Advertisement
E-Paper

বলিউডের সীমানায় আটকে থাকেননি শশী

পৃথ্বীরাজ কপূরের কনিষ্ঠ পুত্র, রাজ আর শাম্মীর এই ছোট ভাইটির মৃত্যুতেই কপূর পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম শেষ হল। চতুর্থ প্রজন্ম রণবীর কপূরই সংবাদমাধ্যমকে এ দিন খবরটা জানান। দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী অমিতাভ বচ্চন ছুটে যান তার পরপরই।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৭
স্মৃতি: কলকাতায় মৃণাল সেনের সঙ্গে সস্ত্রীক শশী কপূর। ফাইল চিত্র।

স্মৃতি: কলকাতায় মৃণাল সেনের সঙ্গে সস্ত্রীক শশী কপূর। ফাইল চিত্র।

কী অসম্ভব সুন্দর চোখের পলকগুলো!

এক নায়ক সম্পর্কে নায়িকার বর্ণনা। শশী কপূর প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুরের স্মৃতিচারণ। শশী সেট থেকে না সরলে তিনি ‘কাশ্মীর কি কলি’তে অভিনয় করতেই পারছিলেন না! খালি শশীর দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল!

পৃথ্বীরাজ কপূরের কনিষ্ঠ পুত্র, রাজ আর শাম্মীর এই ছোট ভাইটির মৃত্যুতেই কপূর পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম শেষ হল। চতুর্থ প্রজন্ম রণবীর কপূরই সংবাদমাধ্যমকে এ দিন খবরটা জানান। দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী অমিতাভ বচ্চন ছুটে যান তার পরপরই। সাতের দশকে লম্বা রাগী যুবক হিসেবে তাঁর একের পর এক ছবিতে পাশে ছিলেন শশী। তেমনই একটি ছবি, দিওয়ার-এর সুবাদে হিন্দির জনপ্রিয়তম সংলাপের তালিকায় প্রায়শ বাকিদের টেক্কা দেন শশী— ‘মেরে পাস মা হ্যায়!’

অভিনয় যে শশীর রক্তে, তার মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিজেই বলেছিলেন এক বার, ছোটবেলায় বকুনি খেয়ে কান্না শুরু হলে আপনা থেকেই আয়নার সামনে চলে যেতেন। বাবার হাত ধরে মঞ্চের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্বশিক্ষাও চলত। প্রেমও এল মঞ্চ থেকেই। কলকাতায় আলাপ হল মঞ্চাভিনেত্রী জেনিফার কেন্ডালের সঙ্গে। সে শহরের ফেয়ারলন হোটেল আজও শশী-জেনিফারের গল্প আর ছবিতে মোড়া। মুম্বইয়ে পৃথ্বী থিয়েটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও শশীই নিয়েছিলেন। সিনেমার ব্যস্ততা মঞ্চের প্রতি টানকে ঢেকে দেয়নি।

আরও পড়ুন: জীবনে কোনও রবিবার কাজ করেননি শশী

নায়কের ভূমিকায় আবির্ভাব ১৯৬১ সালে যশ চোপড়ার ‘ধর্মপুত্র’ ছবিতে। রাজ বা শাম্মীর সমতুল না হলেও ছয়-সাতের দশক জুড়ে শশীর হিটের সংখ্যা কম নয়। পরদেশিয়ো সে না আঁখিয়া মিলানা, তুম বিন জাঁউ কহাঁ, খিলতে হ্যায় গুল য়হাঁ-র মতো গান শশীর ঠোঁটেই। কিন্তু আর পাঁচ জনের চেয়ে শশীর স্বাতন্ত্র্য এই যে, তিনি ছকে বাঁধা বলিউডে আটকে থাকেননি। বরং মার্চেন্ট-আইভরি জুটির একের পর এক ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করে নিজের আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছিলেন।

সাতের দশকের শেষ দিকে যখন প্রযোজনায় এলেন, জোর দিলেন অন্য ধারার ছবিতেই। শ্যাম বেনেগালের ‘জুনুন’ ও ‘কলযুগ’, গিরিশ কারনাডের ‘উৎসব’। শশীর প্রযোজনাতেই অপর্ণা সেনের পরিচালনায় হাতেখড়ি— ‘৩৬, চৌরঙ্গি লেন’।

অপর্ণা তার আগে শশীর সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘বম্বে টকি’ ছবিতে। রাখীর প্রথম হিন্দি ছবি ‘শর্মিলি’-র নায়কও শশী। কলকাতায় জন্মানো শশীর বাঙালি-যোগ অবশ্য আরও বিস্তৃত। ‘কিসসা কাঠমান্ডু কা’-তে হিন্দিভাষী ফেলুদা তো শশীই। এ দিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পোস্ট করেন বার্লিনে সত্যজিতের ক্যামেরায় শশীর সঙ্গে তাঁর একটি ছবি!

১৯৮৪ সালে জেনিফারের মৃত্যুর পর থেকে এই শশীই নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করলেন। ভাঙতে থাকল শরীর। একাই থাকতেন। সপ্তাহে নিয়মিত সময় কাটাতেন ক্যানসার-আক্রান্তদের সঙ্গে। ক্যানসারই কেড়ে নিয়েছিল জেনিফারকে। সেই আঘাত ভুলতে পারেননি কোনও দিন।

রণবীর কপূর বারবার বলতেন, ‘‘আমাদের পরিবারের সবচেয়ে সুভদ্র মানুষ শশী আঙ্কল।’’ প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কারের জন্য নাম উঠেছিল। শশী নিজে মানা করে বলেন, পুরস্কার পাওয়ার মতো কিছু করেননি! পরে ‘নিউ দিল্লি টাইমস’-এ এসে তবে পুরস্কার নেন। বছর দুয়েক আগে শশীর ফালকে সম্মান পাওয়ার দিন জড়ো হয়েছিল পুরো পরিবার, শশীর নায়িকারা। সেটাই হয়ে রইল শশীর শেষ আনন্দময় ফ্রেম!

Shashi Kapoor Bollywood শশী কপূর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy