দুর্গার কথা ভাবলেই মনে হয় শক্তিময়ী এক নারী। নাহ্, তিনি শুধু একাহাতে সংসার সামলাচ্ছেন বলে নয়। তাঁর পূর্ণতার গুণেই এটা মনে হয়। সেই গুণ তাঁকে সর্বরূপে আলোকিত করে তোলে। তিনি আসেন, প্রকাশ হয় আলোর, সূচনা হয় উৎসবের।
মায়ের হাতে বহু অস্ত্র আমরা দেখি। পুরাণ মতে, মহিষাসুরকে বধ করতে সকল দেবতা ধ্যানমগ্ন হয়ে দেবীর আরাধনা করেছিলেন। তাই সকল দেবতার শক্তি সঞ্চিত হয়েই দেবী দুর্গার সৃষ্টি। আমরা দেখি অসুরের বুকের উপরে পা দিয়ে দুষ্টের নাশ করছেন। ‘রক্তবীজ’-এর মতো অসুরকেও মা দুর্গা নিঃশেষ করেন তাঁর ওই অপার শক্তি দিয়ে।
আমাদের সমাজের দিকে যদি তাকাই দেখি, নারীশক্তির আরাধনার পাশে এখনও ধর্ষণের খবর। বাড়ছে বই কমছে না! বিচার পেতে অনেক সময় লাগছে অনেক সময়! পৃথিবীর যে দেশগুলি সুরক্ষিত বলে চিহ্নিত, তারা যে ভাবে অপরাধীদের নির্মম শাস্তি দিয়ে থাকে আমাদের দেশেও তেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। চোখের সামনে কী কঠোর শাস্তি হতে পারে, সেটা অপরাধীরা দেখুক। সমাজে সব ধরনের অসুরের নিধন হোক। সমাজে সব মহিলারাই পাক দুর্গার মতো দৃঢ়তা, শক্তি, মনের জোর— এটাই কামনা করি। যে পুরুষেরা নারীদের সম্মান করতে পারে না, তাদের ওই রক্তবীজের মতোই যেন দশা হয়।
আরও পড়ুন:
অসুর নিধনে যমরাজ অস্ত্র দেওয়ার সময় মা দুর্গাকে দিয়েছিলেন গদা, যা ‘কালদণ্ড’ নামেও পরিচিত। এই অস্ত্র আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। দুর্গার সেই শক্তির মধ্যে মায়া, মমতার অনুভব দেখতে পাই। এই মমত্ববোধের কথা ভাবলে আমার মনে হয়, এই যে দেশের শীর্ষ আদালত মনে করল যে, কুকুরেরা ভয়ের কারণ, এটা কী করে হল? র্যাফ নামিয়ে তাদের ভ্যানে তুলে ফেলা হচ্ছে। তা হলে এই ধর্ষক, খুনিরা, যারা মেয়েদের মেরে ফেলছে, ধর্ষণ করছে, চাইলে তাদেরও র্যাফ নামিয়ে তুলে নিতে পারেন না মা দুর্গা!
মা দুর্গা যদি আজকের দিনে থাকতেন, যদি এগুলো দেখতে পেতেন, আমার মনে হয় সবার আগে ক্রূরতা, নীচতা, ক্ষমতার আস্ফালন, এ সমস্ত ধ্বংস করতেন। কুকুরেরা যেহেতু কথা বলতে পারে না, তাই আমরা নিজেরাই ভেবে নিয়েছি যে ওরা ‘থ্রেট’। কিন্তু কী ভাবে, সেটা জানি না। এ দিকে ধর্ষক, হেনস্থাকারীরা দিব্য আছে। তারা জামিন পেয়ে যায়। অথচ অবোলা কুকুরকে দত্তক নেওয়াতেই সমস্যা। আদালতকে ধন্যবাদ, অন্তত সেই নির্দেশের বদল হয়েছে। তবে প্রশাসনের এতে আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত। গা-ছাড়া মনোভাবের জন্যই কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। ওদের বন্ধ্যাত্বকরণের প্রয়োজন। আজ আমি ওদের ‘স্টেরিলাইজ়েশন’ করাই, ‘ভ্যাকসিনেশন’ করাই। আমার লোক আছে। কিন্তু এটা তো আমার কাজ নয়! এটা যাদের কাজ তাদেরই করতে হবে।
আজ যদি আমার ছেলেমেয়ে অশিক্ষিত হয়, দোষটা কার? আমার ছেলেমেয়ের, না আমার? তখন মনে হয় যে, মা দুর্গা যদি কিছু একটা করেন।