Advertisement
E-Paper

‘শাড়িওয়ালি ভাবি’ তোমাকে সেলাম

এ ছবির নায়ক হল তার গল্প এবং নায়িকা হল অভিনয়। কিন্তু হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে আজকের দর্শক যা চান অর্থাৎ অপূর্ব আউটডোর, গেলাস উপুড় গ্ল্যামার, মারকাটারি স্টাইল— তা একদমই নেই।

চিরশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৩

তুমহারি সুলু্

পরিচালনা: সুরেশ ত্রিবেণী

অভিনয়: বিদ্যা বালন, মানব কউল, নেহা ধুপিয়া

৭/১০

এ ছবির নায়ক হল তার গল্প এবং নায়িকা হল অভিনয়। কিন্তু হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে আজকের দর্শক যা চান অর্থাৎ অপূর্ব আউটডোর, গেলাস উপুড় গ্ল্যামার, মারকাটারি স্টাইল— তা একদমই নেই। তবে, আছে নায়ক-নায়িকার ভরপুর ‘সিটি বাজাও রোম্যান্স’। অর্থাৎ গল্প যখনই পিছলোচ্ছে, অভিনয় তাকে নরম ভালবাসায় সামলাচ্ছে। তাই আলতো-সুন্দর সংবেদনে ভরা এই কমেডি-ড্রামা দেখতে গেলে মনের ঝুলিও ভরে, ফুরফুরে এক ভাল লাগায়, আর? আত্মবিশ্বাসে।

ইদানীং বলিউডে, মধ্যবিত্তের দিনলিপি থেকে পাতা ছিঁড়ে ছোট বাজেটের ‘সস্তায় পুষ্টিকর’ সিনেমা বানানোর যে ঢল নেমেছে, সেই সারিতেই নতুন সংযোজন ‘তুমহারি সুলু’। অ্যাড নির্মাতা সুরেশ ত্রিবেণী প্রথম নামলেন পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনায়। হিট ট্রেলরের কল্যাণে, ছবির বিষয় অনেকেরই জানা। গৃহবধূ সুলোচনা দুবে হঠাৎ হয়ে যায় গভীর রাতের রেডিয়ো জকি। এমন সময়ে তার শো চলে, যখন রাত জেগে রেডিয়ো শোনে মাতাল, পাগল, হতাশ এবং অটোচালকরা। এ বার?

রাস্তা ও ইন্টারনেটের ফুটপাতে ‘সবিতা ভাবি’ নামের যে যৌনস্বপ্ন বিকোয়, এই ‘শাড়িওয়ালি ভাবি’-র আবেদনময় কণ্ঠস্বরে তাকেই জীবন্ত করার প্ল্যান ভাঁজে এফএম-এর মাথারা। এখানেই এক দারুণ সরু দড়ির উপর হেঁটেছেন পরিচালক। পা ফসকালেই নীচের পাঁকে। অর্থাৎ পারভারশন-এর স্তূপে। কিন্তু পড়েননি। কারণ তাঁকে পার করিয়েছেন ‘সুলু’ রূপী বিদ্যা বালন। ‘নিম্বু-চামচার ব্যালান্স-রেস মে’ যাঁর চামচ থেকে লেবু কখনও পড়েই না। পৃথুলা শরীরে, ঢলঢলে মুখে বয়সের ছাপ তুড়ি মেরে উড়িয়ে, যিনি চরম শক্ত সব অভিব্যক্তি নিয়ে ছেলেখেলা করেন। ছবির প্রচারে অভিনেত্রীই বলেছেন, যৌনতা তো অনুভূতি। একে ট্যাবু বানিয়েই পিশাচটাকে জাগাচ্ছে সমাজ। সৃষ্টি ও সৌন্দর্যে তাকে স্থান দিতে পারলে, তার রূপ হবে ভিন্ন।

একটি দৃশ্যে বিদ্যা ও মানব

এই থিমেই এগিয়েছে ছবি। তিন বার বারো ক্লাস ফেল সুলোচনা। গৃহিণী আর মায়ের সত্তার বাইরে নিজস্ব পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে, পাখা মেলতে চায়। সেই ডানাকেই ছাঁটবার চেষ্টা করে হিংসুটে দুই দিদি। অথচ মেয়েটি সব কিছুতেই ‘ম্যায় কর সকতি হ্যায়’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছেলে দশ পেরিয়েছে, স্বামীর চাকরিতে হঠাৎ জুড়ে বসেছে ভিলেন-বস। তা‌ই কাজের খোঁজে বাইরের জগতে পা বাড়ায় সে। সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবি থেকেই সুতোটা কুড়িয়ে নিয়ে ২০১৭-র ভিন-আকাশে ঘুড়ি উড়িয়েছেন পরিচালক। এই ঘুড়িটি ঝলমলে আনন্দের। কারণ তাঁর নায়িকা মুশকিলকে ভোকাট্টা করার অভিনব সব পন্থা জানেন। দিনরাত সুলুর মাথায় আইডিয়ার ঘূর্ণিপাক! আশি-নব্বইয়ের গানে রঙিন জীবন। আর জানেন ঠিক কখন লুকিয়ে রাখা ‘শ্রীদেবী’-র মুখোশটি পরে ফেলতে হয়। এমন মেলোডি-সেন্স, রসবোধ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব যার, আরজে হতেই সে কিনা রাতারাতি তারকা!

সাফল্যের লিফ্‌টে সুলু উপরে ওঠে, পাশাপাশি জীবনের সাপ-লুডোতে নীচে গড়িয়ে পড়ে স্বামী ও ছেলে। এই অপরিচ্ছন্ন সমাজও তার নিয়ম মেনে ‘সুলু বউদি’কে নিয়ে শুরু করে নিম্ন রুচির চুটকি। প্রথমার্ধের ছক-ভাঙা হাসির ফোয়ারা দ্বিতীয়ার্ধে ছক-মানা ফ্যামিলি-ড্রামা হতে চেষ্টা করতেই তাল কাটে। তখনই ছবির দৈর্ঘ্যে (১৪০ মিনিট) বিরক্তি, গানগুলো জোর করে ঠাসা মনে হয়, শেষ দিকের টুইস্টটাও বেশ চেনা লাগে। তবে অন্তিমে দর্শককে ঠকিয়ে আনন্দের ট্র্যাকে ফিরে আসে সুপারউওম্যান সুলুর এক্সপ্রেস ট্রেন।

আরও পড়ুন: নির্মাতারা মুক্তি পিছিয়ে দিলেন ‘পদ্মাবতী’র

ইনডোরে তোলা ছবির ক্যামেরার কাজ হৃদয় দিয়ে, ‘ডিটেলস’-এ করেছেন কলকাতার সৌরভ গোস্বামী। সুলুর হাউজিং, তার বরের ছাপোষা অফিস, কিশোর কুমারের ফ্যান সুলুর বাবা যেন আমাদেরই আশপাশ থেকে খানিকটা কেটে পরদায় বসিয়ে দেওয়া। আবারও বলা উচিত, ছবিটির সম্পদ অনবদ্য অভিনয়। দক্ষ অভিনেতা মানব কউলও। সুলুর বেচারা স্বামীর ভূমিকায় কী আশ্চর্য চুপ-অভিনয় তাঁর! বাচ্চার মুখ-ফোলানো অভিনয় যত মিষ্টি, ততটাই খাপে-খাপ সুলুর বস নেহা ধুপিয়া।

যৌনতা ব্যবহারে বিদ্যা কত দক্ষ তা ‘পরিণীতা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘ঘনচক্কর’ আগেই দেখিয়েছে। আরজে চরিত্রও আগে করেছেন। ‘গুড মর্নিং মুম্বই’ বলা ছাড়া সেই মুন্নাভাই-ছবিতে বিশেষ কিছু করার ছিল না। এখানে সব উশুল। তাই ছবির নির্মাণ-ত্রুটিতে নম্বর কাটলেও একাই দুই নম্বর বাড়িয়ে নিলেন বিদ্যা।

ছবিটি যেন নারীত্বের উপকথা। নারীর যৌনতার উদ্‌যাপন রয়েছে, আছেন মেয়ে ট্যাক্সি-চালক, ঝাঁ-চকাচক অফিস-হেডও এক আলফা-নারী। পুরুষের আহত ইগোকে যত্নে নিরাময়ও করেছে এক নরম হাত। যে দশভুজা হয় এক মুহূর্তে। তাই অনুরোধ, হলে দেখুন এ সিনেমা। যাতে এই গোত্রের সিনেমা তৈরিতে পরিচালককুলের আগ্রহ বাড়ে। এবং এমন বিশ বছর মনে রাখার মতো অভিনয় নিয়ে পরদায় ফেরেন বিদ্যা। নীতিকথাটি উনিই শেখালেন। সেটি আউড়েই আমাদের এই অভিনেত্রীর পিঠ চাপড়ানোর পালা। ‘ম্যায় কর সকতি হ্যায়।’

Tumhari Sulu Vidya Balan Neha Dhupia Manav Kaul মানব কউল বিদ্যা বালন নেহা ধুপিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy