Advertisement
E-Paper

সুদীপার বাড়ির লক্ষ্মীপুজো কেমন?

লিখলেন সুদীপা স্বয়ং...পারিবারিক একটা চিঠি থেকে জেনেছি, রাম অযোধ্যায় ফিরে আসার পর একদিন নাকি স্নান করছিলেন দিঘিতে। সেখানে সাধারণ শাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া তাঁর কানে আসে।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:০০
বাড়ির পুজোয় সুদীপা এবং অগ্নিদেব।

বাড়ির পুজোয় সুদীপা এবং অগ্নিদেব।

আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর স্পেশ্যালিটি হল এখানে মা সীতা রূপে পূজিত হন। অর্থাৎ রামের ঘরণী। চার যুগে তো চার অবতারে মর্ত্যে এসেছেন লক্ষ্মী। ত্রেতায় এসেছিলেন রামের ঘরণী হিসেবে। কোনও বাড়িতে নারায়ণের স্ত্রী রূপেওতিনি পূজিতা হন। আমাদের লক্ষ্মী পুজোতে একচড়া ভোগ দেওয়ার নিয়ম।

শুনেছি বরিশালে আমাদের পূর্বপুরুষ নবীনচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শেষ বার এই পরিবারের দুর্গাপুজো করেন। ধুমধাম করে হয়েছিল সে পুজো। তার পরের প্রজন্ম সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মা লক্ষ্মীকে ছাড়েননি। মা দুর্গার সিন্দুকে যত গয়না ছিল সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দিয়ে দিয়েছিলেন। বাড়ির দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছিল। পিছনের দিকটা ছিল হিন্দু বাড়ি, আর সামনেটাছিল ব্রাহ্ম বাড়ি। সতীশচন্দ্রের স্ত্রী যতদিন বেঁচে ছিলেন, মেয়েদের লক্ষ্মীপুজো করতে শিখিয়েছিলেন। ফলে বাবা ব্রাহ্ম হলেও মা লক্ষ্মীর পুজো বন্ধ হয়নি তাঁর মেয়েদের পরিবারেও। তবে এই পরিবাবের বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্গাপুজো আমার স্বামী অগ্নিদেভ ফের চালু করেন কলকাতায়।

পারিবারিক একটা চিঠি থেকে জেনেছি, রাম অযোধ্যায় ফিরে আসার পর একদিন নাকি স্নান করছিলেন দিঘিতে। সেখানে সাধারণ শাশুড়ি-বৌমার ঝগড়া তাঁর কানে আসে। ওই ঝগড়ায় ওই পরিবারের ছেলেও উপস্থিত ছিল। রাম শোনেন, ছেলে তার বউকে বলছে, তুমি আমাকে রাম পেয়েছ নাকি, তুমি যেখানে সেখানে ঘুরে আসবে আর আমি তোমাকে ঘরে তুলব? রামের এই কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগে। আসলে সীতা রাবণের কাছে অনেকদিন ছিলেন। রাম ভাবেন, আমাকে নিয়ে প্রজারা এমন ভাবছে!

আরও পড়ুন, রাহুল নয়, কার সঙ্গে বিজয়া কাটল প্রিয়ঙ্কার?

সে সময় সীতা ছিলেন সন্তানসম্ভবা। বাড়ির মহিলা সদস্যরা সীতাকে বলে, রাবণ খুব সুদর্শন ছিল। তুমি ওকে দেখেছ অনেকদিন, তার ওখানে ছিলে, আমাদের বল না, উনি কেমন দেখতে। সীতা বলেন, আমার সঙ্গে খুব কম আলাপচারিতা হয়েছে রাবণের। তখন ওই মহিলারা বলে, তা হলে রাবণের ছবি এঁকে দেখাও। সীতা বলে, আমাকে ভেবে ভেবে আঁকতে হবে।

বাড়ির মহিলাদের অনুরোধে রাবণের ছবি আঁকতে আঁকতে সীতা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাম অন্দরমহলে এসে দেখেন, রাবণের ছবিটা জড়িয়ে ধরে সীতা ঘুমোচ্ছেন। তখনই তিনি রাজসভায় যান, সিংহাসনে বসে লক্ষ্মণকে বলেন, তোমার দাদা হিসেবে নয়, অযোধ্যার রাজা হিসেবে আমি আদেশ করছি সীতাকে এ বাড়ি থেকে না সরালে আমি জলস্পর্শ করব না। কারণ প্রজাদের মনে আমাকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমাকে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।


দুর্গাপুজোয় সপরিবার সুদীপা।

যেহেতু রাজ আদেশ, লক্ষ্মণ তা অমান্য করতে পারে না। লক্ষ্ণণ সীতাকে কোজাগরী পূর্ণিমার দিনই তপোবনে ছেড়ে দিয়ে আসে। বলেন, তুমি বস আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি। সন্তানসম্ভবা মহিলাদের একচড়া ভোগ খুব পছন্দের। সীতারও ইচ্ছে ছিল একচড়া ভোগ খাবেন। সে সময় ক্ষত্রিয়রা তা তৈরি করতে পারত না। কেবল ব্রাহ্মণ ঋষি পত্নীরাই তৈরি করতে পারতেন। লক্ষ্মণ ঋষিদের বাড়ির সামনেই সীতাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছিলেন। এমন একটা প্রহরে যখন দিনের আলো মুছে যায়নি, আবার রাতের অন্ধকারও নেমে আসেনি। সবে আকাশে চাঁদ উঠেছে। তার পর ওখানেই সীতা একচড়া ভোগ খান। লব-কুশ ওখানেই জন্মায়।

সেই থেকে আমাদের বাড়ির নিয়ম হল, একচড়়া ভোগ হবে লক্ষ্মীপুজোর দিন। কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে হালকা দেখা যাবে তবে আমরা পুজোর আয়োজন শুরু করতে পারব। লক্ষ্ণণ যে সময় সীতাকে তপোবনে ছেড়ে এসেছিলেন, সেই সময়কে স্মরণ করে আকাশের চাঁদের অনুমতি নিয়ে আমরা পুজো শুরু করতে পারি। এমনকি আলপনাও সকাল থেকে দিতে পারি না।

আরও পড়ুন, ব্যাঙ্ককে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিলেন জিত্!

একচড়া ভোগের নিয়ম হচ্ছে, সব কিছু একবার চড়বে। চাল, ডাল একবারই হাঁড়িতে ঢালতে পারবে। জলও আন্দাজে একবার দেওয়া যাবে। নুনও একবার। সব গোটা আনাজ একবারই দেওয়া যাবে। আর একবার ফুটলেই আঁচ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তারপর ভেপারে নিজেই রান্না হয়ে যায়।

আমাদের পরিবারে প্রতিষ্ঠিত রূপোর লক্ষ্মী আছে। নিত্যপুজো হয়। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর দিন বেনারসি পরিয়ে সাজানো হয় মাকে। আলাদা করে আসনে বসানো হয়।

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর ধুমধামের কথা তো আপনারা জানেনই। এ বছরও নিষ্ঠাভরে পুজো হয়েছে। বহু অতিথি এসেছিলেন। এ বার লক্ষ্মীপুজোর পালা...।

ছবি: সুদীপার ফেসবুক পেজ থেকে গৃহীত।

(হলিউড, বলিউড বা টলিউড - টিনসেল টাউনের টাটকা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগে।)

Sudipa Chatterjee Tollywood Celebrities
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy