Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওগো সাহসিনী

মায়ামি নয়। কোপাকাবানা নয়। খোদ কলকাতায়। বিকিনিতে অভিনেত্রী ঋতাভরী! বঙ্গললনারা কি হঠাৎ সাহসী হয়ে উঠলেন? লিখছেন নাসরিন খান।মায়ামি নয়। কোপাকাবানা নয়। খোদ কলকাতায়। বিকিনিতে অভিনেত্রী ঋতাভরী! বঙ্গললনারা কি হঠাৎ সাহসী হয়ে উঠলেন? লিখছেন নাসরিন খান।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

লাস্যময়ী চেহারাটার ছবি দেখে চমকে গিয়েছেন তো?

দাঁড়ান, চমকানোর এখনও বাকি আছে। ইতিহাস নিয়ে স্নাতকোত্তর করা এই মেয়ে আইসিএসসি পরীক্ষায় ইতিহাস আর বাংলায় সর্বভারতীয় টপার হয়েছিলেন। স্কুলে থাকতেই শুরু হয় তাঁর অভিনয়-জীবন। ছবি আঁকা ছাড়া তাঁর আর এক নেশা ঘুরে বেড়ানো। পৃথিবীর নানা জায়গায়।

নতুন প্রজন্মের টলি স্টারদের অন্যতম প্রতিনিধি তিনি।

অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী।

টাইটস আর কালো রঙের ক্রাম্পলড রেসার ব্যাক টি শার্ট। সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরি। কাঁধে আলগা ফেলা একটা স্টোল। শ্যুট করতে আসা ঝরঝরে ঋতাভরীকে দেখে বোঝাই যায়নি কী চমক অপেক্ষা করে আছে। মেক আপ আর চুলটা ঠিকঠাক হওয়ার পর সেই ঋতাভরীই এক অন্য ঋতাভরী।

ছবিতে নিজের সাহসী চরিত্রের জন্য অভিনেত্রী পাওলি যথেষ্ট প্রশংসিত। এক সময় নিজের ফিগার টোন করার জন্য দিনে তিন বার ওয়ার্কআউট করতেন তিনি। সেই পাওলিও কিন্তু চট করে বিকিনি শ্যুট করতে রাজি হবেন না।

ঋতাভরীর এক সময়ের সহ-অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের মতে বিকিনি বডি তৈরি করাটা মোটেই সহজ নয়। ‘‘কিংফিশার ক্যালেন্ডারের মডেলরা ছাড়া, আমার তো মনে হয় বিকিনিতে কাউকেই মানায় না। উচ্চতা, সুঠাম লম্বা পা, দারুণ অ্যাব, প্রচুর অ্যাটিটিউড আর আত্মবিশ্বাস ছাড়া বিকিনি ক্যারি করা যায় নাকি!’’ জানান সোহিনী। কথাপ্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘‘কী জানেন তো, এখন পরিচালকেরা স্ক্রিনে ন্যাচারাল লুক দেখানোর ব্যাপারে খোলামেলা হলেও কার্ভি ফিগারটাই তাঁদের বেশি পছন্দের। আমাকেও পরিচালকেরা অনেক বার বলেছেন ওজন বাড়াতে,’’ হাসছিলেন সোহিনী।

সব অভিনেতা যেমন সিক্স প্যাক অ্যাব ফ্লন্ট করতে পারেন না, বিকিনি শরীর তৈরি করাটাও তেমনই অভিনেত্রীদের কাছে সহজ নয়। কলকাতার কিংফিশার ক্যালেন্ডার গার্ল রুনা লাহা তেমনটাই মনে করেন। বললেন, ‘‘দেখুন বিকিনি-বডি বানাতে প্রচুর পরিশ্রম লাগে। খুব কঠিন কাজ। ছবিতে যে ফিগারগুলো দেখেন, তা তৈরি করা মুখের কথা নয়। বিশেষ কোনও শ্যুট থাকলে আগের দিন সন্ধে থেকে আমরা জল পর্যন্ত খাই না। খাবার থেকে নুন পুরোপুরি বাদ। আর ভাবুন, বাঙালি, অথচ মিষ্টির দিকে তাকানোটাও অপরাধ!’’ হাসতে হাসতে বলেন রুনা।

নতুন প্রজন্মের এই অভিনেত্রীরা যেমন ইচ্ছে, তেমন পোশাকেই ক্যারি করেন নিজেদের। কে কী ভাবে তাকাল, কোনও মাথাব্যথাই নেই। নায়িকা পার্নো মিত্র যেমন মনে করেন, আগেকার দিনের অভিনেতাদের মতো ‘আমি স্টার’— তকমাটা ব্যাগেজ ছাড়া কিছুই নয়। ‘‘আগে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন সাধারণ মানুষের কাছে অজানাই থাকত। তবে স্টারেরা এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার ভেতর। বারিস্তা বা সিসিডি-তে আমরা শর্টস পরে চলে যেতে পারি,’’ স্পষ্ট স্বীকারোক্তি পার্নোর। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের একটাই মন্ত্র। ফিট থাকা। হয়তো আমাদের সিনিয়ররা এতটা সচেতন ছিলেন না।

বিকিনির জন্য

• খাবারে তেল, চিনি, মশলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন

• প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর কিছু না কিছু খান।

• খাবারে মাল্টিগ্রেন আটা দিয়ে বানানো একটা চাপাটি থাকতে পারে। কখনওই রুটি আর ভাত একসঙ্গে খাবেন না

• ডিনার সেরে ফেলুন রাত সাড়ে আটটা-ন’টার মধ্যে। এর পর খিদে পেলে একটু ফল বা ডিমের সাদা অংশ দিয়ে ভুর্জি বানিয়ে খেতে পারেন

• সপ্তাহে ছ’দিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করুন

• শুরু করুন কার্ডিও দিয়ে। ঘণ্টায় ৬ কিমি বেগে দু’মিনিট হাটুন। পরের দু’মিনিট ঘণ্টায় ৮ কিমি বেগে জগিং করুন •একদিন অন্তর পনেরো বার করে মাঙ্কি জাম্পস আর ওঠবোস করুন। ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার দরকার নেই

• শরীরের উপরের অংশের জন্য যোগব্যায়াম সব থেকে ভাল। দিনে ২৫ বার করে সূর্য প্রণাম ব্যায়ামটা করুন

• পেটের পেশির জন্য প্রতিদিন দু’সেট ৩০ সেকেন্ড করে প্ল্যাঙ্ক বা ব্রিজ ব্যালেন্স করুন। পেটের পাশের বাড়তি চর্বি কমাতে দু’সেট করে সাইড প্ল্যাঙ্ক করুন

পরামর্শ: সত্যজিৎ চৌরাশিয়া
(আমির খান-হৃত্বিক রোশন-রানি মুখোপাধ্যায়দের ট্রেনার)

এখন আমাদের ছবি প্রতিদিনই কোনও না কোনও ম্যাগাজিনে, চ্যানেলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। কাজেই ফিগার নিয়ে সচেতন তো আমাদের থাকতেই হয়,’’ বলেন পার্নো।

এই পার্নোই এক সময় ছিলেন সাঙ্ঘাতিক রোগা। স্কুলে থাকাকালীন আস্ত এক টমবয়। এক সময়ের এই অ্যাথলিট স্বপ্নেও ভাবেননি গ্ল্যামার-দুনিয়ায় পা রাখবেন। বিকিনি পরার মতো শরীর বানাতে তাঁকেও এত পরিশ্রম করতে হবে। এখন যদিও মনে করেন নিজেকে ফিট রাখা এবং রুটিন এক্সারসাইজ করাটা খুব দরকার। এতে খুব চাপের মধ্যে কাজ করেও নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখা যায়। শরীরের টক্সিন বের করে ফেলা যায়। ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’ ছবিতে বিকিনি-বডি তৈরি করতে যথেষ্ট খেটেছিলেন পার্নো। তিন মাস লিক্যুইড ডায়েটে ছিলেন। ৪৭ কেজি ওজন দাঁড়িয়েছিল তাঁর। তিনি মনে করেন চরিত্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে নিজেকেও ততটাই খাটতে হবে।

ঋতাভরীর এখনকার বিকিনি-চেহারা নিয়ে বেশ মজার তথ্য দিলেন রাকেশ কুমার। এসআরএফটিই গ্র্যাজুয়েট রাকেশ মুম্বইতে সিরিয়াল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। বললেন, ‘‘‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শ্যুটের আগের দিনেও প্রযোজক ভাবছিলেন ঋতাভরীকে বাদ দেবেন কি না। ও তখন বেশ গোলগাল চেহারার। প্রচুর সমালোচনাও হয়েছিল ওকে নিয়ে। আর ও নিজেও বেশ আপসেট ছিল ওর লুক নিয়ে। তা সত্ত্বেও অনেক পুরস্কার, সম্মান পেয়েছিল ঋতাভরী। আর আজ ওকে দেখুন। বলিউডের যে কোনও ছবিতে লিড রোল পেতে পারে ও।’’

বিকিনি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পিছিয়ে নেই অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীও। বাঞ্জি জাম্পিং হোক বা প্যারাসেলিং— তনুশ্রী সাঙ্ঘাতিক অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়। তবে শুধু দু’টুকরো স্যুইমওয়্যারে বিকিনি শ্যুট করতে নারাজ তিনি। তাঁর বিকিনি শ্যুট মানেই বেশ স্টাইলিশ একটা ব্যাপার হতে হবে। ‘‘বাঙালি দর্শকদের একটা অংশ ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখেন। আর একটা অংশ আবার যথেষ্ট রক্ষণশীল। আমি এই দুই ধারার দর্শককেই সম্মান করি। তাই শুধু বিকিনিতে নিজেকে দেখাব এই ভেবে বিকিনি শ্যুট করতে পারব না আমি,’’ স্পষ্ট জানান অভিনেত্রী।

শুধু টলিউড নয়, বলিউডেও কাজের প্রচুর অভিজ্ঞতা নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর। বিকিনি শ্যুট তাঁর কাছে নতুন নয়। তবু সাবধান করলেন। ‘‘বিকিনি-বডি তৈরি করতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে। এই শরীর তৈরি করতে যা যা অত্যাচার করবেন, সেটা কিন্তু পরে আপনার চেহারাতেই ফুটে বেরোবে। মোনিকা বেলুচ্চি, প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকেও দারুণ লাগে বিকিনিতে। সাইজ জিরো হওয়ার দরকার কী? ধরুন আপনি বেশ ‘ভলাপচুয়াস’। তা হলেও কিন্তু আওয়ারগ্লাস ফিগার থাকতে পারে আপনার। সেটাই তো আপনার চার্ম,’’ পরামর্শ তাঁর।

পাওলি মনে করেন সুস্থ শরীরের সঙ্গে মনটাকেও সুস্থ রাখা খুব দরকার। আর বিকিনি শ্যুটের ক্ষেত্রে তো আরও সচেতন হতে হবে। বললেন, ‘‘ফিগার ঠিক রাখতে আমিও মাছভাত ছেড়ে স্টিমড ফিশ খাচ্ছি। তবে এক্সারসাইজের পাশাপাশি মেডিটেশনটাও করতে হবে।’’

অভিনেত্রী ঋতাভরীর কাছে কিন্তু বিকিনি তাঁর বাস্তব জীবনের প্রতিফলন ছাড়া কিছুই নয়।
কথায় কথায় জানালেন, ‘‘মায়ামিতে ঘুরতে গিয়ে দেখলাম সবাই বিকিনি পরেন। ষাট বছরের মহিলাও বিকিনি পরে ঘুরছেন। আমি স্থানীয় লোকেদের মতো বিকিনি পরে ঘুরব, সেটাই তো স্বাভাবিক, নাকি? সেই ছবিই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছি,’’ চটপট উত্তর নায়িকার।

ছবি: কৌশিক সরকার; হেয়ার-মেক আপ: উজ্জ্বল দেবনাথ;

স্টাইলিং: স্যান্ডি; লোকেশন সৌজন্য: সুইসোতেল কলকাতা;

রূপায়ণ ও বিন্যাস: নাসরিন খান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE