Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Saraswati Puja 2024

সরস্বতী পুজোর দুপুরে উত্তমকুমারের পছন্দ ছিল খিচুড়ি আর শীষপালংয়ের চচ্চড়ি

১৯৬৯ সালে ‘শিল্পী সংসদ’-এ সরস্বতী পুজোর প্রচলন শুরু করেন উত্তমকুমার। সেই পুজোর টুকরো স্মৃতি আনন্দবাজার অনলাইনে।

Know how Bengali actor Mahanayak Uttam Kumar used to celebrate Saraswati Puja

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৯
Share: Save:

তাঁর পরিবারের লক্ষ্মীপুজোর ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত। তার রীতিনীতি অনুরাগীদেরও জানা। কিন্তু মহানায়ক উত্তমকুমার এক সময় নিজের উদ্যোগে সরস্বতী পুজোও শুরু করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে ‘শিল্পী সংসদ’-এর পথচলা শুরু। পরের বছর থেকে সংস্থায় সরস্বতী পুজো শুরু করেন উত্তম। অভিনেতারা যে পরোক্ষে বাগ্‌দেবীর আশীর্বাদ ধন্য, সে কথা বিশ্বাস করতেন উত্তমকুমার। সেই বিশ্বাস থেকেই সংস্থার সদস্যদের নিয়ে সরস্বতী পুজোর প্রচলন করেন উত্তম।

৮৬ লেনিন সরণী। মধ্য কলকাতার এক জীর্ণ বাড়ির দ্বিতলে শিল্পী সংসদের দপ্তর। দেওয়ালে বাংলা স্বর্ণযুগের তারকাদের সাদাকালো ছবির ভিড়। মঙ্গলবার সেখানে পৌঁছে দেখা গেল সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত সম্পাদক সাধন বাগচী মহানায়ককে এই পুজোয় আসতে দেখেছেন। অতীত স্মৃতির উপর থেকে ধুলো ঝেড়ে টুকরো টুকরো দৃশ্যপট ভেসে উঠছিল তাঁর মননে।

Know how Bengali actor Mahanayak Uttam Kumar used to celebrate Saraswati Puja

‘শিল্পী সংসদ’-এর বৈঠকে বিশিষ্টদের সঙ্গে উত্তমকুমার। ছবি: সংগৃহীত।

সরস্বতী পুজোর দিন একটু বেলার দিকে ‘শিল্পী সংসদ’-এর বাইরে এসে থামত উত্তমকুমারের গাড়ি। সাদা ধুতি এবং পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত অভিনেতা শিল্পীদের সঙ্গে একসঙ্গে অঞ্জলি দিতেন। সকলের সঙ্গে বসে আড্ডা দিতেন। প্রসাদ বিতরণের পরে দুপুরে থাকত পঙ্‌ক্তি ভোজের আয়োজন। প্রায় ২০০ জনের পাত পড়ত। সেই খাবারের মেনুও মহানায়ক নাকি নিজেই ঠিক করেছিলেন। দশ রকম সব্জি দিয়ে খিচুড়ি, বেগুনি, ফুল বড়ি ভাজা এবং অবশ্যই উত্তমের প্রিয় শীষপালংয়ের চচ্চড়ি। মধ্যাহ্নভোজনের পরে শিল্পীদের নিয়ে বসত গানবাজনার আসর। সন্ধ্যায় মায়ের আরতির পর রাতের জন্য থাকত আলাদা মেনু। কড়াইশুঁটির কচুরি, আলুর দম, ভেজিটেবল চপ এবং মিষ্টি।

মহানায়কের সঙ্গে পুজোয় অংশ নিতেন সুপ্রিয়া দেবী। তাঁদের আমন্ত্রণে সেই সময়ে ইন্ডাস্ট্রির তাবড় শিল্পীরা পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। উপস্থিত থাকতেন তরুণ কুমার, অনিল চট্টোপাধ্যায়, সুমিতা বিশ্বাস, বাসবী নন্দী প্রমুখ। তবে যে পুজোর সঙ্গে এতটা জড়িয়ে ছিলেন উত্তম, সেই পুজোতেই এক বছর তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। সাধন জানালেন, এক বার অনুরাগীরা খবর পেয়ে সকাল থেকেই দপ্তরের নীচে ভিড় করে। এ দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন উত্তম। কিন্তু সেই ভিড় দেখে তিনি আর এগোতে পারেননি। কারণ, অভিনেতার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তখন সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। ফলে গাড়ি ঘুরিয়ে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হন উত্তমকুমার।

সময় বদলেছে। এখন টলিপাড়ায় বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা নিজেদের মতো করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেন। আধুনিকতার চাকচিক্য এবং আত্মকেন্দ্রিকতায় হারিয়ে যেতে বসেছে স্মৃতিমেদুরতা। মহানায়কের স্মৃতি আঁকড়ে এখনও সরস্বতী বন্দনা হয়ে চলছে এই সংস্থায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE