Advertisement
E-Paper

‘শোক জীবনকে ইতিবাচক ভাবেও দেখতে শেখায়’

সোনালির বিশ্বাস, প্রতি বছর তাঁর সন্তান ঈশান নিজের জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে মাকে উপহার দেয়।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০০:১০
পরিচালক সোনালি বসু।

পরিচালক সোনালি বসু।

ছোট চুল, অগোছালো আঁচল, বড় লাল টিপ আর একগাল প্রাণখোলা হাসি নিয়ে এগিয়ে এলেন চিত্র পরিচালক সোনালি বসু। এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলেন সুদূর নিউ ইয়র্কবাসী পরিচালক। সম্প্রতি শেষ হয়েছে তাঁর আগামী ছবি ‘দ্য স্কাই ইজ় পিঙ্ক’-এর শুটিং। অক্টোবরে মুক্তি পাওয়ার কথা। ছবির চূড়ান্ত নাম এখনও স্থির হয়নি। চিত্রনাট্য লেখার সময় থেকেই প্রিয়ঙ্কা চোপড়া তাঁর প্রথম পছন্দ। ‘‘ফারহান আখতারের কথা গোড়াতেই ভেবেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অভিষেক বচ্চনকে নেওয়া হয়। কিছু দিন শুটের পরে অভিষেক ছবিটি ছেড়ে দেয়। তখন আবার ফারহানই স্থির হয়। আর প্রিয়ঙ্কাকে পাওয়া তো আমার কাছে উপহার।’’

সোনালির বিশ্বাস, প্রতি বছর তাঁর সন্তান ঈশান নিজের জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে মাকে উপহার দেয়। ‘‘গত বছরেও ওর জন্মদিনে প্রথম মেসেজ আসে প্রযোজকের কাছ থেকে। প্রিয়ঙ্কার চিত্রনাট্য পছন্দ হয়েছে, সে দেখা করতে চায়। তখনই বুঝেছি যে, এটা ঈশানের গিফ্‌ট। দুর্ঘটনায় খুব খারাপ ভাবে ঈশানকে হারিয়েছি। কিন্তু ও আমার সঙ্গে এখনও আছে,’’ বললেন সোনালি।

পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত আইশা চৌধুরী এই ছবির মুখ্য চরিত্র। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান আইশা। তাঁর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়ঙ্কা। ছবিতে আইশাকে হারানোর দৃশ্যে অভিনয় করার পরেই প্রিয়ঙ্কা ছুটে চলে যান পরিচালকের কাছে। সোনালিকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট সোনালি, সন্তান হারানোর যন্ত্রণা...’’

সদ্যযুবক সন্তান হারানোর যন্ত্রণার সঙ্গে মিশে যায় আইশার জীবনও। আইশার মা-বাবা যখন তাঁকে যোগাযোগ করেন, তখনই ছবিটি বানাবেন বলে ঠিক করেন তিনি, ‘‘আইশা আমার দ্বিতীয় ছবি ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’-এর ট্রেলার তিরিশ বার দেখেছিল। মা-বাবাকে ও শুধুই বলত, ছবি মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত যেন সে বেঁচে থাকে। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায় ও মারা যাওয়ার পরেই। সন্তান হারানো শুধু শোক বয়ে আনে না, তা ইতিবাচক ভাবেও জীবনকে দেখতে শেখায়।’’

কলকাতায় সোনালির জন্ম। নিউ আলিপুরের বুকে বড় হয়ে ওঠা... তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন অপর্ণা সেন। সোনালির প্রথম ছবি ‘আমু’র প্রস্তাব নিয়ে যান অপর্ণার কাছেই। ‘‘কিন্তু অপর্ণা মাসি তখন খুব ব্যস্ত। সময় দিতে পারল না। আমায় কঙ্কনাকে কাস্ট করতে বলল। আমি তো ভাবছি, কী জানি সে কেমন অভিনয় করে। ‘ঠিক আছে মাসি’ বলে কোনও রকমে বেরিয়ে আসি। পরে যখন ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ দেখি, আমি অবাক! সঙ্গে সঙ্গে অপর্ণা মাসিকে ফোন করে কঙ্কনাকে চরিত্রটির প্রস্তাব দিই।’’ ‘আমু’তে বৃন্দা কারাত যে চরিত্রে অভিনয় করেন, সেই চরিত্রে অপর্ণাকে কাস্ট করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। এই ছবিটি নিয়েও তাঁকে কম লড়তে হয়নি। ছবির প্রযোজক পাচ্ছিলেন না। তখন এগিয়ে আসে তাঁর দুই ছেলে। তাদের জমানো ছ’ডলার দিয়েই শুরু হয় এই ছবির ফান্ড। আমজনতার কাছ থেকেই টাকা তুলে শুরু হয় ‘আমু’র শুটিং।

এ শহর জুড়ে তাঁর নস্ট্যালজিয়া, আছে পুরনো বন্ধুবান্ধব। ভুলতে পারেন না স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার দিনগুলি। শাশুড়ির জন্য মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসেন, ‘‘বেদব্রতর (পাইন) সঙ্গে ডিভোর্স হলেও শাশুড়িকে ছেড়ে থাকতে পারিনি। বিয়ের পরে শর্টস আর স্লিভলেস টি-শার্ট পরেই মায়ের সামনে গিয়ে বলেছিলাম, আমি এ রকমই। শাঁখা-সিঁদুর পরব না। এ সব মানি না। মা আমাকে সে ভাবেই আপন করে নিয়েছিলেন।’’

কাজের মতোই তাঁর উপস্থিতি, যা নরম রোদের মতোই মিঠে।

Shonali Bose Film Director Movie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy