Advertisement
E-Paper

নতুন মোড়কে চেনা স্বাদ

ফেলুদার চরিত্রে টোটাকে দিব্যি লেগেছে। হাঁটাচলা, চাহনি সব দিক দিয়ে তিনি নিজের ছাপ তৈরি করেছেন।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩৭

ফেলুদা ফেরত
(সিজ়ন ওয়ান)
ওয়েব সিরিজ়

পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: টোটা, অনির্বাণ, কল্পন, ধৃতিমান, অরিন্দম, ঋষি
৬/১০

টোটা রায়চৌধুরী ও ফেলুদা। অনির্বাণ চক্রবর্তী ও জটায়ু। কল্পন মিত্র এবং তোপসে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’। লেখার শুরুতে এই নামগুলির উল্লেখ প্রয়োজন। কারণ এই আয়োজনে ফেলুদাকে দেখতে অভ্যস্ত নন বাঙালি দর্শক। অতিমারির বছরশেষে ফেলুদা ফেরত এসেছে। তবে বড় বা ছোট পর্দায় নয়, বরং মুঠোফোনের স্ট্রিমিং অ্যাপে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা ফেরত’ সিরিজ়ের মূল্যায়নের আগে এই বিষয়গুলি মনে রাখা প্রয়োজন।

বাঙালির চিরন্তন আবেগ, ফেলুদা। নতুন আয়োজনে দেখার সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দর্শকের মানসচোখে ভেসে উঠবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা সব্যসাচী চক্রবর্তী, সন্তোষ দত্ত প্রমুখ। সেই অনুষঙ্গগুলিকে যতটা সম্ভব দূরে রেখে এই সিরিজ় দেখা প্রয়োজন। নয়তো কোনও ক্লাসিকের নতুন অ্যাডাপ্টেশনের মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়।

বাংলার অন্যতম সফল পরিচালক ফেলুদার ট্রিটমেন্টে কতটা মৌলিকত্ব দেখালেন, কতটাই বা তাঁর পূর্বসূরিদের অনুসরণ করলেন, তা নিয়ে দর্শকের কৌতূহল। সিরিজ়ের আগাগোড়া মূল গল্পের প্রতি অনুগত থেকেছেন পরিচালক। গল্পটি যাঁদের পড়া, তাঁরা বুঝতে পারবেন, সংলাপও অনেকটাই বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা। সার্কাস ও বাঘ— এই গল্পের প্রাণভোমরা। তবে বাজেটের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, সিজিআই এফেক্টস-এ তৈরি বাঘ দেখতে মন্দ লাগেনি। হাজারিবাগের বাংলোর বাইরে প্রথম বার ফেলুদা-বাহিনী যখন বাঘের ডাক শুনতে পায়, তখন পর্দায় বাঘ দেখানো হয়নি। এ দিকে রাতের অন্ধকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হতে থাকে প্রাণীটির গর্জন। ফ্রেমটিও পর্দাজুড়ে ক্রমশ জ়ুম আউট হতে থাকে। সিরিজ়ের অন্যতম সেরা দৃশ্য এটি! পরিচালকের পরিমিতিবোধের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পুরো সিরিজ়ে এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন সৃজিত।

ফেলুদার চরিত্রে টোটাকে দিব্যি লেগেছে। হাঁটাচলা, চাহনি সব দিক দিয়ে তিনি নিজের ছাপ তৈরি করেছেন। জটায়ুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী ভাল। সিরিজ়ে তাঁকে অনেকটা স্পেসও দেওয়া হয়েছে। তোপসের চরিত্রে কল্পনের মুখের সারল্য ধরা পড়েছে। তবে তাঁকে আরও কিছু সংলাপ দেওয়া বা এনগেজড করার হয়তো প্রয়োজন ছিল। এই তিনজনই তাঁদের মতো করে চরিত্র হয়ে উঠেছেন। পূর্বসূরিদের কারও মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি, যা প্রশংসনীয়। পার্শ্বচরিত্রদের মধ্যে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় (অরুণেন্দ্র), ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় (মহেশ চৌধুরী), ঋষি কৌশিক (কারান্ডিকার) এবং মহেশবাবুর বন্ধু চরিত্রে অরুণ গুহ ঠাকুরতা ভাল। পিরিয়ড ফ্রেমে সিরিজ়ের কালার ট্রিটমেন্টও প্রশংসনীয়।

জয় সরকারের নির্দেশনায় সিরিজ়ের আবহসঙ্গীত বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। ফেলুদার চেনা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ভাঙা হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি নয়। কিন্তু নতুন মূর্ছনায় গোয়েন্দা গল্পের আমেজ একেবারেই তৈরি হয়নি। বিশেষত একটি দৃশ্যে ফেলুদা যখন একে একে জট ছাড়াচ্ছে, তখন দীর্ঘ আবহসঙ্গীত বেমানান। ছবিতে সময়ের ফরমান থাকে। কিন্তু সিরিজ়ে খেলিয়ে দেখানোর অবসর থাকে। পরিচালকের কাছে অভিযোগ, সেই সুযোগ কাজে লাগাননি। পুরো সিরিজ়ে সব কিছুই দ্রুততার সঙ্গে হয়, যার ফলে কয়েকটি বিষয় ঠিকমতো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যেমন, প্রীতিনবাবু (সমদর্শী দত্ত) নিজের কথা বেশি বলে। এই রেফারেন্স গল্পে আছে, সিরিজ়েও ফেলুদা তা বলে। কিন্তু ফেলুদার সঙ্গে প্রথম আলাপে প্রীতিনের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সে ভাবে ধরাই পড়ে না। প্রীতিনের স্ত্রীকে ২৫-২৬ বছর বয়সি মনে হয়নি। এমনকি ফেলুদারও সংলাপ বলার ফাঁকে যদি আরও একটু সময় দেওয়া হত, ভাল লাগত।

অভিযোগ কয়েকটি সংলাপ নিয়েও। ফেলুদার মুখ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের নিরিখে ধর্ম নিয়ে হানাহানির মতো অ্যানাক্রনিজ়ম (কোনও বিশেষ সময় বা যুগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য) সৃজিতসুলভ। কিন্তু ফেলুদা যখন বলে, ‘ক্র্যাক’ করে ফেলেছি, এই বিশেষ শব্দটি কি তার ইমেজে বাড়তি ওজন বা স্টাইল যোগ করে? বা প্রীতিনবাবুর স্ত্রী ‘জল-মাটি-আকাশ’ খেলার আগে অকারণ বলে, ‘বাই দ্য ওয়ে’! এই অ্যানাক্রনিজ়মগুলি আবহের সঙ্গে ঠিক মানানসই নয়।

এই বিচ্যুতিগুলি ছাড়া, মোটের উপরে সৃজিতের ‘ফেলুদা’ উপভোগ্য।

feluda Season 1 Tota Roychowdhury Web Series
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy