Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

‘বুম্বাদা বলল, শোনো, তুমি পাওলির সঙ্গে বেশি নেচো না’

শঙ্খ ঘোষের কবিতা, ‘শিল্পী’ পড়ছেন তিনি। একা। নিজের জন্য! বৈশাখের পড়ন্ত বিকেল। নিভে আসা আলোয় শঙ্খ ঘোষের কবিতা জড়িয়ে আছে তাঁর নৈঃশব্দে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

ছবির দৃশ্যে শিবপ্রসাদ, পাওলি।

ছবির দৃশ্যে শিবপ্রসাদ, পাওলি।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

ধ্বনি আর রঙে মিলে নিরঞ্জন শ্বাস
কিছু উড়ে চলে যায় কিছু পড়ে থাকে-
নিজেকে কি জানো তুমি? কতটুকু জানো?
তুমি তা-ই, মিডিয়া যা বানায় তোমাকে।

শঙ্খ ঘোষের কবিতা, ‘শিল্পী’ পড়ছেন তিনি। একা। নিজের জন্য! বৈশাখের পড়ন্ত বিকেল।
নিভে আসা আলোয় শঙ্খ ঘোষের কবিতা জড়িয়ে আছে তাঁর নৈঃশব্দে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
কিছু দূরে রাখা রবীন্দ্রনাথের বই। তাড়া নেই, ভিড় নেই। মোবাইলে ফেসবুক দেখা নেই। শব্দ আর কণ্ঠে ডুবে থাকা অভিনেতা পরিচালক আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে কাজ আর ব্যক্তিজগতে।

নিজেই প্রশ্ন করলেন প্রথম, ‘কণ্ঠ’ নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেমন?

এখনও ভাবেন এত?
প্রত্যেক দিন নতুন খেলা। আগের সেঞ্চুরি কেউ মনে রাখে না।

বাংলা ছবিতে উনডোজ প্রডাকশন তো সেঞ্চুরি করেই যাচ্ছে!
শুধু উনডোজ নয়, আমি মনে করি বাংলা ছবি খুব গুরুত্বপূর্ণ দিকে যাচ্ছে। যেখানে ‘নগরকীর্তন’-এর মতো ছবি, ‘মুখার্জিদার বউ’, ‘ভিঞ্চিদা’র মতো ছবি দর্শকের ভাল লাগছে। প্রত্যেকটা ছবির আলাদা কনটেন্ট। এটাই চ্যালেঞ্জ। সব পরিচালক এই চ্যালেঞ্জের সামনে নিজেদের দাঁড় করাচ্ছেন। আমি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ দেখলাম। দামিনী অসাধারণ অভিনয় করেছে। এখন অ্যাক্টরদের জন্য চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে। অভিনেতাদের সঙ্গে সুপারস্টার মিলেমিশে অভিনয় করছে। এই যে পোস্টারে দেখছি বুম্বাদা আর ঋত্বিক। অসাধারণ! ‘ইচ্ছে’ থেকেই এই জায়গাটা আমরা চেয়েছিলাম। এটা ভেবে খুব ভাল লাগছে।

আরও পড়ুন, হায় আল্লা, এটা কী করে করব: জয়া আহসান

সৃজিত মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, তিনি এমন একটা ছবি করবেন যেখানে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল আর কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় অভিনয় করবেন। এ রকম অফার পেলে কাজ করবেন?
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক আমার অভিনয়ের কথা ভেবেছেন তাঁর ছবিতে, এ জন্য আমি ধন্য। কিন্তু অভিনেতা শিবপ্রসাদ পরিচালক নন্দিতা রায়ের জন্যই কেবল থাক। অভিনেতা শিবপ্রসাদ পরিচালক নন্দিতা রায়ের জন্য এক্সক্লুসিভলি থাকুক। সে আর কোথাও যাবে না। অভিনেতা শিবপ্রসাদ পরিচালক নন্দিতা রায় এবং উন্ডোজ প্রোডাকশনের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে ‘কণ্ঠ’-র মতো একটা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছে বলে।


‘কণ্ঠ’-র শিবপ্রসাদ।


‘কণ্ঠ’-র ট্রেলার দেখে মনে হয়, এ ছবি শিল্পের মাধ্যমে দাম্পত্যের নির্মাণের কথা বলে...
নির্মাণ শব্দটা কি চমৎকার উল্লেখ হল! এই প্রশ্ন থেকে মনে আসে শঙ্খ ঘোষের একটি বইয়ের কথা, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’... এই ছবিটাও সেই সুরে বাঁধা। ছবিতে পাওলি আমায় নির্মাণ করেছে। জয়া আবার সৃষ্টি করেছে। পাওলি আমার স্ত্রী। সে আমার প্রেমিকা ছিল। আমাদের মধ্যে বন্ধুতা আছে। আমরা একসঙ্গে শো করি। বাচিক শিল্পী। এর মধ্যেই নিয়তির নিষ্ঠুর প্রবেশ। আমার কথা বলা বন্ধ। ও বলে যাচ্ছে। বলে যাচ্ছেই...ওকে আমি ঘেন্না করতে করতে শুরু করি। সহ্য করতে পারি না পাওলিকে। নেমে আসে ডিপ্রেশনের পিরিয়ড। সেখানে জয়া আসে আমায় নতুন করে তৈরি করতে। জয়া আমার বন্ধু...না-বলা বন্ধুত্বের জায়গা। মানুষের উত্তরণের জায়গায় দুই নারীর নির্মাণ আর সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি হয়!

পাওলি না জয়া— কাকে আগে রাখবেন?
পাওলির ক্ষেত্রে বলব ওর সঙ্গে অনেক দৃশ্য আছে যেখানে কথা নেই। আমার কষ্ট, যন্ত্রণা...একটা সময়ের পর দুটো মানুষের মধ্যে কথা নেই। অন্য দিকে, জয়া যেখানে কথা নেই জোর করে কথা নিয়ে আসছে। আলোর মতো। ঢেউয়ের মতো। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলা ছবির অন্যতম পাওয়ারফুল দুই অভিনেত্রী। একে অপরকে টক্কর দিচ্ছে তারা। আমি দর্শক হলে শুধু ওদের অভিনয় দেখার জন্য ছবিটা দেখতে যেতাম।

আরও পড়ুন, বিয়ের প্রথম ছবি শেয়ার করলেন নবনীতা

জয়া-পাওলির মধ্যে পাওলির সঙ্গেই বেশি প্রেম করেছেন নাকি?
প্রেম! পাগল নাকি। বাড়িতে আমার এক জন ডাকসাইটে সাংবাদিক আছেন। আমি নিঃশ্বাস নিলেও সে খবর তিনি পেয়ে যান। আর অভিনেত্রীদের সঙ্গে রোম্যান্স হবে না!

আপনার আর পাওলির বৃষ্টিভেজা দৃশ্য নিয়ে কী যেন বলেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়?
আরে! ও কিছু না। মজা করেছে। দেখুন আমি জীবনে রেগুলার প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করিনি তো। ও রকম লিরিকাল প্রেমের দৃশ্য...পাওলি আমায় লিড করেছে।

মানে পাওলি প্রেম করতে শিখিয়েছে?
শুনুন না! একটা দৃশ্য আছে আমার জল তেষ্টা পেয়েছে। পাওলি সেটা বুঝেও আমায় জল দেবে না। ওকে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে আমি জলের জন্য কথা বলে উঠি। কি কঠিন দৃশ্য! অসম্ভব ভায়োলেন্স আছে! ওই জায়গায় সংলাপ নেই। পাওলি জানে না ও কী করবে, আমিও না। সে দিন দৃশ্যটা হয়ে যাওয়ার পরেও আমার হাত-পা কাঁপছিল। কিছুতেই দৃশ্য থেকে বেরতে পারছিলাম না। ট্রেলারে আছে, পাওলিকে মারছি আমি। মারতে গিয়ে নিজের কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছি। অদ্ভুত সব দৃশ্য যা থেকে বেরতে কষ্ট হয়। অন্য দিকে জয়ার কথা বলি। জয়া ইসোভিগাল ভয়েসে কথা বলেছে এখানে। স্পিচ থেরাপিস্ট সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলল, প্রথম দিনেই জয়া অবাক করে আমাদের থেকেও ভাল কথা বলছে। এটা খুব বড় পাওয়া। ধরুন, জীবন বক্সিংয়ের রিং আর ভগবান উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছেন। এই খেলার শেষটা জানি আমি। নক আউট হব। কিন্তু কত রাউন্ডের পর নক আউট হব সেটাই আসল লড়াই। নিয়তি আমাকে মেরে এক ভাবে ক্লান্ত করতে পারবে না। আমি আমার ভেতরের স্পিরিট দিয়ে বলব যবে আমার ইচ্ছে হবে তবেই আমি নক আউট হব! এটাই ‘কণ্ঠ’। কত মানুষ আছে যারা নিজেদের জীবনে ভগবানকে অলমোস্ট চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তরতাজা বিয়াল্লিশ বছরের ছেলে যদি সেলসম্যান হয়, স্ট্রোকে তার ভয়েস চলে যাচ্ছে। সে একমাত্র আর্নিং মেম্বার। সে-ও ফেরে! কী করে? এটা শুধু ক্যান্সারের ছবি নয়। যে রকম ভাবে ‘ফরেস্টগাম’। ‘হেলেনকেলার’। ফেরার গল্প। ‘কণ্ঠ’-ও তাই।


‘কণ্ঠ’-র দৃশ্যে জয়ার সঙ্গে শিবপ্রসাদ।

রিয়্যাল লাইফে আজকের শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কোথায় দাঁড়িয়ে? নিজের খ্যাতিকে কেমন করে দেখেন?
আপনার সাক্ষাৎকারের শুরুতেই জানতে চাইলাম, ‘কণ্ঠ’র কেমন চাহিদা তৈরি হয়েছে? যে দিন এই প্রশ্ন করব না, ছবির রিলিজ নিয়ে চিন্তিত হব না, সে দিন আমার পতন।

এখনও পাঞ্জাবি পরতে ভালবাসেন?
হ্যাঁ। আজও বিকেলে মুড়ি খাই। আমার চারপাশের লোকেরা আমায় গ্রাউন্ডেড করে রাখে। আমি একটু অন্য রকম হলে দিদি (নন্দিতা রায়) আমায় বকবে। বলবে, ‘কী হচ্ছে শিবু? গ্রাউন্ডেড থাক।’ জিনিয়া বলবে, ‘মাথাটা কি সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে গেছে?’ আমার মা বলবে, ‘খুব বেড়েছে, হ্যাঁ? ঘাটের মড়া, বার করে দেব বাড়ি থেকে। দশটার সময় ফিরবে। নয় খাবার পাবে না।’

নিজেকে স্টার ভাবেন না তা হলে?
এর পরে আর সম্ভব? দেখুন ভাল কাজ করতে চাই। ব্যস! পশ্চিমবাংলার মতো দর্শক কোথাও পাব না। আমরা অডিয়েন্সের প্রোডাক্ট।

আরও পড়ুন, ‘সারা রাত ঘুমোতে পারিনি, কেঁদেছি, ভেবেছি কেন আমার ক্যানসার হল’

পরের ছবির শুট প্রায় শেষ। কিন্তু আজ তো কিছু বলবেন না?
পরের বার প্লিজ। তবে একটা কথা বলি, ‘কণ্ঠ’ অনেক বেশি নন্দিতাদির ছবি। যিনি গঠনমূলক সমালোচনায় আমায় তৈরি করেছেন। পৃথিবীতে গঠনমূলক সমালোচনার মানুষ না থাকলে সৃষ্টি অসম্ভব।

সে তো বুঝলাম! কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কী বললেন বলবেন তো!
উফ্ফ্! আপনি ধরে রেখেছেন! বুম্বাদা বলল, ‘শোনো, তুমি পাওলির সঙ্গে বেশি নেচো না।’ এই শাসনটা ভাল লাগে।

(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE