Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Kaushik Ganguly

‘যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলেও, তাদের থেকেই পুরস্কার পেয়েছি।’

শিল্পীর মুখ বন্ধ হওয়া উচিত নয়। শিল্পীর কাজের স্বাধীনতা থাকা উচিত। না হলে সমাজ কদর্য হয়ে উঠবে।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:২৫
Share: Save:

‘মনোহর পাণ্ডে’র শ্যুটিং করছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ছবির গল্প থেকে টলিউডের রাজনৈতিক তর্জা— কথা বললেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে।

প্রশ্ন: হিন্দি ছবির কথা ভাবলেন কেন?

কৌশিক: হিন্দি ছবি বানাব বলে, ‘মনোহর পাণ্ডে’ বানাচ্ছি— এমনটা নয়। যাঁদের নিয়ে এই গল্প, তাঁদের গল্পটা বাংলায় বলা যেত না। হিন্দিতেই বলতে হত।

প্রশ্ন: কাদের গল্প?

উত্তর: গঙ্গা তীরবর্তী যে বিরাট এলাকা, যেখানে অবাঙালিরা থাকেন, সেই এলাকার মানুষের গল্প ‘মনোহর পাণ্ডে’। এই সব মানুষ, তাঁদের বাড়িতে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হিন্দিতেই কথা বলেন। তাঁদের গল্প বলতে হলে, ছবিটা হিন্দিতেই বানাতে হত।

প্রশ্ন: কী নিয়ে ছবির গল্পটা?

উত্তর: এটা অতিমারি সময়ের গল্প। কোভিডের কারণে এই মানুষগুলো দীর্ঘ দিন নিজেদের পরিবারের থেকে, বাড়ির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। নিজেদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নানা রকম পরিবর্তন আসে তাঁদের জীবনে। দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে তাঁদের জীবনে। এমন একটা প্রেক্ষিতে ‘মনোহর পাণ্ডে’র গল্পটা লেখা। কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক সচেতনতা মূলক ছবি নয়। ভালবাসার ছবি। এটা একটা ‘শহুরে রূপকথা’র গল্প। অপেক্ষাকৃত হালকা মেজাজে কঠিন সময়ের একটা ছবি তুলে ধরা।

প্রশ্ন: যেহেতু হিন্দি ছবি, সর্বভারতীয় দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারবেন বলে মনে হয়?

উত্তর: অবশ্যই হয়। হিন্দি ছবি যতগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পায়, সেখানে সার্বিক ভাবে ‘না চলা’টাও বাংলা ছবির ‘প্রচুর চলা’র থেকে বেশি হয়ে যেতে পারে। এতে প্রযোজকের লাভ হবে, যে কলাকুশলীরা কাজ করছেন, তাঁরা লাভবান হবেন। এখানকার এই কলাকুশলীদের কাজ সর্বভারতীয় দর্শক দেখতে পাবেন। এটা তো কম পাওয়া নয়।

প্রশ্ন: সর্ব ভারতীয় স্তরের ৩ জন তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রী তো আপনার সঙ্গেও কাজ করছেন।

উত্তর: অবশ্যই সেটাও একটা বিরাট পাওয়া। নিজে অভিনেতা হিসেবেও ওঁদের দেখছি। ওঁদের থেকে শিখছি।

প্রশ্ন: এর পর পুরোদস্তুর হিন্দি সিনেমার জগতে প্রবেশের কোনও পরিকল্পনা আছে?

উত্তর: হিন্দিতে কাজের ডাক পাইনি, তা তো নয়। এর আগে করেছিও। কিন্তু বাংলার দর্শকের থেকে এত ভালবাসা পেয়েছি, কখনও মনে হয়নি অন্য কোনও কিছুর উদ্যোগ নেব। বলিউডে যদি কখনও কারও মনে হয়, আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য বা আমার ছবি নিয়ে কাজ করার জন্য, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তাতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু আমি নিজে কখনও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করব না।

প্রশ্ন: টলিউডে এখন রাজনৈতিক হাওয়া গরম। ফাটল ধরেছে গোটা ইন্ডাস্ট্রিতেই। বন্ধুবিচ্ছেদ হচ্ছে অহরহ। আপনারও এমন বন্ধুবিচ্ছেদ হয়েছে নাকি?

উত্তর: আমার বিভিন্ন বন্ধু দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা আজও আমার বন্ধু। তাঁদের সঙ্গে ঘোর রাজনৈতিক বৈপরীত্য থাকলেও, তাঁরা বন্ধুই রয়ে গিয়েছেন। আর আমি কী পোশাক পরব, আমি কী খাব— এটা যেমন আমার ব্যক্তিগত, তেমনই ধর্মও ব্যক্তিগত। আমি একেবারেই বিচলিত নই। তবে এটা বুঝেছি, আমি রাজনীতির লোক নই। আমার রাজনীতি, সিনেমার রাজনীতি। যেটুকু প্রতিবাদ করতে হবে, সেটাও সিনেমার মাধ্যেমেই করতে হবে। তবে শিল্পীর মুখ বন্ধ হওয়া উচিত নয়। শিল্পীর কাজের স্বাধীনতা থাকা উচিত। না হলে সমাজ কদর্য হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন: আপনার মুখ কেউ কখনও বন্ধ করতে চেয়েছেন?

উত্তর: কখনও না। যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের বিরুদ্ধে মতামত যদি ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করেও থাকি, তা হলে সেই ছবির জন্যও তাদের থেকে পুরস্কার পেয়েছি। সেই পরিবেশটা বজায় থাকুক। বর্তমান রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার— দুইয়ের থেকেই পুরস্কার পেয়েছি। সরকার শিল্পীকে এই স্বাধীনতাটা দিলেই, দেশ সুন্দর থাকবে। যদি এই স্বাধীনতা কোনও দিন খর্ব হয়, আমি আর এই শিল্পমাধ্যম নিয়ে কাজ করব না।

প্রশ্ন: টলিউডের দুই অভিনেত্রীকে হালে হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ করে সমাজমাধ্যমে। পরিস্থিতি কি বদলে যাচ্ছে?

উত্তর: রুচিহীন জিনিস নিয়ে মন্তব্য করতে নেই। সমাজমাধ্যমটা এখন অনেকের কাছেই রুচিহীন কাজকর্মের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সব দিন দিন বাড়ছে। নিজেও দেখেছি, ক’টা সাধারণ কথা লিখেছি। যে যা পেরেছে বলে দিয়েছে। তাই ঠিক করেছি, আর কিছু লিখব না। আর মানুষের হাতে অনেক সময়। যাবতীয় বিষয়ে তাঁরা মন্তব্য করতে চান। আর সমাজমাধ্যমই হচ্ছে, তাঁদের সেই মন্তব্য করার জায়গা। একটাই কথা, সবাই সবাইকে নিজের মতো করে থাকতে দিন। বাংলা যেন নিজের মত থাকে। কলকাতাকেও আমি অন্য ভাবে দেখতে চাই না। ছোটবেলা থেকে যেমন দেখেছি, কলকাতা যেন তেমনই থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kaushik Ganguly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE