Advertisement
১১ মে ২০২৪
Entertainment news

‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে যদি অভিনয় করতে পারি, বচ্চন স্যারের সঙ্গে নয় কেন?’

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বোমা ফাটালেন। তার পরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন খড়কুটোর ‘পটকা’ ওরফে অম্বরীশ ভট্টাচার্য, বিয়ে না করলে এ বার নাকি রাস্তাতেই আক্রান্ত হতেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য! তিনি কবে বিয়ে করছেন? সেটাও জানালেন আনন্দবাজার ডিজিটালকেসাক্ষাৎকারের শুরুতেই বোমা ফাটালেন। তার পরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন খড়কুটোর ‘পটকা’ ওরফে অম্বরীশ ভট্টাচার্য, বিয়ে না করলে এ বার নাকি রাস্তাতেই আক্রান্ত হতেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য! তিনি কবে বিয়ে করছেন? সেটাও জানালেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে

খড়কুটোর ‘পটকা’ ওরফে অম্বরীশ ভট্টাচার্য।

খড়কুটোর ‘পটকা’ ওরফে অম্বরীশ ভট্টাচার্য।

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ১৭:২৫
Share: Save:

অনির্বাণ ভট্টাচার্য থিতু হচ্ছেন...

অম্বরীশ: খুব ভাল করছে অনির্বাণ। নইলে কোনদিন রাস্তায় আক্রান্ত হত। যে হারে অনুরাগিণীর সংখ্যা বাড়ছে! অনির্বাণ দুমদাম রাস্তায় নেমে পড়েন। স্টারডম মানেন না। এই যে বিয়ের কথা ঘোষণা করলেন, এবার উনি নিরাপদ।

আপনি? না হয় লুঙ্গি ছেড়ে পাজামা-ই ধরবেন...

অম্বরীশ: কেন একটা মেয়েকে যেচে যন্ত্রণা দেব বলতে পারেন? আমি খুব একটা ভাল স্বামী হতে পারব না, জানেন। ওই জন্যেই তো আগের তিনটি সম্পর্ক টিকল না! তার চেয়ে এই বেশ ভাল আছি। আবার যেন এটাও ভাববেন না, সারা জীবন এমনটাই থাকব। ধরুন বিকেলেই দুম করে প্রেমে পড়ে গেলাম। তখন বিয়ে করে নেব।

বদলে ছোট পর্দায় আপনি আবার একনিষ্ঠ ‘ঠাকুরপো’ চরিত্রে...

অম্বরীশ: (হেসে ফেলে) যা বলেছেন। তবে ‘খড়কুটো’র দুই বউদিই শুধু নয়, পরের জেনারেশন যেমন, গুনগুন, সৌজন্য, আরও যাঁরা আছেন-- তাঁরাও ‘পটকা’র ভক্ত। পটকা আসলে সব প্রজন্মের কাছেই জলবৎ তরলং। ওই জন্যেই বোধ হয় দর্শকপ্রিয়।

বিহাইন্ড দ্য সেটে?

অম্বরীশ: কোনও নড়চড় নেই। সেখানেও একই ছবি। সবার সঙ্গে এক মেকআপ রুম শেয়ার করছি। খাচ্ছি, আড্ডা মারছি। ভুল হলে ধরিয়ে দিচ্ছি। খুনসুটি করছি। তার একটা প্রতিফলন থাকবেই। আমি দূরত্ব রেখে চললে ওঁরা কিন্তু অভিনয়ের সময়েও সহজ হতে পারতেন না। দরকারে গায়ে হাত দিয়ে সংলাপও বলতে পারতেন না। দূরত্ব নেই বলেই ‘পটকা’ সবার প্রিয়।

‘হাসিওয়ালা কোম্পানি’তেও রয়েছেন। এভাবেই হাসতে হাসতে ‘ঠাকুরপো’ হয়ে জীবন কাটিয়ে দেবেন?

অম্বরীশ: কমেডির কথা বলছেন তো? খুব মন্দ নয় তো বিষয়টা! রবি ঘোষ, তুলসী চক্রবর্তীও কৌতুকাভিনেতা হয়েই জনপ্রিয়। আবার অন্য স্বাদের চরিত্রও করেছেন। আমিও করি সুযোগ পেলেই। আর ঠাকুরপো-র চরিত্রে এখনও আমায় মানায় তাই ডাক পাই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ‘বাবা’, ‘দাদু’-- সবই হব।

আরও পড়ুন: মাছি তাড়াচ্ছে হল, বন্ধ হয়ে গেল মেনকা, প্রিয়া, প্রাচী, জয়ার মতো সিঙ্গল স্ক্রিন

আবার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রদীপ সরকারের বিজ্ঞাপনেও দেখা দেবেন...

অম্বরীশ: ওটা অতি-ভাগ্য। না চাইতেই অ-নে-কটা পাওয়া। জীবনে কোনও দিন স্বপ্নই দেখিনি বিগ বি-র সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করব! সেটাও দেখলাম হয়ে গেল।

আজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতি....

অম্বরীশ: সত্যিই তাই। প্রদীপদা যখন অফার দিলেন, আমি টেনশনে ঘামছি। তার পরেই নিজেকে বোঝালাম, আমি তো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছি। উনিও তো বিশ্ববিখ্যাত। ওঁর সঙ্গে যদি পারি, বচ্চন স্যারের সঙ্গেও পারব। এই কথা পরে সৌমিত্র জেঠুর মেয়ে পৌলমী বসুকেও বলেছিলাম। প্রচণ্ড হেসেছিলেন শুনে।

আরও পড়ুন: নিজের ভুলেই স্ট্রিট ডান্সারের উত্থান ঘটান মিঠুন, পরে তাঁকেই টক্কর দেন গোবিন্দ!

তার পর?

অম্বরীশ: এই মন নিয়ে পরের দিন বলিউড। বচ্চন স্যারের মুখোমুখি। সেদিন ওঁর মনমেজাজ ঝরঝরে ছিল। নিজেই ডেকে কত আড্ডা মারলেন। বাদল সরকার, শম্ভু মিত্র সবার কথা বললেন। এরই ফাঁকে শ্যুটিংটাও হয়ে গেল। সব মেটার পরে আবার কাঁপুনি, ওরে বাবা! আমি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করে ফেললাম!

টলিউডে নামডাক আরও বাড়ল?

অম্বরীশ: একেবারেই না। যেমন ছিলাম তাই আছি। তবে কাছের মানুষেরা খুশি হয়েছিলেন।

দূরের মানুষেরা জ্বলেছিলেন?

অম্বরীশ: (হাসি) আমার দূরের মানুষ কেউই নেই। সবাই বেশ ভালই বাসেন। ফলে, জ্বলা-পোড়ার কোনও গন্ধ পাইনি।

দেখতেও মন্দ নন। চেহারাটাও টোনড হলে... কেউ কটাক্ষ করেছেন?

অম্বরীশ: নিশ্চয়ই করেন। অবশ্যই সবটাই আড়ালে। সেটাই স্বাভাবিক। আমি হলেও করতাম। তবে প্রথম ধারাবাহিক ‘রাজা গজা’য় আমার মোটা চেহারাই হিট। তাই হয়তো সামনাসামনি করেন না। আর অত পরিশ্রম আমার ধাতে নেই। কিছুই হব না, করব না করতে করতে অভিনেতা হয়ে গিয়েছি ঘটনাচক্রে। আবার টোনড হব!

হলে ‘ঠাকুরপো’-র বদলে নায়ক হতেন। সুন্দরী নায়িকারা পর্দায় আপনার চারপাশে থাকতেন...

অম্বরীশ: তাতে আমার অনেক ক্ষতি হত। এক, বুম্বাদা থেকে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত নায়কদের সঙ্গে আমার ভীষণ ভাল বন্ধুত্ব। সেটা আর থাকত না। সারাক্ষণ রেষারেষি চলত। ওঁরা কাজ পেতেন না। দুই, ছবি হিট হলে প্রযোজক আর ফ্লপ হলে আমার কাঁধে দায় চাপত। প্রোডিউসার ফোন করে যা-তা বলতেন। তিন, নায়িকাদের ‘সঙ্গ’ ভীষণ দামি! আমার অকারণ খরচ বেড়ে যেত। তার চেয়ে ‘বউদি’-দের নিয়েই তোফা আছি। কোনও খরচা নেই। উল্টে তাঁরাই খরচা করেন আমার পিছনে।(হো হো হাসি)

তা-ও দুপুর ঠাকুরপো হলেন না...!

অম্বরীশ: ‘সিজন ২’-এ ডাক পেয়েছিলাম এসভিএফের থেকে। কাজের চাপে হয়ে উঠল না। তবে বউদিরা আমায় দুপুরে ডাকেন তো! পেট ভরে খাওয়াদাওয়া করার জন্যে। আমি যথেষ্ট খাদ্যরসিক।

বাবা অবনী ভট্টাচার্য সাংবাদিক। আপনি সেটাও হতে পারতেন?

অম্বরীশ: (সিরিয়াস গলায়) তার জন্যও প্রচুর পড়াশোনা, দৌড়ঝাঁপ করতে হত। বাবাকে দেখেছি, যেমন সারাক্ষণ ছুটতেন তেমনি বড়-ছোট নানা লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করে আপডেটেড থাকতেন। তখন কম্পিউটার, গুগল, কিচ্ছু ছিল না। এত ধকল আমার সইবেই না!

বাবা খুশি?

অম্বরীশ: আশ্বস্ত হয়েছেন, ছেলেটা বয়ে গেল না এটা দেখে। কারণ, বাবা বন্দুক চালানো শেখাতে গিয়েছেন। আমি ফেল মেরেছি। বাবা পড়াশোনায় সেরা করতে চেয়েছেন। আমি তাতেও গোল্লা। আরও অনেক কিছুই চেয়েছিলেন। হতে পারিনি। শেষে অভিনেতা হওয়ার পর একটু নাম-ডাক-অর্থ হতে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন।

বলিউডে শাহরুখ খানের সঙ্গেও অভিনয় করার কথা শোনা গিয়েছিল। আরও কিছু কাজ বোধ হয় হওয়ার ছিল। কোনও আপডেট?

অম্বরীশ: করোনায় সবটাই স্তব্ধ। কবে হবে, কোনকালে হবে, কিচ্ছু জানি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নতুন কিছুতে হাত দেওয়ার কথা ভাবছেনই না কেউ।

নাটক, যাত্রা, ছোট পর্দা, বড় পর্দা-- সবেতেই অভিনয় করেছেন। কোনটায় স্বচ্ছন্দ? কোনটা চ্যালেঞ্জের?

অম্বরীশ: স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করে পরিচালকের উপর। পরিচালক ভাল হলে সেখানে আমি নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারি। সেটা যে মাধ্যমই হোক। আর চ্যালেঞ্জ বেশি মেগায় অভিনয়ে। একদিকে রান্না হচ্ছে। একদিকে হয়তো ঝগড়া। একদিকে টিউশন চলছে। এত কিছু পেরিয়ে দর্শককে বসিয়ে রাখা। তাঁদের ইচ্ছে পূরণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেটায় যখন সফল হই, ভাল লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE