Advertisement
E-Paper

‘গোল্ড’কে সোনা দেওয়া গেল না

সেট, মেকআপ এবং পোশাকে নজর দেওয়া হয়েছে খুঁটিয়ে। সংলাপের মতো আলোর ব্যবহারে নাটকীয়তা এবং দক্ষ ফ্রেমিং চোখ এড়াবে না। দেশভাগ, দাঙ্গার পরিস্থিতি পরিমিত ভাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সঙ্গীতের অতিরিক্ত ব্যবহার ছবির তাল কেটেছে।

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:১৯

গোল্ড

পরিচালনা: রিমা কাগতি

অভিনয়: অক্ষয়কুমার, মৌনী রায়, কুণাল কপূর

৫.৫/১০

সাল ১৯৪৮, সবে এক বছর ভারত স্বাধীন হয়েছে। দেশভাগের ক্ষত তখনও দগদগে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় হকি টিম অলিম্পিকে যোগ দিয়েছিল এবং সোনা জিতেছিল। ব্রিটেনের মাটিতেই ব্রিটেনকে হারিয়ে ভারতের পতাকা উড়েছিল, বেজে উঠেছিল জাতীয় সঙ্গীত। সেই সময়ে ভারতের নড়বড়ে পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও শান্তির বারির মতো কাজ করেছিল এই সোনা। আর সেই পটভূমিকায় তৈরি হয়েছে রিমা কাগতির ‘গোল্ড’।

তবে এই ইতিহাস মেলাতে যাবেন না ছবিতে। পরিচালক ঘটনাটি অবলম্বনে ছবি তৈরি করেছেন। দু’-একটি চরিত্র ছাড়া বাকি সব কাল্পনিক। যেমন ছবির মেরুদণ্ড তপন দাসের চরিত্রটি (অক্ষয়কুমার)। ভারতীয় হকি ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত এই বাঙালি ভদ্রলোক যেমন সুরাসক্ত, তেমনই হকি-খ্যাপা। হকির জন্য সে ফেডারেশনের কর্তাদের পায়ে পড়তে পারে, স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে অর্থ জোগাড় করতে পারে, খুঁজে খুঁজে সেরা খেলোয়াড় আনতে পারে, বিশ্বযুদ্ধের জন্য অলিম্পিক বন্ধ হলে মদে ডুবে যেতে পারে, আবার দুশো বছরের গোলামির প্রতিশোধ নিতে এক দিনে মদ ছাড়তেও পারে! ১৯৩৬-এ বার্লিনের অলিম্পিকে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া হকি টিমকে ড্রেসিং রুমে ভারতীয় পতাকা দেখিয়ে রক্ত গরম করা বক্তৃতা দিয়ে সম্রাট (কুণাল) ওরফে ধ্যানচাঁদ-সহ গোটা দলের মনোবল বাড়িয়ে দেয় তপন। জেতার পরে যখন ব্রিটেনের জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠে, তপন কোটের পকেট থেকে ভারতের পতাকা কিছুটা বার করে খেলোয়াড়দের নজর টানে। কানায় কানায় আবেগে ভরা দৃশ্য। এমন দৃশ্য ছবির পরতে পরতে। অক্ষয়ের মতো শক্তিশালী অভিনেতাকে একেবারে নিংড়ে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। কুণাল, সানি কৌশল, অমিত সাধ... সকলে তাঁদের সেরাটা উগরে দিয়েছেন। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে সানির অভিনয় প্রশংসনীয়। বোঝা যায়নি যে অভিনেতারা বাস্তবে খেলোয়াড় নন! এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য তাঁদের ট্রেনার অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় সন্দীপ সিংহের। তবুও খেলার দৃশ্যগুলো স্রেফ দৃশ্য হিসেবেই রয়ে গেল। ‘লগান’ বা ‘চক দে’র মতো দর্শক ঢুকে পড়তে পারলেন না দৃশ্যগুলোয়। উত্তেজনায় ফেটে পড়ল না প্রেক্ষাগৃহ।

বরং সেট, মেকআপ এবং পোশাকে নজর দেওয়া হয়েছে খুঁটিয়ে। সংলাপের মতো আলোর ব্যবহারে নাটকীয়তা এবং দক্ষ ফ্রেমিং চোখ এড়াবে না। দেশভাগ, দাঙ্গার পরিস্থিতি পরিমিত ভাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সঙ্গীতের অতিরিক্ত ব্যবহার ছবির তাল কেটেছে।

মুম্বইনিবাসী এবং ঠিক হিন্দি বলা তপনের উচ্চারণে বাঙালিয়ানা জোর করে ঢোকানো হাস্যকর। বাঙালি বোঝানোর জন্য ‘গন্ডগোল’, ‘উরি বাবা’ ইত্যাদি শব্দগুলোর ব্যবহার বড্ড ক্লিশে! তার উপরে বাংলা উচ্চারণ হিন্দি ঘেঁষা। তপনের গিন্নি মনোবীণার চরিত্রে মৌনী জমিয়ে দিলেও তাঁর বাংলা সংলাপে ‘স্বপ্ন’কে ‘স্বপ্না’ উচ্চারণ কানে লাগে। সেই সময়ের ঘরোয়া বাঙালি স্ত্রীর মুখে ‘মাছ’-এর বদলে ‘ফিশ’ শব্দটা সত্যিই ফিশি!

এই রকম কিছু ‘খটকা’ এড়িয়ে গিয়ে ‘গোল্ড’ একরাশ আবেগ তৈরি করে। যা সাময়িক ভাবে বুঁদ করতে পারে, কিন্তু ইতিহাস তৈরি করতে পারে না। সব শেষে ‘গোল্ড’ একটা কথা মনে করিয়ে দিল। ৩৮ বছর আগে অলিম্পিক থেকে ভারতীয় হকি দল শেষ সোনা এনেছে!

Movie Gold
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy