প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। তখন মেয়েটার কতই বা বয়স? হিসেব তো বলছে, চার। ওই বয়সে প্রথম ক্যামেরার সামনে। সে অবশ্য দক্ষিণী ছবিতে। কিন্তু মেঘে মেঘে বয়স যত বাড়ল, মেয়ে যেন হয়ে উঠল লর্ড বায়রনের কবিতার সেই লাইনগুলোর জীবন্ত প্রতিরূপ... ‘শি ওয়াকস ইন বিউটি, লাইক দ্য নাইট অব ক্লাউডলেস ক্লাইমস অ্যান্ড স্টারি স্কাইজ’। শ্রীদেবী। ঝিকিয়ে ওঠা তারাদের মাঝখানে রাজকীয় ‘চাঁদনী’, যাঁর সফেদ নরম শাড়ি-শ্বেতশুভ্র গয়নার ইমেজে কোনও ক্ষয়-লয় নেই। দক্ষিণী ছবিতে যে সেই মেয়ে রাজত্ব করবে, তাতে সংশয় সিকিমাত্রও ছিল না। আর তাঁর রূপের দাপটে যখন বলিউডও ভেসে গেল, অবাক হননি কেউই।
কিন্তু খোলা চোখে চাঁদের গায়েও দাগ দ্যাখে নশ্বর মানুষ। সাম্রাজ্য গড়তে হলে নামতে হবে না যুদ্ধক্ষেত্রের রক্ত-বারুদে? দক্ষিণে একের পর এক হিট ছবি করেও শ্রীদেবী যখন প্রথম বলিউড ছবি ‘সোলওয়া সাওন’-এ অভিনয় করেন, ব্যর্থতা দেখতে হয় তাঁকে। ১৯৭৯ সাল সেটা। চার বছর অপেক্ষা করার পর ১৯৮৩ সালে জিতেন্দ্রর সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘হিম্মতওয়ালা’য় সাফল্য দেখলেন নায়িকা। অনেক লড়েছেন। ঢাল-তরোয়াল দুই-ই তখন মা। আর সম্বল বলতে ঊরু-ভঙ্গিমায় বিদ্যুতের ঝলক, মোহিনী রূপে চাবুক অভিব্যক্তি।
দক্ষিণে কমল হাসন-শ্রীদেবী জুটির মোক্ষম জবাব দিয়েছিল বলিউড, জিতেন্দ্র-শ্রীদেবীকে এক ও একাকার করে দিয়ে। ১৮টা ছবিতে কাজ করেছিলেন দু’জন। তার পরেও জিতেন্দ্র এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘ওর সঙ্গে পা মেলাতে পারতাম না। এত ব্রিলিয়ান্ট ডান্সার ও!’ কে ভুলতে পারে, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’য় নাকের নীচে ছোট্ট গোঁফ, ঝলঝলে পাতলুন, বেঁটে কোট-হ্যাট আর হাতে ছড়ি নিয়ে শ্রীদেবীর সেই চার্লি চ্যাপলিন অ্যাক্ট? পরের প্রজন্মও কি পেরেছিল তাল মেলাতে? আর একটা ‘সদমা’ করে দেখাননি কিন্তু কোনও অভিনেত্রী! ‘চন্দ্রমুখী’-তে কাজ করার সময় সলমন খানও তো এক বার বলে ফেলেছিলেন, ‘শ্রীদেবীর সঙ্গে অভিনয় করতে ভয় হয়। উনি তো শুনেছি, পরদায় কো-অ্যাক্টরদের ভেঙেচুরে দেন!’
ভেঙেচু়রে দিতেন শ্রীদেবী। রাজত্ব করতে গেলে রাজনীতির কাদা মাখতেই হবে শরীরে। তবে অপেক্ষা করতেন পাল্টা চালের। পুষে রাখতেন জেদের পায়রা। তারা ডানা মেলত সময় হলে।
আরও পড়ুন: পরদার বাইরে
তাঁর সমকালীন অভিনেত্রী জয়া প্রদা। দু’জনের মধ্যেকার লড়াই তখন মেরুপ্রদেশের চাইতেও ঠান্ডা... জিতেন্দ্রই চেষ্টা করেছিলেন তাতে উষ্ণ আঁচ আনার। ‘মকসদ’ ছবির শুটিং চলছে। মেকআপ ভ্যানে জিতেন্দ্র আর ছবির আর এক নায়ক রাজেশ খন্না আটকে রেখেছিলেন দু’জনকে। কিন্তু কোথায় কী? ২৫ বছর দু’জন কথাই বলেননি একে অপরের সঙ্গে। কেন করতেন এ রকম? জয়ার সঙ্গে কথা বলার পর জানা গেল, এমনিতেই কথা কম বলতেন শ্রীদেবী। আনন্দ প্লাসকে জয়া ফোনে বললেন, ‘‘শুধু আমার সঙ্গে নয়, কারও সঙ্গেই তেমন কথা বলত না শ্রীদেবী। চুপচাপই থাকত।’’ আর পরদায়? ‘‘ওকে এমনিতে যেমন দেখতে লাগত, পরদায় কিন্তু তেমন লাগত না,’’ জয়ার গলায় পুরনোকে ছুঁয়ে দেখার রেশ। দু’জনেরই কেরিয়ার যখন তারা ছোঁয়ার উড়ান নিয়েছে, তখন জয়া এক বার বলেছিলেন, তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করা সুন্দরী নন। মন্তব্যের কাঁটা লেগেছিল শ্রীদেবীর গায়ে। সেখান থেকেই কি দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা? ‘‘থাক ও সব কথা। পুরনো দ্বন্দ্ব মনে করে কী হবে? আর আমাদের নিয়ে বাড়িয়ে বলত সংবাদমাধ্যম,’’ জয়ার উত্তর। বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে ও রানির মতো এসেছিল, রানির মতোই চলে গেল।’’ ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে রানির খেতাব? জয় নয়? আলবত জয়!
সরোজ খান আর মাধুরী দীক্ষিতের সমীকরণও কি রক্তাক্ত করেনি তারকাকে? ‘বেটা’ ছেড়ে দিয়েছিলেন শ্রীদেবী। মাধুরীর কাছে ওই ছবি যাওয়ার পর সোনার কাঠির পরশ লেগেছিল মাধুরীর কেরিয়ারে। শ্রীদেবীর কিন্তু তখন সম্রাজ্ঞীর অভিমান। সরোজ খান মাধুরীকে এক সে বড় কর এক স্টেপ শেখাচ্ছেন। তাঁর বেলা সরোজ বিমাতৃসুলভ? এ দিকে ভক্তদের মধ্যে দুই শিবিরে তুমুল ভাগাভাগি। ফিল্ম পার্টিতে অবজ্ঞার তাপে পুড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা পরস্পরকে!
কিন্তু রণে ভঙ্গ দেননি ‘রানি’। মাধুরী ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন। শ্রীদেবী একের পর এক ছবিতে, র্যাম্পে, শোয়ে ভক্তদের চোখের মণি হয়ে রয়েছেন। তার জ্যোতি এক মৃত্যুতে নিভে যায়? যায় কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy