গত বছর সেরা সঙ্গীত পরিচালকের প্রায় সব পুরস্কারের ঠিকানাই ছিল আপনার বাড়ি। কিন্তু আমার প্রশ্ন, একদা বন্ধু, বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রীতমকে হারাতে পেরে আনন্দটা কি বেশি হচ্ছে?
এই রে! না না একেবারে নয়। হ্যাঁ প্রীতমদা এক সময়ের খুব ভাল বন্ধু ছিল। আমরা একসঙ্গে সুর করতাম। পরে দেখলাম আমাদের দু’জনের মিউজিকের টেস্ট দু’রকম। তাই আলাদা হয়ে গিয়েছি। কিন্তু সত্যি বলছি কোনও ঝগড়া নেই আমাদের মধ্যে। প্রীতমদাকে এখনও ভীষণ রেসপেক্ট করি। আর আমি না, ওই চুলোচুলি প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসও করি না। বিরাট কি প্রতিদিন সেঞ্চুরি করে নাকি! এই তো সে দিন শান্তনুদা (মৈত্র)-র সঙ্গে আড্ডা হচ্ছিল। ও বলছিল, ‘কাল কী হবে কে জানে। কাজ করে যাচ্ছি, এর থেকে বড় আর কী হতে পারে!’ আমিও সেটা বিশ্বাস করি। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করাটাই বড় কথা। আমি তো হিন্দিতে কাজ করতেই চাইনি। কিন্তু ২০০৪-এ ঢুকে গেলাম... বোম্বেতে যে এখনও কাজ করে যাচ্ছি, সেটাই তো বড় ব্যাপার।
আপনার কথায় মনে পড়ল, কিছু দিন আগেই আনন্দplus-এর এক সাক্ষাত্কারে শান দুঃখ করেছিলেন এখন তাঁকে আর কেউ ডাকে না! অভিজিত্ও একই কথা বলেন। এ সব শুনলে বাঙালি হিসেবে কষ্ট হয় না?
(একটু ভেবে) আমার কিন্তু মনে হয়, শানদার এ সব নিয়ে দুঃখ করার কিছু নেই। ওরা তো ওদের সময়ে গান গেয়েছে। আর পুরনোদের তো নতুনদের জন্য জায়গা করে দিতেই হবে। একদিন আমিও সরে যাব। আমার জায়গায় অন্য কেউ আসবে। শানদা বা অভিজিৎদাও তো পুরনোদের সরিয়ে মেহনত দিয়ে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। এখন যেমন ‘অরিজিৎ ফিভার’ চলছে। কিন্তু ও-ও একদিন সরে যাবে।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
২০১৫ও তো ভাল শুরু হল। নতুন ছবির গান ট্রেন্ডিং। এই তো ‘মি. এক্স’য়ের ট্র্যাক ইউটিউবে তিন সপ্তাহে ২০ লাখ হিটস ছাড়িয়ে গিয়েছে। কেমন লাগছে?
ভাল তো লাগেই। আমি তো সেটাই বলছি। কী দরকার একই রকম একটা ইলেক্ট্রো টেক্সচার সব গানে নিয়ে আসার। মেলোডি এখনও মানুষের মন ছোঁয়। গানটা শোনার অনেক দিন পরেও মাথায় গুনগুন করতে থাকে সুরটা।
কিন্তু এই যে সকাল ১১টা থেকে রাত ৩টে পর্যন্ত রেকর্ডিংয়ে ডুবে থাকেন, এর মধ্যে আবার টিভির কাজ নিলেন কেন! কাজ পাগল জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তা হলে বদলালেন না!
হা হা হা। চাপ যে একটু বাড়বে সেটা আমিও মানছি। কিন্তু কালার্স বাংলার এমন একটা ইন্টারেস্টিং কনসেপ্ট শোনার পর আর না করতে পারিনি। বাংলায় তো এ রকম কনসেপ্ট আগে হয়নি। (হেসে) তবে আর একটা কারণও আছে। আমার প্রতি রোববারের রুটিন হল নিয়ম করে যত নতুন ছেলেমেয়ে আমাকে তাদের রেকর্ডিং পাঠায়, সেগুলো শোনা। ‘গ্রেট মিউজিক গুরুকুল’য়ে জাজ হিসেবে নতুন নতুন ট্যালেন্টদের গান শোনার কাজটা সপ্তাহে দু’-তিন দিন করে করতে পারব।
তা নতুন ছেলেমেয়ে়দের কেমন শুনলেন? পরের অরিজিত্ সিংহ কী শ্রেয়া ঘোষাল পেয়ে যাবেন এই ব্যাচ থেকে?
আমি তো ভীষণ আশাবাদী। সাঙ্ঘাতিক ট্যালেন্টেড সবাই। এমনকী বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা যা গান গাইছে, আমি তো ওদের ফ্যান হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় এদের মধ্যে অনেকে কয়েক দিনের মধ্যেই বলিউড-টলিউড কাঁপাবে। এই শো-টা না করলে ভীষণ মিস করতাম এগুলো। (হেসে) আমি কিন্তু আসলে গিটারিস্ট— সেটা ভুলে যাবেন না। এই শোতে হরিহরণজি, কবিতাজির সঙ্গে যে বাজাব সেটাও কিন্তু অনেক পাওনা।
এখানে একটা কথা বলতে চাই ‘গ্রেট মিউজিক গুরুকুল’য়ের সেটে আমাদের হাতে হাতে একটা লিস্ট দেয়। যাতে কোন গান প্রতিযোগীরা গাইছে তার তালিকা থাকে। সেখানে দেখলাম গায়ক, সঙ্গীত পরিচালকের নাম আছে...
কিন্তু লিরিসিস্টের নাম নেই। সঙ্গে সঙ্গে সেটা ঢোকাতে বললাম। এখন থেকে তাতে লিরিসিস্টের নামও থাকে। এ বার থেকে অন্যরাও যেন সেটা করে।
একটা কথা বলুন, আপনি যেমন ক্লাসিকাল, কন্নড় থেকে জ্যাজ— সব ধারার গানই শুনেছেন, নতুন প্রজন্ম কি তেমনই সব ধরনের গান শোনে?
আমার মনে হয় শোনে। যতই আমরা পরের প্রজন্মকে গভীরতাহীন বলি না কেন, আমার কিন্তু উল্টো মনে হয়। এরাও দিব্যি বিভিন্ন ধরনের গান শোনে। আর সব থেকে বড় কথা, সবার দেখছি একটা নিজস্বতা আছে। কারওকে কপি করছে না। হরিহরণজির গান হোক, কী কবিতাজির— এরা কিন্তু নিজস্ব গায়কিতেই সেটা গাইছে। নিজের টেক্সচার খুঁজছে।
হরিহরণজির কথা যখন উঠল, তখন একটা প্রশ্ন করি। কিছু দিন আগে উনি বলেছেন, এখন তো মানুষে গায় না, মেশিনে গায়! আপনার সহ-বিচারকের সঙ্গে সহমত আপনি?
(একটু ভেবে) আমি কিন্তু হরিহরণজির সঙ্গে এ ব্যাপারে খানিকটা একমত। অনেক ক্ষেত্রে একটা চটক দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর সব গানে ‘অটো টিউনার’য়ের ব্যবহার। আরে, ভাই, গান যদি গাইতে চাও তবে শিখে এসো। শখে গান গাইতে এসো না। রেওয়াজ করো, পিচটা দেখো। ডান্স নাম্বার হলে আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু তা ছাড়া প্লিজ, কখনওই অটো টিউনার ব্যবহার কোরো না। আমি তো একদমই সেটা করি না।
কিন্তু আপনার ফ্যানদের একটা অভিযোগ আছে।
(চমকে গিয়ে) সেটা কী?
আপনার দাক্ষিণাত্য বিজয় এখনও হল না। বিন্ধ্য পর্বতটা আর পার করতে পারলেন না!
(হেসে) ওহ্... আরে ওটাও হয়ে যাচ্ছিল। গত বছর একটা অফারও পেয়েছিলাম। তার পর একই সময়ে ‘সিটিলাইটস্’য়ের মিউজিক এসে গেল। একটা বাংলা ছবিও আগেই হাতে ছিল। আগের কমিটমেন্টগুলো তো আর ফেলতে পারি না। তাই আর দক্ষিণে পা দেওয়া হল না। তবে ভাল মনে করিয়ে দিয়েছেন। কথা দিচ্ছি, পরের বছরই দাক্ষিণাত্য বিজয়ে নামব...
আপনার ফ্যানরা এটা শুনে খুব খুশি হবে। আচ্ছা ‘মেড ইন বেঙ্গল’য়ের বোম্বে যাওয়া হল... স্ট্রাগল হল... স্বীকৃতি এল... ‘হিট গ্যাঙ্গুলি’ নাম হল... প্রাইজের জোয়ার এল... একচ্ছত্র আধিপত্যও হল... পরের স্টেশনটা কী?
আমি না জীবনটাকে ও ভাবে
দেখি না। বাংলার ছাপটা যে বোম্বের সঙ্গীত বৃত্তে নিয়ে যেতে পেরেছি সেটাতেই আমি খুশি। একটা কথা বলি, এটা এখনও কারওকে বলিনি। কাল ‘হমারি অধুরি কহানি’র টাইটেল সঙের রেকর্ডিং ছিল।
মহেশ ভট্ট এসেছিলেন। রেকর্ডিংয়ের শেষে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন ভট্টসাব। দেখলাম চোখে জল। এগুলোই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওনা।
শেষ প্রশ্ন করি। এখন বেশির ভাগ বাঙালি সেলিব্রিটি মানেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলে। আপনাকেও দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক মঞ্চে। রাজনীতিতে কবে যোগ দিচ্ছেন?
(হেসে) আমি আর পলিটিক্স— ওরে বাবা! একদম জানি না।
আর যেটা জানি না, তাতে আমি একেবারে নেই। আমি খেতে জানি, খুব খাই। ফুটবল খেলতে জানি, সেটা খেলি... তবে হাত ভাঙলে তো আর গিটার বাজাতে পারব না তাই সাবধানে। আর মিউজিকটা জানি, তাই ওটা মন থেকে করি। ব্যস... রাজনীতিতে আমি নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy