‘ইষ্টিকুটুম’য়ের বাহা: রণিতা।
পলাশবনীর বাহামণি সোরেন আবার শিরোনামে।
এবং ‘মুখার্জি পরিবার’য়ের পর এ বার বাহা ওরফে রণিতা দাসকে ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত বাংলা টেলিভিশনের পৃথিবী।
এক দিকে স্টার জলসা। অন্য দিকে কালার্স বাংলা। ঝামেলার শুরু গত বছরের অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে যখন স্টার জলসার ‘ইষ্টিকুটুম’ ছেড়ে হঠাৎ চলে যান রণিতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, পড়াশোনার চাপ এবং শরীর ভাল নেই বলেই তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয় এ সিরিয়াল।
এই খবর পাওয়ার পর প্রচুর জল গঙ্গা দিয়ে বয়ে যায়। রণিতার জায়গায় আসেন নতুন মুখ। আকস্মিক ভাবে রণিতার ছেড়ে যাওয়াতে স্টার জলসা চ্যানেল কোর্টে কেসও করে রণিতা দাসের নামে, যার মীমাংসা এখনও হয়নি। এর মধ্যেই ইটিভি নাম বদল করে কালার্স বাংলা হিসেবে রিলঞ্চড হয়। সেই চ্যানেলে একটি নন-ফিকশন শো-তে সঞ্চালক হিসেবে রণিতা ইতিমধ্যেই দু’টো পর্বের শ্যুটিংও করে ফেলেছেন বলে শোনা যায়।
এবং এখােনই ঝামেলার শুরু।
ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসার্স (ডব্লুএটিপি) একটি চিঠি লেখে সব চ্যানেলের বড় কর্তাদের। সেই চিঠিতে স্পষ্ট লেখা আছে কোনও চ্যানেল এই বছর ডিসেম্বর অবধি রণিতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে না তাঁর ‘আনপ্রফেশনাল কনডাক্ট’-এর জন্য। এবং এখানেই সংঘাত।
‘‘রণিতা যে ভাবে হঠাৎ করে স্টার জলসাকে বিপদে ফেলে সিরিয়ালটা ছেড়ে দিয়েছিল, সেটা অন্যায়। প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন যখন লিখেই দিয়েছে ডিসেম্বর অবধি ও কাজ করতে পারবে না, তখন কালার্স বাংলা ওকে কী করে শো অফার করে, এটাই বুঝছি না। ওকে দিয়ে শো করালে আগামীকাল সব আর্টিস্ট এ রকম করে পার পেয়ে যাবে,’’ বলছিলেন ডব্লুএটিপি-এর এক কর্তা।
অন্য দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালার্স বাংলার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই চিঠি তো লেখা হয়েছে ১৬ এপ্রিল যখন ডব্লুএটিপি জেনেছে ও আমাদের শো করছে। এত দিন কেন ওরা চুপ করে বসেছিল? আর রণিতার সঙ্গে তো স্টার জলসার ঝামেলা, সেটা নিয়ে তো স্টার কেস করেছে। সেখানে প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন কী করে একজন আর্টিস্টকে আটকে রাখে?’’ বক্তব্য তাঁর।
যদিও এ প্রসঙ্গে কালার্স বাংলার তরফ থেকে সুজয় কুট্টি কিছুই জানাতে চাননি ‘নো কমেন্টস’ ছাড়া।
অন্য দিকে স্টার কর্তারাও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা সাব-জুডিস। এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না।’’
এ দিকে রণিতা কী বলছেন?
‘‘আমি পুরো ব্যাপারটা দেখে দুঃখিত। ‘ইষ্টিকুটুম’ করতে করতে আমার স্পাইনের প্রবলেম হয়। পলিসিস্টিক ওভারি ধরা পড়ে। থাইরয়েডের প্রবলেম হয়। আমার পক্ষে মেগাসিরিয়ালের চাপটা নেওয়া আর সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া পরীক্ষাও ছিল। সে জন্যই আমি কিছু দিনের ব্রেক চেয়েছিলাম,’’ বলেন রণিতা।
কিন্তু এ ব্যাপারে তো স্টার আপনার বিরুদ্ধে কেসও করেছে?
‘‘হ্যাঁ, স্টারের সঙ্গে আমার কেস চলছে। কিন্তু সেটা তো আমার আর স্টারের মধ্যে। ওদের সঙ্গে বসে কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চাই। কিন্তু যে প্রোডাকশন হাউজ ‘ইষ্টিকুটুম’ করত, সেই ম্যাজিক মোমেন্টস-এর শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় কেন আমার কেরিয়ারের ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন, আমি জানি না। আমার ও আমার বাড়ির লোকের শরীর খুব খারাপ। কারও যদি কিছু হয়, তার পুরো দায়িত্ব শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্ক্রিপ্ট রাইটার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের,’’ স্পষ্ট বক্তব্য রণিতার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আর্টিস্ট, আমি কাজ করতে চাই। শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন কেন আমার কেরিয়ারের এই ক্ষতি করতে চাইছে, জানি না!’’ বলেন রণিতা। এ ব্যাপারে ফোন করা হলে শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ যা বলার প্রোডিউসার্স গিল্ড বলবে।’’
রণিতাকে নিয়ে নজিরবিহীন এই টানাটানি যেন আশির দশকের কলকাতার ময়দানে কৃশানু-বিকাশের দল বদলের উত্তেজনার মতোই।
সত্যি, ধন্যি মেয়ে বটে ‘বাহামণি’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy