Advertisement
E-Paper

এক প্লেট ডাল-ভাত, কিন্তু পরিবেশনেই মাত

বিয়েবাড়িতে যেমন পোলাও-মাংস জুটি সফল, ঠিক তেমনই বাঙালিবাড়ির আড্ডায় শাশুড়ি-বৌমার কূটকচালি। আর তার সঙ্গে যদি স্টার্টারে গরম ফিশফ্রাইয়ের মতো পরিবেশন করা যায় মধ্যবিত্ত বাঙালি আবেগ... ব্যস!

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০০:০০

বিয়েবাড়িতে যেমন পোলাও-মাংস জুটি সফল, ঠিক তেমনই বাঙালিবাড়ির আড্ডায় শাশুড়ি-বৌমার কূটকচালি। আর তার সঙ্গে যদি স্টার্টারে গরম ফিশফ্রাইয়ের মতো পরিবেশন করা যায় মধ্যবিত্ত বাঙালি আবেগ... ব্যস! বিয়েবাড়ির ভাল মেনুর মতোই এ ছবির মেনুও হিট। এ বার তার স্বাদ বা মাংসের পিস কেমন, তা বিবেচ্য।

বৌমার পাতে ছোট মাছের টুকরো দেওয়া, মাঝরাতে জ্বরের বাহানায় ছেলে-বৌমার দরজায় ধাক্কা, দেওয়ালে কোন ছবি লাগানো হবে, সেই নিয়ে ঝগড়া... রোজকার টানাপড়েন নিয়েই শুরু হয় ছবি। ছেলে-বৌমা বাইরে ঘুরেফিরে বেশি রাতে বাড়ি ঢুকলে যে শাশুড়ি গাল ফুলিয়ে জল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আর শাশুড়ি কেন তার কথার উত্তর দিচ্ছে না ভেবে অপমানিত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় যে বৌমার, এ গল্প তাদের। শাশুড়ি শোভারানি (অনসূয়া) ও বৌমা অদিতি (কনীনিকা) দু’জনেই অস্তিত্ব সঙ্কটের শিকার। সংসার নিয়ে চলে তাদের লোফালুফি খেলা। খোকনকে (বিশ্বনাথ) ভাত বেড়ে দেবে কে? সে দইয়ে চিনি খাবে কি না, এই নিয়েও চলতে থাকে শাশুড়ি-বৌমার রোজকার দাবা খেলা, যাতে কিস্তিমাত করতে পারে না কেউই। ছবিতে চরিত্রদের সংলাপের প্রশ্নই দর্শকের মনেও দেখা দেয়। শাশ্বত-অদিতির একরত্তি মেয়ের মুখের ‘বাপের বাড়ি মানে বাবার বাড়ি। তা হলে মায়ের বাড়ি কোনটা?’ সংলাপে দর্শক মুখোমুখি হন ঘোর বাস্তবের।

তবে শুধু সমস্যা দেখিয়েই পরিচালক কাজ শেষ করে ফেলেননি। তার থেকে উত্তরণের পথও দেখিয়েছেন। ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভূমিকায়। তবে শাশুড়ি-বৌমার কাউন্সেলিং সেশনও একঘেয়েমি বয়ে আনে না। বরং সেই সেশনে কিছু প্রশ্ন সরাসরি ধাক্কা দেয় দর্শককে।

মধ্যবিত্ত পরিবারকে আধার করে সমাজের আঁধারকে নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক পৃথা চক্রবর্তী। তার সঙ্গে মিশিয়েছেন বাঙালি আবেগ। সহজ বিষয় সহজ ভাবেই দেখিয়েছেন পরিচালক। সে দিক থেকে নবাগত পরিচালকের প্রশ‌ংসা প্রাপ্য। আর তারিফের দাবিদার অভিনেতারা। অনসূয়ার চলাফেরা, মুখব্যাদানেই তার অভিব্যক্তি পরিষ্কার। কনীনিকাও সুন্দর অভিনয় করেছেন গোটা ছবিতে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কথাও বলতে হয়। প্রথম সারির নায়িকা হয়েও ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে যথাযথ অভিনয় করেছেন তিনি।

মুখার্জিদার বউ পরিচালনা: পৃথা চক্রবর্তী অভিনয়: অনসূয়া, কনীনিকা, ঋতুপর্ণা, বিশ্বনাথ, অপরাজিতা ৬.৫/১০

আর আছে ইচ্ছের মতো একটা মিষ্টি বাচ্চা। সে অভিনয় করছে না কি আপনার বাড়ির খুদেটি চোখের সামনে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে, সেই পার্থক্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করাই বৃথা। কথায় আছে ‘সব ভাল তার, শেষ ভাল যার।’ সেখানেই পরিচালকের মুনশিয়ানার অভাব স্পষ্ট। মঞ্চে শাশুড়ির বক্তৃতা দেওয়ার মতো অতিনাটকীয়তা অনায়াসেই ছেঁটে ফেলা যেত। তাতে ছবির স্বাদ এতটুকুও নষ্ট হতো না।

তবুও এ ছবি মন ভাল করে। বাড়িতে অতিথি এলে তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে যদি ঘরোয়া ভাত, ডাল, আলু ভাজা আর মাছের ঝোলই দেওয়া হয়, তা হলে সে যে প্রশান্তি পাবে, এ ছবিও অনেকটা সে রকমই। যাকে বলে বাঙালির ‘কমফর্ট ফুড’। এ ছবি সম্পর্ক নিয়ে ভাবায়। কোনও ছবি ভাল লাগলে বন্ধুদের ফোন করে তা দেখার কথা বলে থাকি। কিন্তু, এ ছবির শেষে হল থেকে বেরিয়ে আঙুল চলে গেল শাশুড়ির নাম্বারেই...

Film Bengali Movie Mukherjee Dar Bou Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy