Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নায়িকার নতুন জাহাঁ

একসময় তিনি ছিলেন টালিগঞ্জের অন্যতম বিতর্কিত হিরোইন। সে সব দিন পেরিয়ে নতুন বয়ফ্রেন্ডে এ যেন অন্য নুসরত জাহান। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়একসময় তিনি ছিলেন টালিগঞ্জের অন্যতম বিতর্কিত হিরোইন। সে সব দিন পেরিয়ে নতুন বয়ফ্রেন্ডে এ যেন অন্য নুসরত জাহান। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়

ছবি: সোমনাথ রায়

ছবি: সোমনাথ রায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০১
Share: Save:

এই নায়িকাকে পাওয়াই যায় না। হয় তিনি ইলেকশনের প্রচারে ব্যস্ত, নয়তো নিজের পরের ছবির কাজে। তিন তিনটে দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করার পর সে দিন তিনি হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালের পুলের ধারে বসলেন আড্ডা দিতে। শর্ত একটাই — পুরনো বয়ফ্রেন্ডের নাম করা যাবে না।

নুসরতকে ইন্টারভিউ করতে যাওয়া মানেই নানা ঝামেলা এমনটাই সবাই বলে...

(হাসি) কেন, কেন?

দেড় বছর আগে আপনার ইন্টারভিউ বেরোনোর পর আপনি ফেসবুকে কত কিছু লিখেছিলেন আমাদের কাগজের বিরুদ্ধে।

হ্যাঁ, লিখেছিলাম ফেসবুকে। আমি জীবনে কোনও দিন কিছু রিগ্রেট করি না। কিন্তু পরে মনে হয়েছিল, এটা কি ঠিক করলাম না ভুল। প্লিজ, ও সব কথা আর মনে করতে চাই না। আই হ্যাভ মুভড্ অন।

ওকে। আর কী চলছে বলুন জীবনে?

ছবির প্রমোশন নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত। এ ছাড়াও দেবের সঙ্গে আমার যে ছবিটা রয়েছে সেটার শ্যুটিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততা চরমে।

কোথায় আর শ্যুটিং করছেন। রোজই তো দেখছি আপনি ইলেকশন র‌্যালিতে...

একদমই নয়। ইনফ্যাক্ট এ বছর কাজের ব্যস্ততার জন্য খুব কমই প্রচারে গিয়েছি।

আচ্ছা নুসরত, আপনার মানবিক ইন্টারভিউ করতে চাই, টিপিকাল হিট অ্যান্ড রান ইন্টারভিউ নয়।

তাই করুন। আমারও ভাল লাগে না ওই হিট অ্যান্ড রান ইন্টারভিউগুলো।

আজকে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার? সেই বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্কটা ভুল ছিল?

কে বয়ফ্রেন্ড?

আপনার সেই বয়ফ্রেন্ড?

হু ইজ দ্যাট?

আচ্ছা বুঝলাম।

ইয়েস। আজকে আমার একজন বয়ফ্রেন্ড আছে, আগে কে আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল সেটা ভাবতেই চাই না। আর প্লিজ, আপনারাও ওই টপিকটা তুলবেন না।

আমার সেই বিষয়ে কথা বলতে অসুবিধে নেই, আমার কারও নাম নিতেও আপত্তি নেই। কিন্তু আমার মা-বাবা ভীষণ অ্যাফেক্টেড হয়ে পড়েন। আমি আর ওঁদের কষ্ট দিতে চাই না। আর জীবনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি, আর পেছনে ফিরে তাকানোর মানে হয় না।

সেই সময়টা তো সহজ ছিল না?

একদমই ছিল না। ইট ওয়াজ এ নাইটমেয়ার। ভাল লাগে না ওই দিনগুলোর কথা মনে করতে। ওটা একটা নেগেটিভ স্পেস যেখানে আমি ফিরতে চাই না। আগের ইন্টারভিউতেও আমি নাম নিতে বারণ করেছিলাম...

নাম নিতে বারণ করেছিলেন কিনা জানি না কিন্তু আপনাকে তো তিন বার পড়ানো হয়েছিল ইন্টারভিউটা।

হ্যাঁ, তা হয়েছিল। হয়তো তখন অত বুঝতাম না ব্যাপারগুলো। তবে আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না। এখন আমি হ্যাপি ...

উইথ ইওর কারেন্ট বয়ফ্রেন্ড?

এভরিবডি হ্যাজ এ বয়ফ্রেন্ড। অ্যান্ড আই অ্যাম স্ট্রেট। (হাসি)

হিরোইনরা তো বয়ফ্রেন্ডদের কথা স্বীকার করেন না।

আমি মানুষ আগে, হিরোইন পরে।

গত ইন্টারভিউতে ঝামেলা হয়েছিল আপনার রোলেক্স ঘড়ি নিয়ে।

কারেক্ট। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি তো সেই রকম কাজ করেন না, রোলেক্স ঘড়ি কোথা থেকে এল। আপনারা জার্নালিস্টরাই যদি এই রকম প্রশ্ন করেন, তা হলে ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের কাজও আপনারা করতে পারবেন, তাই না?

সেটা জানি না, কিন্তু প্রশ্নটা করা হয়েছিল বোধহয় আপনার ফিল্মোগ্রাফি দেখে। অত কম কাজ করে... আপনার লাইফস্টাইলটা তো নিশ্চয়ই আপনার সিনেমার জন্য নয়, লাইভ শোগুলোর জন্য?

এক্সজ্যাক্টলি। আমি সেটা বলেওছিলাম খুব পোলাইটলি। এখন সব অতীত, আর ভাবতে চাই না। এখন মন দিয়ে শুধু কাজ করতে চাই। এই তো পয়লা বৈশাখে ‘পাওয়ার’ রিলিজ করবে।

হ্যাঁ, কিন্তু ট্রেলারে তো আপনাকে দেখলামই না।

আমি তো আর এডিটর নই...

নাকি ইন্ডাস্ট্রিটা এখনও হিরোরাই ডমিনেট করেন?

(হাসি) রিয়্যালিটি কী সেটা সবাই জানে। আমি ও সব নিয়ে কিছু বলব না। আমার কাজটা যাতে মানুষের পছন্দ হয়, আমি সেটার চেষ্টা করব।

অনেকেই বলছেন, আজকে ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর হিরোইন নাকি আপনি।

বাপরে! আই হেট বিয়িং র‌্যাঙ্কড।

বলা হচ্ছে, কারণ একই সঙ্গে আপনার কাছে দেব-জিতের ছবি রয়েছে। সঙ্গে সৃজিতের ‘জুলফিকার’, অরিন্দম শীলের ‘হর হর ব্যোমকেশ’‌য়েও আপনি। এত সহজে টপ হিরো আর ডিরেক্টরদের সঙ্গে আর্বান আর কমার্শিয়াল – দুই ঘরানার ছবি তো অন্য কোনও হিরোইন করছেন না...

থ্যাঙ্ক ইউ ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট। এটা আমার সৌভাগ্য যে, আমার কাছে দু’ধরনের ছবির অফার আসছে। যে ছবিগুলোর কথা আপনি বললেন, সেগুলোর শ্যুটিংও কিন্তু আমি পাশাপাশি করেছি।

কোনটা বেশি এনজয় করেন আপনি — কমার্শিয়াল না আর্বান ছবি?

দু’টোই। কমার্শিয়াল ছবিতে নাচতেও বেশ লাগে আবার সৃজিতের ছবিতে ইনটেন্স রোল করতেও খারাপ লাগে না।

সৃজিত তো ‘জুলফিকার’‌য়ে আপনার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করেছে।

সৃজিত আমাকে আর দেবকে শুধু বলেছিল, ‘‘আমাকে সারপ্রাইজ করো তোমরা।’’ এটাও বলছিল, ‘‘স্ক্রিপ্টটা হয়তো আমার কিন্তু তোমরা নিজেদের মতো করে ডায়লগ বলো।’’ ওটাই ছিল ব্রিফ। যদি ওর ভাল লাগে তা হলে আই অ্যাম হ্যাপি।

এখানে আর একটা কথাও জিজ্ঞেস করি। আপনি প্রায় পাঁচ বছর কাজ করছেন, কিন্তু আপনার অনেকটাই ধোঁয়াশায়। আমি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ডটা জানতে চাই।

শিওর। আমি কলকাতার মেয়ে…

পড়াশোনা?

আমি কুইন অব দ্য মিশনস-এ পড়তাম। তারপর ভবানীপুর কলেজ। আমার বাবা পিয়ারলেসে কাজ করতেন। মা ছিলেন শিক্ষিকা। আমরা দুই বোন। আমার বোন আমার থেকে ছ’বছরের ছোট। ও হায়দরাবাদের নিফট-য়ে পড়াশোনা করছে।

নুসরত, আপনি এই ইন্টারভিউটা পুরোটাই ইংরাজিতে দিচ্ছেন। আপনার লাইফস্টাইল ভীষণ পলিশড। আমি এটার সঙ্গে আপনার ব্যাপারে কিছু ধারণাকে মেলাতে পারছি না।

কী রকম বলুন?

যখন সেই ঝামেলা হয়েছিল, তখন শুনেছিলাম আপনার ফ্যামিলির ফিনানশিয়াল অবস্থা নাকি খুব খারাপ। এটাও শুনেছিলাম আপনি নাকি মফস্সলের মেয়ে, কলকাতায় বস্তিতে থাকেন।

(হাসি) হ্যাঁ, আমার কানেও এসেছিল কিছু কথা। আমি হাসব না কাঁদব, সেটাই বুঝতে পারতাম না। লোকের কাজ যে সত্যি কত কম এগুলো তারই প্রমাণ। আপনাকে তো আজকে পুরো ব্যাকগ্রাউন্ডটা বললাম। বানিয়ে বানিয়ে তো বলি না।

খারাপ লাগে না শুনতে?

(বিরক্ত হয়ে) না। লোকের কথা শুনে খারাপ লাগলে তো এগোতেই পারব না জীবনে। বদার করি না।

আপনার মধ্যে কিন্তু একটা ‘খুন্নস’ আছে ?

আছে বলছেন? (হাসি) আমার মনে হয় না। আমি নিজের জগতে থাকতে ভালবাসি, কাজ করি, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করি — ব্যস। গসিপ টসিপ নিয়ে ভাবি না।

কিন্তু গসিপ তো আপনাকে নিয়ে আরও একটা আছে...

কী সেটা?

লোকে বলে আপনি শ্রীকান্ত মোহতার সবচেয়ে প্রিয় হিরোইন।

(হাসি) তাই বলে বুঝি?

বলে তো বটেই। আর এটা তো কেরিয়ারের জন্য ভাল গসিপ। ইন্ডাস্ট্রির একজন টপ প্রোডিউসরের সব বড় ছবিতে আপনি।

সব বড় ছবিতে কি না জানি না বাট আই রেসপেক্ট হিম। প্রচুর কথা হয় শ্রীকান্তদার সঙ্গে। আমার মনে হয়, আমার একটা স্পিরিচুয়াল দিক আছে যেটা ওঁর ভাল লাগে।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

আপনি স্পিরিচুয়াল?

ইয়েস। অসম্ভব স্পিরিচুয়াল। আমার বাড়িতে কোরান আছে, মা দূর্গার মূর্তিও আছে। আমি বাড়ি থেকে বেরোবার আগে ধূপ জ্বেলে বেরোই। আমার কাছে সব ধর্ম সমান। কারও যদি তাতে কোনও অসুবিধা হয়, তা হলে সেটা তাদের প্রবলেম, আমার নয়।

আপনি তো হোয়াটসঅ্যাপে টালিগঞ্জের ‘গ্যাং অব গার্লস’‌য়ের ফাউন্ডার মেম্বার।

(হাসি) হ্যাঁ, ওটা আমার আইডিয়া। আমরা পাঁচজন হিরোইন রয়েছি ওই গ্রুপে, প্রচুর আড্ডা হয় সারাদিন।

ওই গ্রুপে থাকতে গেলে নাকি একটা ক্রাইটেরিয়া আছে?

কী ক্রাইটেরিয়া?

ওখানে নাকি সেই হিরোইনরাই আছেন, যাঁদের বয়ফ্রেন্ড বিজনেসম্যান। ব্যবসায়ী বয়ফ্রেন্ড না থাকলে নাকি নো মেম্বারশিপ?

(হাসি) একদমই নয়। আমার বয়ফ্রেন্ড তো বিজনেসম্যান নয়।

আপনার বয়ফ্রেন্ড কী করেন?

(হাসি) আপনাকে কেন বলব? এ বার তো আমরা একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানও করছি।

উইথ বয়ফ্রেন্ডস?

না, না, শুধু আমরা মেয়েরা। ওনলি গার্লস হলে হুল্লোড়টা কী লেভেলে হয়, আপনি ভাবতেও পারছেন না।

প্লিজ, আনন্দplus-এ ছবি পাঠাবেন আপনাদের হলিডের?

একদমই পাঠাচ্ছি না। কাউকে পাঠাব না। হোয়াট হ্যাপেনস ইন দ্য ড্রেসিং রুম স্টেস ইন দ্য ড্রেসিং রুম। (হাসি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nusrat Jahan interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE