Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Firki

মাস্ক-গ্লাভস-শিল্ড আর নজরদারি ‘ফিরকি’র সেটে, শুটিং করছেন বৃহন্নলা-কন্যা

এক ঘণ্টা অন্তর সেট, মেকআপ রুম, বাথরুম এবং উপস্থিত ৩৫ জনকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে ফি-দিন।

‘ফিরকি’ সিরিয়ালের একটি দৃশ্য।

‘ফিরকি’ সিরিয়ালের একটি দৃশ্য।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ১৮:০৩
Share: Save:

ঘড়িতে বেলা ২টো। তারাতলায় ভি-লাইন স্টুডিয়োর গেট ছাড়িয়ে কড়া নজরদারি পেরিয়ে ঢুকতেই গোলাপি শাড়ি আর সাদা মাস্ক, হলদে গ্লাভস পরা ‘লক্ষ্মী’-কে দেখা গেল। তিনি প্রস্তুত শুটের জন্য।

কিন্তু তাঁর কাছে পৌছনোর আগেই পুরো ঘর, দূরত্বে রাখা চেয়ার, কাঁধের ব্যাগ এবং জুতো পরা পা স্যানিটাইজড হয়ে গেল নিমেষে! এ ভাবেই এক ঘণ্টা অন্তর সেট, মেকআপ রুম, বাথরুম এবং উপস্থিত ৩৫ জনকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে ফি-দিন।


লক্ষ্মী চরিত্র করতে গিয়ে বৃহন্নলা সম্পর্কে ধারণা বদলেছে

বৃহন্নলার চরিত্রে প্রথম অভিনয়, অস্বস্তি হয়েছিল?

“একটু ভয় ছিলই। লোকে মানবে তো! এখন দেখছি মানুষ গ্রহণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা লক্ষ্মীর সঙ্গেই কথা বলতে চায়। প্রযোজক, পরিচালক, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমার উপর ভরসা রাখায় কৃতজ্ঞ”, আত্মবিশ্বাসী আর্যা।

‘ফিরকি’র একটি দৃশ্য।

আরও পড়ুন: ‘এখনও সুশান্তের শোকে বিহ্বল ধোনি’, বলছেন দুই তারকাকে নিয়ে কাজ করা পরিচালক

বৃহন্নলার মেয়েকে মানুষ করার জায়গা ধারাবাহিকে কেমন করে আসবে?

দৃপ্ত জবাব আর্যার: “শৈশব পেরিয়ে ফিরকি এখন কিশোরী। এ বার ওর মাকে চিনবে ও। তবে ফিরকি চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমি যে পরিণত হচ্ছি, মানুষ হিসেবে আমার বৃহন্নলাদের দেখার দৃষ্টিই বদলে গিয়েছে! এ বার দর্শকেরা দেখবেন, আমার মেয়ে কেমন করে আমায় চিনবে!” উচ্ছ্বসিত আর্যা। ছোট্ট ফিরকি ওরফে মাহির জন্যও মন কেমন করছে তার। শট দিতে ছুটলেন আর্যা। কোনও হইচই নেই কোথাও। কাজ চলছে নিঃশব্দে, নিয়ম মেনে। কোথাও আড্ডার জটলা নেই। যাঁরা যাচ্ছেন-আসছেন, তাঁদের প্রত্যেকের মুখে শিল্ড, মাস্ক, গ্লাভস। দেখা গেল, সরকারি কড়াকড়িতে বেজার হওয়ার বদলে সবাই নতুন নিয়ম স্বতঃস্ফূর্ত হয়েই মেনে নিয়েছেন মাত্র ক’দিনে।

নতুন ফিরকির প্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত

যেমন দর্শকও মেনে নিয়েছেন বদলে যাওয়া ‘ফিরকি’-কে। সাদা ফ্রক, মাথায় শিল্ড, গ্লাভস পরা অদৃজার বরুণ ধবন, আলিয়া ভট্ট, সুশান্ত সিংহ রাজপুত প্রিয় অভিনেতা হলেও স্টুডিয়োপাড়ায় মজায় আছে কিশোরী ‘ফিরকি’ অদৃজা মুখোপাধ্যায়। তার বাড়িতে নতুন বইখাতা আর স্টুডিয়োয় নতুন চরিত্র, সব মিলিয়ে দারুণ ব্যস্ত সে। ‘‘এই ফেস শিল্ড পরা কিন্তু বেশ ঝামেলার”, এক গাল হেসে জানিয়ে দিল অদৃজা।

একটু বড় ফিরকি বৃহন্নলা মায়ের শক্তি

অদৃজার পাশেই গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতি পোদ্দার। বৃহন্নলা মায়ের ঢাল হওয়ার শক্তি রাখে বলেই কি পরিণত ‘ফিরকি’ সম্প্রীতি পোদ্দার সেটের বাইরেও যথেষ্ট ধীর-স্থির? আন্তরিক ভাবে নিজের কথা বলতে গিয়ে জানালেন, “লক্ষ্মী মায়েদের জন্য এই লড়াইয়ের খুব দরকার। পর্দায় আমি সেই লড়াই লড়ব, যাতে সবাই বাস্তবে লড়ার কথা ভাবে।”

বিধিনিষেধ মেনেই শুটিং।

দর্শক বলছে লকডাউনের পর মা-মেয়ে কাছে কেন আসছে না?

লকডাউন পরবর্তী সময়ে অনেক দর্শক ফিরকি আর তার মাকে দূরে দেখতে নারাজ! “কিছু দিন তো মা-মেয়েকে এ ভাবেই দেখতে হবে। কাজ আর নিয়মের ভারসাম্য রাখতে হবে। দর্শক ঠিক বুঝতে পারবেন। সময় দিতে হবে।” বুঝিয়ে দিলেন আর্যা।

পরিণত ফিরকি জানতে পারবে তাঁর মা হিজড়ে, ধারাবাহিকের পরিচালক সৌমেন হালদার সরাসরি ক্লাইম্যাক্সে নিয়ে গেলেন আলোচনা। শাশুড়ি-বউমার চেনা কূটকচালি থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে একদম ভিন্ন স্বাদের ধারাবাহিক পরিচালনা করতে পেরে কতটা খুশি এবং কতখানি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি? প্রশ্নটা যেন পড়ার অপেক্ষায় ছিল। মুখের শিল্ড ছাপিয়ে উপচে উঠছিল উচ্ছ্বাস, “আমাকে এই চ্যালেঞ্জের যোগ্য মনে করায় আন্তরিক ধন্যবাদ প্রযোজনা সংস্থা অ্যাক্রোপলিসকে, প্রযোজক স্নিগ্ধা সুমিত বসুকে। কিন্তু দিনের পর দিন ‘লক্ষ্মী’রূপী আর্যা যে ভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন, সবাই যে মানের অভিনয় করছেন, আমি নিশ্চিত, ‘ফিরকি’ ছোটপর্দায় মাইলস্টোন গড়বে।”

আরও পড়ুন: আবার নাটক! সদ্যপ্রয়াত সুশান্তকে নিয়ে এ সব কী বলছেন রাখী?

কিন্তু বৃহস্পতিবার রিপোর্ট কার্ড

ধারাবাহিকের রেটিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সৌমেন এ বারেও সাবলীল, “শুধুই টিআরপি-র কথা মাথায় রাখলে সমাজের অনেক না বলা গল্প বলা হয় না। ফেব্রুয়ারি থেকে শো শুরু হওয়ার পরে দেখছি, দর্শকেরা নিজেদের আগ্রহেই এই ধারাবাহিক দেখছে। ফলে, আপনা থেকেই টিআরপি-র ভাবনা মুছে গিয়েছে।” ধারাবাহিকের রেটিংয়ের চেয়ে সৌমেন থেকে আর্যা দূরে সরিয়ে রাখা, অকারণে ঘেন্না করা মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করছেন এটাই তাঁদের কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

হিজড়ে দেখলে মুখ ঢাকার দিন শেষ!

সৌমেনের অকপট স্বীকারোক্তি: “একুশ শতকে দাঁড়িয়েও সহজ ভাষায় যাদের হিজড়ে বলি আমরা, তাদের রাস্তায় রাস্তায় হাত পাততে হয়। আর আমরাও ওঁদের দেখলে মিথ্যে ফোনের অজুহাতে পাশ কাটাই, গাড়ির কাচ তুলে দিই, খবরের কাগজ দিয়ে মুখে আড়াল টানি। এগুলো বোধহয় আর মানায় না। ওঁরাও এই সমাজেরই অংশ, এটা বলতে এবং বোঝাতেই এই ধারাবাহিক!

স্টুডিয়ো পাড়াকে লিখতে হবে না আর ‘নো স্মোকিং’

জোন থেকে বেরিয়ে আসার মুখে এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অর্ণব রায়ের খুশিমাখা মন্তব্য: “জানেন, স্টুডিয়ো চত্বরে আর পান-বিড়ি-সিগারেট-গুটখার বাড়াবাড়ি নেই! কেউ একটুও অনিয়ম করছেন না! স্টুডিয়োপাড়ায় করোনার কিন্তু এটাই ইতিবাচক দিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firki Bengali TV Serial Coronavirus Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE