Advertisement
E-Paper

চেনা জিৎ অচেনা জিৎ

কথা শুরু হল তাঁর নতুন ছবি নিয়ে। সামনেই মুক্তি পাচ্ছে ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’। এ ছবি নতুন কী দেবে জিতের ভক্তদের?

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০০
জিৎ

জিৎ

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে জিতের অফিসের দেওয়াল জুড়ে... তাঁর ছবি নয়, আছে ফ্রেমে বাঁধানো বিভিন্ন দার্শনিক কোটেশন। ‘হোয়েন পিপল আস্ক মি ইফ আই ওয়েন্ট টু ফিল্ম স্কুল, আই টেল দেম, নো, আই ওয়েন্ট টু ফিল্মস।’ কোটেশনের দিকে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, আপনিও কি ফিল্ম স্কুল থেকে? ‘‘নো, আই ওয়েন্ট টু ফিল্ম,’’ দ্রুত উত্তর। ফ্রেমে আঁটা সব ক’টা কোট বুঝি মুখস্থ? ‘‘জীবনে চলার পথে যে কথাগুলো শক্তি জুগিয়েছে, সেই কথাগুলো চোখের সামনে রাখতে চাই। যাতে ভুলে না যাই।’’

কথা শুরু হল তাঁর নতুন ছবি নিয়ে। সামনেই মুক্তি পাচ্ছে ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’। এ ছবি নতুন কী দেবে জিতের ভক্তদের? ‘‘ইন্সপেক্টর নটি হল ‘হব হব’ পুলিশ। মানে যার পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে ষোলো আনা। এটা একটা রমকম (রোম্যান্টিক কমেডি)। জিৎ মানে সিরিয়াস, জিৎ মানে অ্যাকশন হিরো, জিৎ মানে জব্বর ডায়লগ... এই ছবিটা এই ধারণাগুলো ভেঙেছে। জিৎ পুরোদস্তুর কমেডি করতে পারে। পরিচালকও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন,’’ কথায় রাশ টানলেন তিনি। ‘‘শুদ্ধ ও স্যাভি খুব ভাল মিউজিক করেছে। প্রত্যেকটা গান আমার পছন্দ হয়েছে।’’ এই ছবিতে জিতের বিপরীতে আছেন নুসরত ফারিয়া। এখন বাংলা ছবির ঘরানা পাল্টে যাচ্ছে, সেখানে ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’র ফর্মুলা পুরনো নয় কি? অন্তত ট্রেলর দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। ‘‘যে ছবি দর্শকের মনের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারে, আমরা সেই ছবি করি। বিনোদনই আমাদের ছবির শেষ কথা,’’ একটু যেন সিরিয়াস গলা। ‘‘আমিও কিন্তু অন্য ধারার ছবি করেছি, ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’। যদিও চলেনি।’’ প্রথম এক্সপেরিমেন্ট হিট না করায় সেই পথে আর যেতে চাননি জিৎ। কিন্তু শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের সঙ্গে তিনি ছবি করতে ভীষণ ইচ্ছুক। ‘আমাজন অভিযান’ দেখেছেন? ঠোঁটের কোণে হাসি, ‘‘না। এখনও দেখা হয়নি। তবে দেখার ইচ্ছে আছে। বাংলার বিগেস্ট স্টোরি!’’ নিজের প্রোডাকশনের বাইরে তো আপনি বেরোতেই চান না, না কি ডাক পান না? ‘‘আমার প্রোডাকশনে কী নেই বলুন তো? তা ছাড়া রিল্যায়েন্সের সঙ্গে ছবি করেছি, সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গেও চুক্তির কথা হয়েছে।’’ আর ভেঙ্কটেশ? ‘‘আবার সেই প্রসঙ্গ!’’ বিরাট অঙ্কের ‘বিগেস্ট স্টোরি’ আপনার প্রোডাকশন ভাবছে না কেন? ‘‘আমরাও বিরাট পরিমাণ বাজেট নিয়েই ছবি করি।’’ বাংলা সাহিত্যের দিকে কেন নজর দিচ্ছেন না? ‘‘আরে বাবা, আমি কি বাংলা পড়েছি? তবে ব্যাপারটা মাথায় আছে।’’ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন ছবির শ্যুটিং হতে চলেছে। কিন্তু ছবির নাম বা বিষয় নিয়ে এখনই তিনি কথা বলতে চান না। প্রসঙ্গত জিৎ জানালেন, ছোটদের জন্য একটা ছবি করা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।

স্কুলে বাংলা না পড়লেও ভালই বাংলা পড়তে পারেন তিনি, এমনকী তিনি বাংলাতেই চিত্রনাট্য পড়েন। ‘‘আফটার অল আই অ্যাম আ কলকাতা বয়। আমি কিন্তু বাংলা শব্দ নিয়ে নিয়মিত চর্চা করি! মুম্বইয়ে থাকার সময় এক বাঙালি অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টরকে বলেছিলাম ‘ফরম্যালিটি’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ বলতে পারলে ওখানে ফ্ল্যাট কিনে দেব। পারেনি! আপনি বলতে পারবেন?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে দিলেন, ‘‘আনুষ্ঠানিকতা।’’ মুম্বইয়ে কেরিয়ারের শুরুতে থাকলেও, বাংলার হিরো হওয়ার পর মুম্বইয়ে গিয়ে কেরিয়ার তৈরি করার কথা ভাবেননি তিনি। কেন? ‘‘কেন মুম্বই? কেন জিজ্ঞেস করছেন না হলিউডে কেন যাচ্ছি না?’’ প্রত্যাশাটা কি একটু বেশি হয়ে গেল না! ‘‘তা হলে শুনুন, বিদেশে একটা খাবারের দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে পরিচয় হয় কয়েক জন দক্ষিণ ভারতীয়ের সঙ্গে। আমার সঙ্গে কথা বলে তাঁরা তো অবাক! আমি ভারত সম্পর্কে কত কী জানি! কারণ তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন আমি বিদেশি। কলকাতার ছেলে শুনে ওঁদের হাঁ বন্ধ হচ্ছিল না। সুতরাং...’’ মুচকি হাসি দিলেন জিৎ। বললেন, ‘দিওয়ানা’ ছবির সময় ওমানের মাসক্যাট বিমানবন্দরে প্রায় ১৫০-২০০ বাংলাদেশি ‘জিৎ ভাইয়া’কে চিনতে পেরে ঘিরে ধরে। ছবি তোলে। শেষে বিমানবন্দরের কর্মীদের সাহায্যে ভক্ত মুক্ত হন তিনি। সেই বারই ভারতে ফেরার সময় ওই এয়ারপোর্টেই স্থানীয় এক বন্ধুর দেওয়া দিসদশা (মাসক্যাটের জাতীয় পোশাক) ও টুপি পরে ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি যাত্রীরা কেউ চিনতেই পারেননি অভিনেতা জিতকে।

আরও পড়ুন: ভাবিনি ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরতে পারব

কথা বলতে বলতে ফলাহার শেষ করে হাত বাড়ালেন প্রতিবেদকের জন্য আসা মুড়ি-চানাচুরের দিকে। ‘‘আমি কিন্তু দারুণ ফুডি। বিদেশে গেলে কিছু ঠিক থাকে না, না খাওয়া, না ঘুম। যাচ্ছেতাই। আজকাল আবার বউ চাইছে, আমার হাতে রান্না খেতে। বাড়ির লোকজনও আবার ওর সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। রান্না করে ফেলতে হবে এর মধ্যে।’’

মুড়ি খেতে খেতে বেরিয়ে এলেন হিরো জিতের লেয়ার থেকে। তিনি একজন আদ্যোপান্ত শপাহোলিক। ইতালি তাঁর প্রিয় শপিং ডেস্টিনেশন। নিজের পোশাকের ব্যাপারে তাঁর পছন্দই শেষ কথা। বিদেশে যেখানেই বেড়াতে যান, আগে মেয়ের জন্য পছন্দ করে পোশাক কেনেন। ‘‘শুধু মেয়ে নয়, আমার বউও কিন্তু আমার পছন্দ করা জিনিসই বেিশ ভালবাসে।’’ উপহার নেওয়া না-পসন্দ জিতের। ভক্তদের আগের থেকেই বলে দেন, উপহার না আনার জন্য।

দুঃখ, মনখারাপের মতো অনুভূতিগুলোর সঙ্গে জিৎ একা থাকতে পছন্দ করেন। তখন তাঁর বন্ধু ডায়েরি, যেখানে সব কথা লিখে রাখেন। সময় না থাকলে রেকর্ড করে রাখেন নিজের কথা। কিছু দিন আগে দুটো ফোন খোয়া যাওয়ায় হারিয়ে গিয়েছে কুড়ি-একুশ পাতাজোড়া ব্যক্তিগত অনেক কথাই। ডিপ্রেশন হলে ঘুমিয়ে পড়েন জিৎ। ওটাই নাকি অবসাদ কাটানোর মোক্ষম দাওয়াই। তিনি আশাবাদী ‘আবার শবর’, ‘প্যাডম্যান’-এর মাঝে ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’র সাফল্য নিয়ে।

Jeet Tollywood Actor জিৎ টলিউড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy