Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘আমাদের সম্পর্ক নিয়ে জয়ার কোনও আপত্তি ছিল না, যত দিন না...’

রাজ কপূরের ছেলের বিয়েতে হঠাৎ সিঁদুর পরে ‘তার’ সামনে হাজির তিনি। ডিম্পল তাঁকে কড়কানি দিয়েছিলেন রাজেশের থেকে দূরে থাকতে। রেখার জীবনের নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনা, সদ্য প্রকাশিত ‘রেখা - দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র পাতা থেকে...সত্তরের দশকের শেষে অমিতাভ বচ্চনের দুই সুপারহিট ছবি ‘মিস্টার নটবরলাল’ এবং ‘সুহাগ’‌য়ের নায়িকার নামও ঘটনাচক্রে রেখা। কেরিয়ারের শীর্ষে তখন অমিতাভ। তার আগের বছরই রিলিজ হয়েছে সুপার-ডুপারহিট ‘ডন’। সাফল্যের রেশ তখনও কাটেনি, এবং সেই সময়ই মুক্তি পায় রিভে়ঞ্জ ড্রামা ‘মিস্টার নটবরলাল’। হিন্দি সিনেমায় একটা মজার ব্যাপার আছে।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৭
Share: Save:

দ্য আদার উওম্যান

ব্যক্তিগত জীবনে যতই ঝড়ঝাপ্টা আসুক না কেন, ১৯৭০-এর শেষের দিকে রেখার কেরিয়ার এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছয়।

সত্তরের দশকের শেষে অমিতাভ বচ্চনের দুই সুপারহিট ছবি ‘মিস্টার নটবরলাল’ এবং ‘সুহাগ’‌য়ের নায়িকার নামও ঘটনাচক্রে রেখা। কেরিয়ারের শীর্ষে তখন অমিতাভ। তার আগের বছরই রিলিজ হয়েছে সুপার-ডুপারহিট ‘ডন’। সাফল্যের রেশ তখনও কাটেনি, এবং সেই সময়ই মুক্তি পায় রিভে়ঞ্জ ড্রামা ‘মিস্টার নটবরলাল’। হিন্দি সিনেমায় একটা মজার ব্যাপার আছে। এখানে দর্শকের মনে বহু দিন থেকে যান ছবির নায়ক-নায়িকারা, গানের সৌজন্যে। এবং সে কারণেই অমিতাভ–রেখা চিরকালীন সুপার কাপল। ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দর’‌য়ের ‘সালাম-এ-ইশক’ যেমন অচিরেই হয়ে উঠেছিল অমিতাভ-রেখার প্রেমের অ্যানথেম। এত দিন যা ছিল গুজব, সেটাই যেন বাস্তবে পরিণত হল ‘মিস্টার নটবরলাল’‌য়ের সময়। ‘পরদেশিয়া ইয়ে সচ হ্যয় পিয়া’ যেন দু’জনের প্রেমের স্বীকারোক্তি...

•••

মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পুরুষশাসিত মনোভাবের শিকার হলেন রেখা। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও পুরুষসঙ্গই তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অমিতাভ-জিতেন্দ্র-ধর্মেন্দ্র-সুনীল দত্ত — কে নেই সেই লিস্টে! বলিউডের একাংশ তখন একমত — বিবাহিত পুরুষদের সবচেয়ে বড় ‘থ্রেট’‌য়ের নাম রেখা। ‘ম্যান-ইটার’, ‘নিম্ফোম্যানিয়াক’, ‘সেক্স কিটেন’... রেখার তখন কত নাম ইন্ডাস্ট্রিতে। সাফল্যের মধ্যগগনে থেকেও ব্যক্তিগত জীবনে বারবার রক্তাক্ত হতে হয়েছে রেখাকে। তাঁর ‘ম্যান-ইটিং’ নিয়ে যখন জোর গসিপ বলিউডে, সেই সময় রেখার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন এমন একজন, যিনি পরিচিত ছিলেন স্বল্পবাক হিসেবে। ভদ্রমহিলার নাম নার্গিস দত্ত। ‘‘মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় রেখা ভীষণ সহজলভ্য। আবার কেউ কেউ তো ওকে ডাইনি বলেও ডাকে।

কখনও মনে হয় আমি ওকে বুঝতে পারি। আবার কখনও মনে হয় এই মেয়েটাকে এক বর্ণও চিনি না আমি। মনোরোগে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, শি ইজ লস্ট। ওর একজন পুরুষ দরকার, যে ওর পাশে থাকবে,’’ ১৯৭৬-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন নার্গিস। শোনা যায়, ডিম্পল কাপাডিয়া নাকি রেখাকে পরিষ্কার বলে দেন, ‘রাজেশ খন্নার ধারে কাছে ঘেঁষার চেষ্টাও কোরো না’।

•••

২২ জানুয়ারি ১৯৮০। ঋষি কপূর আর নীতু সিংহের বিয়ের অনুষ্ঠান। স্ত্রী জয়া ও বাবা-মাকে নিয়ে উপস্থিত অমিতাভ বচ্চন। নীতুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রেখাও সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। এক কোণে মনমোহন দেশাইয়ের সঙ্গে আড্ডায় মজে অমিতাভ। শাশুড়ি তেজি বচ্চনের পাশে চুপচাপ বসে জয়া। এমন সময় সাদা শাড়ি ও লাল টিপ পরে আগমন এক সুন্দরীর — রেখা। মুহূর্তের মধ্যে সবার চোখ রেখার দিকে। হবে না-ই বা কেন! তাঁর মাথায় যে এক চিলতে সিঁদুর। ক্যামেরার নিশানায় তখন সদ্যবিবাহিত ঋষি-নীতু নন, ফোকাসে তখন রেখা। এতক্ষণের সাদামাঠা পার্টি রঙিন গুঞ্জনে ভরে উঠল। কৌতূহলী জনতার জোর ফিসফাস, তবে কি রেখা বিয়ে করলেন?

‘সিনে ব্লিৎজ’ ম্যাগাজিন সেই সন্ধ্যা সম্পর্কে লিখল, ‘‘মাথায় সিঁদুর লাগিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইলেন রেখা? যে তিনি বিবাহিত?’’। শোনা যায়, নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখা চলে যান আর কে স্টুডিয়োর বাগানে। হঠাৎ কী এমন হল যে, এত লজ্জা পেলেন রেখা? পার্টিতে উপস্থিত লোকজন বললেন, দূরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে শুধু একজনকেই দেখছিলেন রেখা। ভদ্রলোকের নাম অমিতাভ বচ্চন। সেই পার্টিতে আসার আগে, হাতে চোট পেয়েছিলেন অমিতাভ। ব্যান্ডেজ বাঁধা। অনেক সাহস সঞ্চয় করে রেখা তাঁর ডাক্তার বান্ধবী স্নেহলতা পান্ডেকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন অমিতাভের দিকে। মুহূর্তে সব চোখ ধাওয়া করল রেখাকে। কয়েক মিনিট হাল্কা কথাবার্তা। সে প্রসঙ্গে স্টারডাস্ট পত্রিকা লিখেছিল, ‘‘বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে সংযত রাখেন জয়া। তবে বেশি সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। দু’চোখের কোণ দিয়ে ঝরে পড়ে জল।’’ রেখা পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও থেকে যায় অনেক অনুচ্চারিত প্রশ্ন। অনেক পরে রেখা সব বিতর্ক দূরে সরিয়ে বলেছিলেন যে, শ্যুটিং সেরে সোজা চলে যান ওই পার্টিতে। তাড়াহুড়োতে ভুলে গেছিলেন মেক আপ তুলতে। মাথার সিঁদুরটাও আর মোছা হয়নি...

•••

অনেক পরে একটি সাক্ষাৎকারে জয়া বচ্চন সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে কোনও দিন কারও ‘অ্যাফেয়ার’ ছিল না। ‘‘যার যা ইচ্ছে বলুক। ও (অমিতাভ) তো আমাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর তা সত্ত্বেও যদি আমার পিছনে অন্য কারও সঙ্গে কোনও সম্পর্কে জড়ায় তবে সেটা ওর প্রবলেম। আমার নয়। সেটা নিয়ে ওকেই বাঁচতে হবে। ভুগতে হবে ফলও,’’ সে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অমিতাভ-জায়া...

•••

রেখাকে নিয়ে বচ্চনবাড়িতে তখন অশান্তির কালো মেঘ। চতুর্দিকে রটে গেছে অমিতাভ-জয়ার বিয়ে ভাঙার খবর। এমন সময় মুখ খুললেন অমিতাভ। রেখার নাম না নিয়েও পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তাঁদের ডিভোর্স হচ্ছে না। ‘‘আমি ডিভোর্সে বিশ্বাস করি না। জয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটা একদম সঠিক ছিল। ফার্স্ট ক্লাস,’’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অমিতাভ। সেই একবারই অন্দরমহলের কথা অমিতাভের মুখে শোনা গেছিল। অমিতাভ সাবধানী হলেও, সে পথে হাঁটেননি রেখা। স্টারডাস্টে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে রেখা হঠাৎ দাবি করেন, বচ্চনবাড়িতে নাকি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জয়া। বলেন, ‘‘আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও আপত্তি ছিল না জয়ার, যত দিন ও মনে করত এটা নিছকই একটা ‘ফ্লিং’। কিন্তু যখন দেখল আমরা মনে মনে অনেক দূর এগিয়ে গেছি, সেটা জয়া মেনে নিতে পারেনি। একদিন আমাকে ডিনারে ডেকেছিল। সারা সন্ধে অনেক কথা হল, অমিতাভের নামও উঠল না। আমি যখন বেরিয়ে আসছিলাম, জয়া বলল, যাই-ই হোক, আমি কিন্তু কখনও অমিতকে ছেড়ে যাব না।’’

সত্যি-মিথ্যের বাইরে বলিউড তখন পর্দায় দেখতে চাইছিল এই ঘটনা। প্রযোজকদের একটা অংশ চেষ্টা করছিলেন তিনজনকে এক ফ্রেমে আনতে। যদিও তার কিছু দিন আগেই জয়ার স্বামী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রেখার সঙ্গে আর কোনও দিন কাজ করবেন না। তত দিনে ‘সিলসিলা’র গন্ধ পেয়ে গিয়েছে বলিউড।

‘তুম হোতি তো ক্যায়সা হোতা’... ‘সিলসিলা’য় অমিতাভ-রেখা

সিলসিলা

শ্রীনগরে তিনু আনন্দের ‘কালিয়া’ ছবির শ্যুটিং চলছে। ১৯৮০ সালের ২১ অক্টোবর। ডিনারে অমিতাভের সঙ্গে মিট করেন যশ চোপড়া। পরে শাহরুখ খানকে এক ইন্টারভিউতে যশ বলেছিলেন ‘‘সবাই চলে যাওয়ার পর আমার ঘরে এল অমিতাভ। জিজ্ঞেস করল ‘আর ইউ শিওর উইথ দ্য কাস্টিং অব দ্য ফিল্ম? আর ইউ হ্যাপি?’’ আমি বলেছিলাম, আমি খুশি নই। অমিতাভ বলল ‘‘আপনার কী মনে হয়, এর আইডিয়াল কাস্টিং কী হতে পারে।’’ যশ সটান অমিতাভকে বলে বসলেন, ছবিতে অমিতাভের জীবনে তৃতীয় মহিলার রোলে তিনি রেখাকেই দেখতে চান। স্ত্রীর রোলে জয়া বচ্চন।

৫ মিনিট সময় নেন অমিতাভ। তারপর রাজি হন। তবে নিজে জয়াকে বলার ঝুঁকিটা নেননি। তিনি চেয়েছিলেন অভিনয়ের প্রস্তাব যশ নিজে জয়াকে দিক। ২২ অক্টোবর অমিতাভ-যশ মুম্বইয়ের ফ্লাইট ধরেন। দু’জনেই জানতেন কাস্টিংয়ের ব্যাপারটা সহজ হবে না।

কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না জয়া। এমনকী তাঁকে সিনেমার গল্পটুকু শোনাতেও বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। পুরো গল্প শোনার পরেও জয়া একেবারে ভাবলেশহীন হয়েই বসে ছিলেন। ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত জয়া রোলটা করার জন্য এতটুকুও আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু শোনা যায় ‘সিলসিলা’র লাস্ট সিনটার জন্যই নাকি রোলটা অ্যাকসেপ্ট করেন জয়া। সেই সিনটা, যেখানে অমিতাভকে জয়া বলছেন ‘‘আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে’’। এই ক্লাইম্যাক্সটাই রাজি হওয়ার একমাত্র কারণ।

•••

‘সিলসিলা’র গ্রেট কাস্টিং ক্যু-টা এই ভাবেই অ্যাচিভ করেছিলেন যশ চোপড়া। অবশেষে অমিতাভ, জয়া ও রেখা তিনজনেই রাজি হন। ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এমনকী অমিতাভকে টিপ্পনীও কম শুনতে হয়নি। অনেকেই বলেছিলেন অমিতাভের কেরিয়ার বাঁচাতেই ওয়াইফ এবং মিসস্ট্রেস একসঙ্গে নেমেছেন। কেউ কেউ আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অমিতাভকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। অমিতাভের প্রতিদ্বন্দ্বী, এক সময়ের সুপারস্টার রাজেশ খন্নাও এই সিদ্ধান্তকে ‘হাইট অব ডেসপারেশন’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে মজার ছলে একটি গল্পও বলেছিলেন রাজেশ। ঘটনাটা এ রকম: সমু মুখোপাধ্যায়ের পার্টিতে প্রযোজক গুলশন রাই ডিম্পল কাপাডিয়াকে ডেকে বলেন ‘‘তুমি একমাত্র তোমার স্বামীর কেরিয়ার বাঁচাতে পারো, ওর সঙ্গে এক ছবিতে কাজ করে।’’

তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়েছিলেন ডিম্পল। বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি এ রকম কোনও সাজেশন আমার স্বামীকে দিই, তা হলে ও সুইসাইড করবে।’’

এই সব সমালোচনার মধ্যে ‘সিলসিলা’র টিম কাশ্মীর রওনা হয় শ্যুটিং করতে।

বাকিটা ইতিহাস...

বইয়ের অনূদিত অংশবিশেষ
‘রেখা – দ্য আনটোল্ড স্টোরি’
লেখক — ইয়াসির উসমান
প্রকাশক — জাগরনট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rekha Biography The Untold Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE