Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Indian Theatre

হিন্দি থিয়েটারকে বাংলায় জনপ্রিয় করেছিলেন তিনি

চলে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় বাংলায় হিন্দি থিয়েটারের অন্যতম দুই পথপ্রদর্শক হিসেবে ‘পদাতিক’-এর শ্যামানন্দ জালানের পাশাপাশি উচ্চারিত হয় ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।

ঊষা

ঊষা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪৪
Share: Save:

মারা গেলেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়, বাঙালি দর্শকের কাছে হিন্দি থিয়েটারকে জনপ্রিয় করে তোলার অন্যতম কান্ডারি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়িতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ‘রঙ্গকর্মী’র প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক-অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

বাংলায় হিন্দি থিয়েটারের অন্যতম দুই পথপ্রদর্শক হিসেবে ‘পদাতিক’-এর শ্যামানন্দ জালানের পাশাপাশি উচ্চারিত হয় ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে বর্ণময় এই মানুষটি মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন। তাঁর জন্ম রাজস্থানের জোধপুরে। ভরতনাট্যমে তালিম নিয়েছিলেন ছোট থেকেই। কলকাতায় এসে শ্রীশিক্ষায়তন কলেজে হিন্দি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঊষা। স্নাতকোত্তরের পর হিন্দি শিক্ষিকা হিসেবে ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পাশাপাশি সেই সময় থেকেই শুরু তাঁর নাট্যচর্চাও। সত্তরের দশকের একেবারে শুরুতে শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’ অবলম্বনে তৈরি নাটক ‘মিট্টি কী গাড়ি’তে বসন্তসেনার চরিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন ঊষা। শুরুতেই তৃপ্তি মিত্র, মৃণাল সেনদের পেয়েছিলেন মেন্টর হিসেবে। ১৯৭৬ সালে ঊষা প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব নাট্যদল ‘রঙ্গকর্মী’। তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ইবসেনের ‘আ ডলস হাউস’ অবলম্বনে তৈরি নাটক ‘গুড়িয়া ঘর’-এ ঊষার অভিনয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার এনে দিয়েছিল তাঁকে। আশির দশক এবং তার পরবর্তী সময়কালে ‘রঙ্গকর্মী’ দর্শককে একের পর এক উপহার দিয়েছে ‘মহাভোজ’, ‘রুদালি’, ‘কোর্ট মার্শাল’, ‘অন্তর্যাত্রা’র মতো অনবদ্য সব প্রযোজনা। ২০০৬ সালে লাহোরের নাট্যোৎসবে ‘রুদালি’ মঞ্চস্থ করেছিলেন ঊষা ও তাঁর দল। ১৯৯৮ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন এই শিল্পী।

১৯৮০ সাল থেকেই নিজে পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ঊষা। মৌলিক নাটক এবং অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে এ শহরে তথা রাজ্যে হিন্দি নাটকের নিজস্ব দর্শক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন ঊষা। পাশাপাশি বাংলার নাটককে নিয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কথা মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে বারংবার উঠে এসেছে নাট্যকর্মী ও সমাজকর্মী ঊষার বিভিন্ন কাজে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দ্য রেনকোট’ ছবির চিত্রনাট্যে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু সোহাগ সেন সকালে দুঃসংবাদটি শোনার পর থেকেই শোকস্তব্ধ। বললেন, ‘‘এ বছর ওর নাট্যজীবনের পঞ্চাশতম পূর্তি। আমার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ঊষাই প্রথম সম্বর্ধনা দেয় আমায়। ওর ‘মা’ নাটকটার রিভিউ করতে গিয়ে প্রথম আলাপ হয়েছিল, যা গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হতে সময় নেয়নি। লকডাউন শুরু হওয়ার পরেও ফোনে কথা হয়েছিল একবার। আচমকা এ রকম একটা খবর পাব, ভাবতে পারিনি।’’

গত ১ এপ্রিল ‘রঙ্গকর্মী’র সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা ‘সরহদেঁ’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল, যা স্থগিত হয়ে যায় লকডাউনের কারণে। তার আগে পর্যন্ত মহড়া চলছিল পুরোদমে। এ প্রজন্মের নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন ঊষা। নটী বিনোদিনী ও কেয়া চক্রবর্তী ছিলেন তাঁর আদর্শ। নিজের স্টুডিয়ো থিয়েটার গড়ে তুলেছিলেন সেই আদর্শেই। সম্প্রতি ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন প্রবীণ নাট্যশিল্পী। বৃহস্পতিবার ভোরে ছেলেকেও ফোন করেছিলেন, তবে কথা হয়নি। তার আগেই চলে গেলেন বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই একনিষ্ঠ কর্মী।

আরও পড়ুন: এই সময়টা যেন ‘অশনি সংকেত’-এর আবহ, সত্যজিতের মৃত্যুদিনে উপলব্ধি সন্দীপের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Theatre Usha Ganguly Cinema Bolywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE