Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩

সলমন জিন্দা হ্যায়

নিষ্পাপ শিশুদের সুইসাইড বম্বার হিসেবে ব্যবহার, অয়েল রিফাইনারিতে অত্যাচার, ধর্মের নামে মগজধোলাই, শিরোচ্ছেদ, মেয়েদের দুর্বিষহ অবস্থা... এ তো পশ্চিম এশিয়ার এক দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০২
Share: Save:

ছবি শুরু। দেখা যাচ্ছে ইরাকের এক আধো অন্ধকার রাস্তা। মাথা হুডিতে ঢেকে হনহন করে এগিয়ে চলেছে কেউ। তস্য গলির এক বাড়ি থেকে একটা চিপ নিয়ে সে নিজের আস্তানায় পৌঁছয়। ক্যামেরা টপশট থেকে ক্রমশ তাকে ফোকাস করে। দেখা যায়, সে জনৈক বিদেশি। উলটো দিকের জানালা থেকে বন্দুকের নল তাকে লক্ষ রাখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত! সেই মুহূর্ত থেকেই ভয়ের একটা চোরা স্রোত আপনার মনের দখল নিতে শুরু করবে। আর সেই যে শিরদাঁড়া সোজা করে আপনি বসলেন, গোটা ছবিতে আর সিটে হেলান দিতে পারবেন না, নিশ্চিত।

Advertisement

তার পর পশ্চিম এশিয়া থেকে কখনও সুইৎজারল্যান্ড, কখনও মরক্কো, কখনও বা দিল্লি... জেমস বন্ডের ছবির মতো অনবরত বদলে গিয়েছে পটভূমিকা। নিষ্পাপ শিশুদের সুইসাইড বম্বার হিসেবে ব্যবহার, অয়েল রিফাইনারিতে অত্যাচার, ধর্মের নামে মগজধোলাই, শিরোচ্ছেদ, মেয়েদের দুর্বিষহ অবস্থা... এ তো পশ্চিম এশিয়ার এক দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। ইরাকের এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে হঠাৎই যদি কেউ ত্রাতা হয়ে দেখা দিত? হা ঈশ্বর, সত্যিই এমনটা হলে! ঠিক এটাই হয়েছে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-তে। আমাদের স্বপ্ন আর ছবির পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের চিত্রনাট্য মিলে গিয়েছে। এর ফল? দু’ঘণ্টা একচল্লিশ মিনিট আপনি সেই নিভাঁজ গল্পে বুঁদ।

২৫ জন ভারতীয় ও ১৫ জন পাকিস্তানি নার্সকে বন্দি করে বিশ্বজোড়া ত্রাস সৃষ্টি করা জঙ্গি সংগঠন আইএসসি। তারা নার্সদের এক হাসপাতালে আটকে রাখে। সেখানে জঙ্গিরা তাদের আহত নেতা আবু ওসমানকেও রাখে, যাতে ওই নার্সরা তাকে সুস্থ করে তুলতে পারে। নার্সদের ওখান থেকে মুক্ত করে আনতেই শুরু হয় র-এজেন্ট টাইগার ও আইএসআই-এজেন্ট জোয়ার ইরাক অভিযান। যার মানে, ভারতীয় ও পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা একসঙ্গে এক মিশনে। দুই দেশের মৈত্রীর ককটেল। কেয়া বাত!

টাইগার জিন্দা হ্যায়

Advertisement

পরিচালনা: আলি আব্বাস জাফর
অভিনয়: সলমন খান, ক্যাটরিনা কাইফ, সাজ্জাদ দেলাফ্রুজ
৬/১০

এ ধরনের লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্রে, টাইগার মানে সলমন সম্পর্কে নতুন করে আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে! কিছু কিছু চরিত্র থাকে, ছবিতে যাদের অভিনয়টা মুখ্য নয়। অতিমানবীয় কার্যকলাপ তারা কতটা অবলীলায় করতে পারে এবং দর্শকের মনে এই বিশ্বাস তৈরি করতে পারে যে, তার পক্ষেই সম্ভব পৃথিবীর যে কোনও দুরূহ কাজ অনায়াসে করা। এখানে আবার যুক্তিবুদ্ধি কাজ করে নাকি! সলমন সে বিশ্বাস তৈরিতে পুরোপুরি সফল। ‘টিউবলাইট’ না জ্বলতেও পারে, কিন্তু ‘টাইগার’ বক্স অফিসে শিকার ধরবেই। তবে ছবিটা যে এত রুদ্ধশ্বাস হয়েছে, তার কারণ শুধু সলমন নন। জঙ্গি নেতা আবু ওসমানের চরিত্রে সাজ্জাদ দেলাফ্রুজ অনবদ্য বলেও। আনন্দ প্লাস-এ এক সাক্ষাৎকারে সলমন বলেছিলেন, এ বারের ভিলেন অনেক শক্তিশালী। তাই টাইগারও এতটা কঠিন হতে পেরেছে। সত্যিই তো, বিপক্ষ যদি সমানে টক্কর না দেয়, খেলায় মজা কোথায়! সুদর্শন আবু ওসমানের হিমশীতল চাউনি, তার শব্দবন্ধ, চলন... যখনই সে পরদায় এসেছে, আপনি ভয় পাবেনই। আরও একজনের কথা বলতেই হয়। তিনি ক্যাটরিনা কাইফ। এত দিন অবধি ক্যাটরিনা মানেই ছিল চুঁইয়ে পড়া গ্ল্যামার। কিন্তু এ ছবি থেকে তাঁর নামের অনুষঙ্গে আরও কিছু কোয়ালিটি এল। মেকআপের চাকচিক্য নেই, তিনি মারকাটারি। যে অ্যাকশন দৃশ্য তিনি করেছেন, হলিউডের নায়িকারাও তারিফ করবেন। তবে হ্যাঁ, দর্শক একেবারে যে হতাশ হবেন, তা নয়। সলমনের সঙ্গে ‘সোয়াগ সে...’ আপনাদের বিদায় জানাবেন। তাই অক্লেশে বছর শেষ করতে পারেন ভূরিভোজ দিয়ে। কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার মতোই উপভোগ্য সলমন খান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.