‘কে আপন কে পর’ সিরিয়ালের সেট।
একান্নবর্তী পরিবারে যতই অশান্তির ঝড় উঠুক, মন কষাকষি চলুক, রাতের খাবারটা একসঙ্গে না খেলেই যেন নয়। সবাই মিলে খাওয়া, গল্প, আড্ডায় মানভঞ্জন তো হয়ই, সব অভিমানও গলে জল হয়ে যায়। ‘কে আপন কে পর’-এর সেটও তেমনই।
বিশাল স্টুডিয়োর এক তলা জুড়ে ঘর করে সেনগুপ্ত পরিবার। ভিতরে ঢুকতেই ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট। সারি সারি কামরা জুড়ে কোথাও শোয়ার ঘর, কোথাও হেঁশেল, কোথাও নিছকই আড্ডাস্থল। জড়ানো তার, ক্যামেরার ঝলকানি, রিফ্লেক্টরের আড়াল পেরোতেই চোখে পড়ল কলাকুশলীকে। শট চলছে। জবা উত্তেজিত, অথচ স্বভাবসুলভ স্নিগ্ধতায় সংসারের অমঙ্গল বোঝানোর চেষ্টা করছে। দু’টি টেকেই শট ওকে। তার পরেই জবা-পরম-সার্থক-ইতুর চোখমুখের টেনশন উধাও। চরিত্রের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন অভিনেতারা, পল্লবী-বিশ্বজিৎ-ইন্দ্রনীল-তিতলি।
বিকেলবেলায় এসি ফ্লোর ছেড়ে সকলে বেরিয়ে আসেন সামনের চাতালে। বেঞ্চির উপরে বসে চলে আড্ডা। কখনও চা-মুড়ি, কখনও ডেকে নেন ফুচকাওয়ালাকে। এই আড্ডার ফাঁকেই মা-ছেলে জবা-সার্থক হয়ে যায় বন্ধু। ‘‘ইন্দ্রনীল (সার্থক) বয়সে আমার চেয়ে বড়। শুটিং চলাকালীন ও আমাকে ‘মা’ বলে। সেটা আবার কড়ায়-গণ্ডায় পুষিয়ে নেয়,’’ হেসে বললেন পল্লবী (জবা)। ‘‘ইতুর প্রথম কাজই হল সেজেগুজে টিকটক অ্যাপে মেতে ওঠা। না হলে ওর দিনটাই মাটি,’’ যোগ করলেন বিশ্বজিৎ (পরম)।
একে অপরকে বড় কাছ থেকে চেনেন তাঁরা। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘দিনের বেশির ভাগ সময়টাই এখানে কাটে। ফলে এটাই পরিবার।’’ ইদানীং আবার বিশ্বজিৎ সেটের সকলকে নেশা ধরিয়েছেন ওয়েব সিরিজ় দেখার।
তবে এত কিছুর মধ্যে পরিবারের মাথা চণ্ডীদাস (অমিয়ভূষণ) ও কল্যাণীর (লতা) সঙ্গে অন্তরের যোগ সকলের। চণ্ডীদাস বলছেন, ‘‘এখন একসঙ্গে থাকার সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। সেটাই পর্দায় তুলে ধরতে গিয়ে আমরাও যেন পরিবার হয়ে গিয়েছি।’’ তাঁরা যে এক সূত্রে বাঁধা, তা স্পষ্ট হল অনুপস্থিত অভিনেতাদের প্রসঙ্গ উঠতেই। সেটে কোথাও নেই সিমরন (কোয়েল) বা মোনালিসা (তন্দ্রা)। অথচ তাঁরা বারবার ফিরে এলেন আড্ডায়। বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘আমরা তবু নিজেদের মধ্যে গল্প করি। আর সিমরন তো অমুক দাদা, তমুক দিদি, সকলের সঙ্গে হাহা হিহি করে। এখানে খুঁজে না পেলে পাশের ফ্লোরে যান। ওকে পাবেনই!’’
প্যাক-আপ হতেই হুড়মুড়িয়ে যে যাঁর বাড়ির পথে পা বাড়ালেন। পর দিন সেটের পরিবারে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি রয়ে গেল।
ছবি: নিরুপম দত্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy