ইমন চক্রবর্তী।—ফাইল চিত্র।
নিজের প্রতিবাদ শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ রাখলেন না সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। সোমবার রাতে ই-মেল মারফত কোতোয়ালি থানায় কৃষ্ণনগর সাংস্কৃতিক মঞ্চের সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি।
গত রবিবার সাংস্কৃতিক মঞ্চ আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে অনন্ত তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের জবরদস্তি আটকে হেনস্থা করেছেন বলে ইমনের অভিযোগ। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিনযোগ্য ৩৪১ ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।
গত দু’দিন ধরেই সঙ্গীতানুষ্ঠানে গোলমাল ও ইমনের করা অভিযোগ নিয়ে কৃষ্ণনগর শহর তোলপাড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। এই রকম পরিস্থিতিতে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ানোয় বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। শিল্পীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার পক্ষে সওয়ালের বিপরীতে দর্শকদের অধিকারের দাবিতে কার্যত দু’টি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন কৃষ্ণনাগরিকেরা।
শিল্পীকে আরও গান শোনানোর জন্য চাপ দিয়ে আটকে রাখাটা যে অন্যায়, সেটা প্রায় সকলেই মানছেন। কিন্তু টিকিট কেটে যাঁরা গান শুনতে এসেছেন তাঁদের মনোরঞ্জনের দায় শিল্পীরও থাকে, এমন সওয়ালও করছেন নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, দর্শকদের তরফ থেকে যে গানের অনুরোধ ছিল তার দু’একটি গাইলেই হয়তো বিষয়টা এত দূর গড়াত না। অনন্ত বলছেন, “মামলা যখন হয়েছে, তখন নয় জেল খাটব। তবে আমরা শিক্ষিত সাংস্কৃতিক কর্মী। পাল্টা অভিযোগের পথে হাঁটব না।”
গত রবিবার কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে গান গাইতে আসেন ইমন। তাঁর অভিযোগ, তিনি গান শেষ করতেই আয়োজকেরা তাঁকে আরও গান গাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অনন্ত তাঁদের গাড়ি আটকে গেটে তালা দেন। অভব্য ব্যবহার এবং হেনস্থাও করা হয়েছে। দর্শকদেরই একাংশ দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করেছেন জানিয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের একাংশ কিন্তু মনে করছেন, শ্রোতার অনুরোধ না রেখে অসহিষ্ণু আচরণ করেছেন ইমনই। বিষয়টি থানায় নিয়ে যাওয়াও তাঁরা ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মনে করছেন। এঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘ইমন ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন গান গাইতে। দর্শকদের থেকে একাধিক গানের অনুরোধ আসছিল। ইমন তা উপেক্ষা করে আচমকা মঞ্চ ছেড়ে যেতেই অনেকের ধৈর্যচ্যুতি হয়।’’
শহরের বাসিন্দা নিরঞ্জন পালের কথায়, “শিল্পীকে আটকে রেখে অন্যায় করা হয়েছে, এটা তো আমরা প্রথম থেকেই বলছি। কিন্তু তা বলে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটাও মানতে পারছি না। আর দুটো গান বেশি গাইলে কী ক্ষতি হত? এ ধরনের জলসায় শ্রোতারা তো পছন্দের গানের আবদার করেই থাকেন!” অন্য এক নাগরিক কবীর শেখ আবার বলছেন, “রুখে দাঁড়ানোর এবং বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। এটা শিল্পীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy