাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা রয়েছে, তাঁরা এটুকু জানেন। তবে শুধুমাত্র এই ধারণার ভিত্তিতে দর্শকের কাছে নেটফ্লিক্সের নতুন জার্মান সিরিজ় ‘ফ্রয়েড’ উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে না, পারেওনি। ফ্রয়েডের লেখনী সুবিস্তৃত। তার মধ্য থেকে টুকরো টুকরো কয়েকটি অংশ জুড়ে দিলেই সিরিজ়ের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় না।

প্রথমেই বলে নেওয়া প্রয়োজন, ‘ফ্রয়েড’ কোনও ডকু-ফিচার নয়। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু ফিকশনের ঘনঘটা এতটাই বেশি যে, ফ্রয়েডের মতো বর্ণিল চরিত্র ঢাকা পড়ে গিয়েছে। যে ভাবে ফ্রয়েডের মতো কালজয়ী ব্যক্তিত্বকে দেখানো হয়েছে, তাতে প্রথম প্রশ্নই ওঠে, তাঁর নাম দিয়ে কি একটি গড়পড়তা সিরিজ় চালানোর চেষ্টা হয়েছে?

ফ্রয়েডের লেখনীর অনুপ্রেরণায় আলফ্রেড হিচকক বানিয়েছিলেন ‘স্পেলবাউন্ড’ (১৯৪৫)। ফ্রয়েডের লেখনী নিয়ে ‘দ্য সিক্রেট প্যাশন’ (১৯৬২) ছবির চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে পরিচালক জন হাসটনের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্র। এ ছাড়া চরিত্র হিসেবেও ‘দ্য সোল কিপার’, ‘উওম্যান ইন গোল্ড’-সহ একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে ফ্রয়েডকে। কিন্তু ‘ফ্রয়েড’ সিরিজ়ের ফ্রয়েডকে ঠিক কোন আঙ্গিকে পরিচালক মার্ভিন ক্রেন দেখাতে চেয়েছেন, তা গোটা সিরিজ়ে স্পষ্ট নয়।

উনবিংশ শতকের ভিয়েনায় মানসিক বিকারগ্রস্ত পুলিশ, সেনা, রাজকুমার, ফ্রয়েডের সহকর্মী এক চিকিৎসকের অস্বাভাবিকতা এবং সর্বোপরি এক কুড়িয়ে পাওয়া রাজকুমারীর অবদমিত যৌনকামনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য দরকার পড়েছে ফ্রয়েডের বিভিন্ন তত্ত্বের। ফ্রয়েডের ‘শব্দতর্জমা’ ব্যবহার করেই আটটি এপিসোডের নামকরণ করা হয়েছে, ‘ট্রমা’, ‘টোটেম অ্যান্ড ট্যাবু’, ‘ডিজ়ায়ার’, ‘রিগ্রেসন’ ইত্যাদি।

কিন্তু মার্ভিনের সঙ্গে স্টিফান ব্রুনার এবং বেঞ্জামিন হেসলার যে ভাবে কনটেন্ট তৈরি করেছেন, তাতে ফ্রয়েডের ‘হিপনোটিজ়ম’ ছাড়া আর কোনও এক্সপেরিমেন্টই জোরালো ভাবে ফুটে ওঠেনি। উপরন্তু থ্রিল, অলৌকিক কার্যকলাপ, মিশরীয়দের আদিম প্রথা, ক্যানিবলিজ়ম, অপেরার মতো উপাদান দিয়ে যে ভাবে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে চিত্রনাট্যের ফাঁকফোকরই প্রকট হয়ে উঠেছে। হরর জ়ঁরে জার্মান পরিচালক মার্ভিনের নাম রয়েছে। তবে এই সিরিজ়ে তাঁর ‘হরর’ অনেক ক্ষেত্রেই ‘কমিক এলিমেন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্তমাখা উলঙ্গ নারী-পুরুষ, ঘোড়া-সহ একাধিক পশু সিরিজ়ের মুখ্য চিত্রকল্প।

এই সিরিজ়ে ফ্রয়েডের বাস্তব জীবনের উপাদান যে একেবারে নেওয়া হয়নি, তা নয়। তবে ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের এমন মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে যে, ফিকশনই বেশি নজর কেড়েছে। ফ্রয়েডের লেখায় ‘ঘোড়া’, ফ্যালাস অর্থাৎ পুরুষ যৌনাঙ্গের ব্যবহার বারবার উঠে আসে। এই সিরিজ়েও তা-ই। আবার চিকিৎসকের সঙ্গে রোগিণীর যৌন সঙ্গমের ইচ্ছেরও উল্লেখ রয়েছে ফ্রয়েডের লেখায়। তারও প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এই সিরিজ়ে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির রাজনৈতিক উষ্মা, যুদ্ধক্ষেত্রে ও তার বাইরে সেনা-পুলিশের হিংস্র মানসিকতা সিরিজ়ের মূল সুর। সে সবই অলৌকিক আচার অনুষ্ঠানে ম্রিয়মাণ। অলৌকিকতায় নেটফ্লিক্সের ‘দ্য উইচার’ সিরিজ়ের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই সিরিজ়টি।

ফ্রয়েডের চরিত্রে রবার্ট ফিনস্টার বেশ ভাল। সুপুরুষ চেহারার অভিনেতাকে ফ্রয়েডের চেয়েও সুদর্শন দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই সিরিজ়ে। ইনস্পেক্টর কিস-এর চরিত্রে জর্জ ফ্রেডরিক এবং ফ্লরার চরিত্রে অভিনেত্রী এলা রুম্পফ নজর কেড়েছেন। ফরাসি হরর ড্রামা ‘র’-এর জন্য বিখ্যাত এলা।

সিনেম্যাটোগ্রাফার মার্কুজ় নেসট্রয়ের লেন্সে ভিয়েনা এবং হরর এলিমেন্ট দেখতে মন্দ লাগেনি। তবে যাঁর নামে এ সিরিজ়, তাঁকে বাদ দিয়ে বাকি উপাদানেই বেশি মন দিয়েছেন পরিচালক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Freud Robert Finster Sigmund Freud Hollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE