অয়ন সেনগুপ্তের পর অনিন্দ্য সরকার। ছোট পর্দার আরও এক পরিচিত পরিচালক কাজ পাচ্ছেন না, শোনা যাচ্ছে এমনটাই। অনিন্দ্যর পরিচালনায় আকাশ আট চ্যানেলের ধারাবাহিক ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’ তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর ঝুলিতে ‘চেকমেট’, ‘তৃষ্ণা’-সহ একাধিক ধারাবাহিক এবং টেলিফিল্ম রয়েছে। কেন কাজ পাচ্ছেন না? জানতে আনন্দবাজার যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। অনিন্দ্যের অভিযোগ, “আমার নাকি বয়স হয়ে গিয়েছে। আমি নাকি আর পরিচালনা করতে পারছি না, এই অজুহাতে কাজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
বাধ্য হয়ে তিনি তাই ক্যামেরার পিছন থেকে সামনে এসেছেন। অয়নের মতোই নানা ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন! অনিন্দ্যকে এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে রাজ চক্রবর্তীর ‘গৃহপ্রবেশ’ ধারাবাহিকে।
রাজ চক্রবর্তীর ‘গৃহপ্রবেশ’ ধারাবাহিকে মাফিন চক্রবর্তী, বিদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে অনিন্দ্য সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ক্ষোভ পরিচালকের গলায়। অনিন্দ্যের কথায়, “পুরো কাঠামোই যেন বদলে গিয়েছে। আমাদের সময় বিনোদন দুনিয়া পরিচালকদের মাধ্যম ছিল। এখন লেখকদের। এখন সমস্ত লেখকই প্রযোজক।” উদাহরণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সুশান্ত দাসের নাম। এঁরা নিজেরাই লিখছেন, নিজেরাই ধারাবাহিক প্রযোজনা করছেন। এবং নিজেদের সহকারীদেরই পরিচালকের চেয়ারে বসাচ্ছেন।
অনিন্দ্যর মতে, আগে কাজের মেধা অনুযায়ী পরিচালক নির্বাচিত করা হত। এই তালিকায় ছিলেন বিষ্ণু পালচৌধুরী, যিশু দাশগুপ্ত, দেবাংশু সেনগুপ্ত, অভিজিৎ দাশগুপ্ত বা অনিন্দ্য নিজে। সেই জায়গা থেকেই তাঁর আফসোস, “আমরা কিন্তু ছোট পর্দায় ধারাবাহিক দেখার অভ্যাস দর্শকদের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছিলাম। উত্তরসূরিরা এখন পরিচালক হয়েছেন। আমরা সম্মান হারিয়েছি!”
তাঁর প্রশ্ন, নবীনেরা কাজ করতে আসবেন। তাঁদের হাত ধরে সব কিছুই এগোবে। কিন্তু তাঁদের উপস্থিতিতে কি পুরনোরা ব্রাত্য হয়ে যাবেন? বিশেষ করে যাঁরা এখনও কাজ করতে পারেন!
অনিন্দ্যের মনখারাপ এই কারণেই। তাঁর মতে, তিনি এখনও কাজ করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে করতে দেওয়া হচ্ছে না! “আরও অভিযোগ, আমি এতটাই সিনিয়র হয়ে গিয়েছি যে, আমায় নাকি কিছু বলা যায় না। এখনকার পরিচালনা সম্পর্কেও সজাগ নই।” টিকে থাকতে তাই তাঁর সহকারী পরিচালকদের পরিচালনায় এখন তাঁকে অভিনয় করতে হচ্ছে। আপনি কি পরিচালকদের কখনও পরামর্শ দেন? “ভুলেও না”, বললেন অনিন্দ্য। প্রথমত, তিনি পরিচালক নন, তাই বলতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, নতুন প্রজন্ম বড়দের পরামর্শ পছন্দও করে না।
অভিনয় করে পেট হয়তো ভরছে। মন ভরছে কি? অসহায় অনিন্দ্যর যুক্তি, “অভিনয় দুনিয়ার বাইরে কিছুই জানি না, পারিও না। ফলে, এ ভাবেই না হয় টিকে থাকার চেষ্টা করি।”