Advertisement
E-Paper

বেলাশেষের পাক-ধরা প্রেমেই জিত টলিউডে

নাহ্‌! টালিগঞ্জে যাঁরা তরুণদের ‘প্রিয় মুখ’ বলে চিহ্নিত, তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না পর্দায়। তবু হোয়াট্‌স অ্যাপ-ফেসবুকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের বাক্সে জমতে থাকা বার্তাগুলো যাঁদের কাছ থেকে আসছে, তাঁরা বেশির ভাগই অনূর্ধ্ব তিরিশ। পরিচালক জুটি তাজ্জব, কমবয়সীদের মধ্যেও এ ছবি এতটা সাড়া ফেলেছে!

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:১৪
বেলাশেষে ছবির একটি দৃশ্য।

বেলাশেষে ছবির একটি দৃশ্য।

নাহ্‌! টালিগঞ্জে যাঁরা তরুণদের ‘প্রিয় মুখ’ বলে চিহ্নিত, তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না পর্দায়। তবু হোয়াট্‌স অ্যাপ-ফেসবুকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের বাক্সে জমতে থাকা বার্তাগুলো যাঁদের কাছ থেকে আসছে, তাঁরা বেশির ভাগই অনূর্ধ্ব তিরিশ। পরিচালক জুটি তাজ্জব, কমবয়সীদের মধ্যেও এ ছবি এতটা সাড়া ফেলেছে!

‘বেলাশেষে’ দেখে টিন-এজার শুভজিৎ সিংহের স্বীকারোক্তি, ‘‘চোখের জল আটকাতে পারিনি! সৌমিত্র আঙ্কল আর স্বাতীলেখা আন্টির অভিনয়ে আমি ‘স্পেলবাউন্ড’!’’ স্বাগতা চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘আমার কাজপাগল বাবা ছবিটা দেখার পর মায়ের সঙ্গে বেশি-বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করছে। আর আমি ছবির ‘বিশ্বনাথ-আরতি’র মধ্যে ঠিক যেন আমার দাদু-দিদার যুগলবন্দি দেখছি।’’

নবীনদের মতোই উদ্বেল, আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর চেষ্টায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যারেজ কাউন্সেলিং কোর্সে বিয়ে বাঁচানোর দাওয়াই হিসেবে পাঠ্য হয়েছে ‘বেলাশেষে’। এক যুগ আগে শেষবার হলে গিয়ে তরুণ মজুমদারের ‘আলো’ দেখেছিলেন বইপাড়ার অশীতিপর প্রকাশক সবিতেন্দ্রনাথ রায়। তার পর ‘বেলাশেষে’-র টানে হুইলচেয়ারে চেপে বহু কষ্টে মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকেছেন।

প্রবীণ দম্পতিকে পুরোভাগে রেখে হিট ছবির ইতিহাস টলি কেন, বলিউডেও বেশি হয়নি। ‘বাগবান’-এ অমিতাভ-হেমার জুটি দারুণ হইচই ফেলেছিল। বছর তিনেক আগে মৃত্যুমুখী স্ত্রী ও স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে ফরাসি ছবি ‘আমুর’ কান চলচ্চিত্র-উৎসবের ‘গোল্ডেন পাম’ ও বিদেশি ভাষায় সেরা ছবির ‘অস্কার’ জিতে নিয়েছিল। পাক-ধরা প্রবীণ প্রেমের এ সব ছবি দেখে বাঙালি ভেবেছিল, এমন ছবি বাংলায় কেন হয় না! বাংলায় বয়স্ক দম্পতির ছবি বলতে অনেকেরই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর তুলসী-মলিনা বা ‘আশিতে আসিও না’-র ভানু-রুমা গুহঠাকুরতাকে মনে পড়ে। দু’টোই হাল্কা মেজাজের গল্প। এ বাদে উত্তম-অরুন্ধতীর ‘জতুগৃহ’ বা হিন্দিতে সুচিত্রা-সঞ্জীব কুমারের ‘আঁধি’-র সঙ্গে মধ্যজীবনের দম্পতির টানাপড়েনে কিছুটা একাত্ম হয়েছে বাঙালি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত তিন দশক আগের ‘সন্দীপ-বিমলা’। পর্দার নিয়মিত জুটি বলে পরিচিত নন। তবু ‘বেলাশেষে’ উপলক্ষে তাঁরা দু’জনই এ বছর টলিউডের সফলতম ‘নায়ক-নায়িকা’। এই সাফল্যের রহস্য? প্রসেনজিৎ তথা টালিগঞ্জের ‘বুম্বাদা’র মতে, ‘‘বুড়োবুড়িকে নিয়ে মূল গল্পটা ফেঁদেও নানা বয়সের ক’জন দম্পতিকে জুড়ে দেওয়াটাই মাস্টারস্ট্রোক!’’ এক দিকে দাম্পত্যে কতটা প্রেম আর কতটা অভ্যাস— প্রশ্ন তুলছে সৌমিত্র-স্বাতীলেখার জুটি। অন্য দিকে তাঁদের ছোট মেয়ে-জামাই স্মার্টফোন-দুরস্ত, সোশ্যাল মিডিয়ামুখর দম্পতি। সেই সম্পর্কের ‘নেটওয়ার্কহীনতা’র যন্ত্রণাও দর্শক টের পাচ্ছেন। আর এক মেয়ের ভূমিকায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-র চরিত্রটি মধ্য যৌবনের দাম্পত্যে টানাপড়েনের শিকার। ঋতুপর্ণা বলছিলেন, ‘‘আমার কাছে এ ছবি আসলে সম্পর্কের ছবি। বয়স্ক দম্পতির আতসকাচে সব দাম্পত্যের গায়ে আলো ফেলার চেষ্টা।’’

ফলে তারকার গ্ল্যামার ছাড়াই শুরু থেকে ঝোড়ো ব্যাটিং চালাচ্ছে ‘বেলাশেষে’। চার সপ্তাহেই ছবি হিট শহরে-মফস্‌সলে। ফুরফুরে গল্প বলার টানে মজেছেন সাধারণ দর্শক থেকে ফিল্মবোদ্ধারা। যাদবপুরের ফিল্ম স্টাডিজের শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বিষাদ নয়, বেলাশেষে-র গল্পে আশাবরীর সুরটাই মন ভাল করে দেয়।’’

Riju Basu Review Bengali film soumitra chatterjee shiba prasad mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy