Advertisement
E-Paper

সময়ের অগভীর দলিল

মধুর ভান্ডারকরের ‘ইন্দু সরকার’ তেমনই এক মানুষের গল্প। যে ব্যক্তির গল্পের মধ্য দিয়ে মধুর রাষ্ট্রের ছবি দেখাতে চেয়েছেন। ছবিটা চার দশক আগেকার। ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার সময়ে দিল্লির এক পরিবারের গল্প।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১১:০০

ইন্দু সরকার

পরিচালনা: মধুর ভান্ডারকর

অভিনয়: নীল নীতিন মুকেশ, কীর্তি কুলহারি, টোটা রায়চৌধুরী

৫/১০

ব্যক্তি আর রাষ্ট্রের সম্পর্ক জটিল। রাষ্ট্র সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান। তবে ব্যক্তিরও কিছু ক্ষমতা আছে। হোক না সেই ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু ব্যক্তি সেই সীমাকে মুছে ফেলার শক্তি রাখে। যখন এক ব্যক্তিমানুষের পাশে দাঁড়ায় আর একজন, তার পাশে আর একজন... রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তির বিরুদ্ধে প্রাচীর তোলে সেই সব ব্যক্তিমানুষের বন্ধন।

মধুর ভান্ডারকরের ‘ইন্দু সরকার’ তেমনই এক মানুষের গল্প। যে ব্যক্তির গল্পের মধ্য দিয়ে মধুর রাষ্ট্রের ছবি দেখাতে চেয়েছেন। ছবিটা চার দশক আগেকার। ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার সময়ে দিল্লির এক পরিবারের গল্প।

ছবির মুখ্য চরিত্র ইন্দু (কীর্তি কুলহারি) অনাথ। তার তোতলামির জন্য ছোট থেকেই উপেক্ষিতা ইন্দুর বিয়ে হয় নবীন সরকারের (টোটা রায়চৌধুরী) সঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী নবীন তার দারিদ্রভরা অতীত ভুলে যেতে যেনতেন প্রকারেণ ধনী হতে চায়। সেই অদম্য ইচ্ছের জোরেই উপরওয়ালাদের খুশি করে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে সে। মন্ত্রী তাকে জানিয়ে দেন, জরুরি অবস্থার ‘মওকায়’ পকেট ভারী করে নিতে।

ইন্দুর লক্ষ্য ছিল নবীনের কাছে আদর্শ স্ত্রী হওয়া। তবে জরুরি অবস্থার সময়কার একটা ঘটনা দু’জনের জীবনের মোড় বদলে দেয়। দিল্লির তুর্কমান গেটের কাছে সরকারি নির্দেশে উচ্ছেদ চলাকালীন সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায় ইন্দু। সে উদ্ধার করে বাড়িতে আনে অনাথ দুই ভাইবোনকে। এই থেকেই স্বামী-স্ত্রীর সংঘাত শুরু। নবীনের দফতরের নির্দেশেই ওই উচ্ছেদ অভিযান। ইন্দু তার প্রতিবাদ করলে সে জানিয়ে দেয়, জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে তার বাড়িতে কিছু বলা যাবে না। সেখান থেকেই ইন্দুর লড়াই। সে প্রতিবাদ করে স্বামীর বিরুদ্ধে, যে আসলে রাষ্ট্রেরই প্রতিরূপ।

মধুর তাঁর আগের ছবি ‘পেজ থ্রি’, ‘ফ্যাশন’, ‘কর্পোরেট’, ‘হিরোইন’ ইত্যাদিতে সমাজের নানা ক্ষেত্রের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সেই ছবিগুলিতে যে সমস্যা ছিল, তা এখানেও রয়েছে। সবটাই অতি সরলীকরণ। জরুরি অবস্থার রাজনীতি ও ক্ষমতার নাগপাশকে বোঝাতে মধুর দেখিয়েছেন, কী ভাবে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বাড়িতে বসে দেশ চালাচ্ছেন। যে সময়টা আজকের অধিকাংশ দর্শকের কাছে একেবারেই অচেনা, তাকে পরদায় ধরার জন্য যে তথ্য, গভীরতার দরকার ছিল, ছবিতে তার বড় অভাব। তাই ক্ষমতার অলিন্দের চেহারাটা কেবল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তথা ‘চিফ’-এর কিছু সংলাপেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

সেই ক্ষমতার থাবা বাস্তবে কী ভাবে দেশের আমজনতাকে আঘাত করেছিল, তা বোঝাতে মহল্লায় পুলিশ নিয়ে ঢুকে জোর করে নির্বীজকরণ, সংবাদপত্রের অফিসে পুলিশের নজরদারি দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেই সব দৃশ্যের সংখ্যা, গভীরতা আরও বেশি হলে দর্শকের সেই সময়টাকে বুঝতে সুবিধে হতো।

ছবির দ্বিতীয় ভাগে ইন্দুর জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া। বিপরীতে রয়েছে ইন্দু ঘর ছেড়ে চলে আসার পরে টোটার রাগ এবং পরে অসহায়তা। নবীন-ইন্দুর সম্পর্কের দৃশ্যগুলো সুন্দর হলেও দুর্বল চিত্রনাট্যের জন্য সেখানেও বিরক্তিকর ছন্দপতন। বিশেষত, একটি জায়গায় বিক্ষোভের পরে ইন্দু ও অন্য আন্দোলনকারীদের পালানোর দৃশ্য থামিয়ে হঠাৎ দীর্ঘ কাওয়ালি গানের মানে বোঝা দায়!

ইন্দুর চরিত্রে কীর্তি কুলহারির অভিনয় অসাধারণ। ‘চিফ’ নীল নীতিন মুকেশও খুব ভাল। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন টোটা রায়চৌধুরী। চরিত্রের নানা শেড ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণভাবে। বলিউডে টোটাকে আরও বেশি করে দেখার আশা জাগায় এই ছবি। হল থেকে বেরোনোর পরে অনু মালিকের মিউজিক মনে থাকে না। মনে থাকে সঞ্জয় ছেল-এর সংলাপ।

ছবিতে প্রাপ্তি একটাই। তা হল, ইতিহাসকে ধরতে চেয়েও এ ছবি বর্তমানকে মনে পড়িয়ে দেয়। ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’, ‘নকশালের’ মতো শব্দ তো রয়েইছে। তা ছাড়া কে কী বলবে বা করবে তার উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ— উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরি অবস্থা পর্দায় দেখতে দেখতে দর্শকের আজকের দিনের কথা মনে পড়বেই। সেটাই পরিচালকের কৃতিত্ব। কারণ, ‘‘হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেল্ফ, ফার্স্ট অ্যাজ ট্র্যাজেডি, সেকেন্ড অ্যাজ ফার্স।’’

Film Review Indu Sarkar Madhur Bhandarkar Neil Nitin Mukesh Tota Roy Chowdhury Kirti Kulhari নীল নীতিন মুকেশ কীর্তি কুলহারি টোটা রায়চৌধুরী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy