Advertisement
E-Paper

বায়োপিকে পিছিয়ে কেন টলিউড? কী বললেন পরিচালকরা

ভূতুড়ে বা থ্রিলার ছবির দৌড়ের জন্য বায়োপিক থেকে অনেক দিনই দূরে বাঙালি পরিচালকরা। তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ প্লাস ভূতুড়ে বা থ্রিলার ছবির দৌড়ের জন্য বায়োপিক থেকে অনেক দিনই দূরে বাঙালি পরিচালকরা। তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ প্লাস

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
রসগোল্লা, হীরালাল

রসগোল্লা, হীরালাল

সাহিত্যধর্মী, অ্যাডভেঞ্চার, ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি, স্পিন অফ... সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন ধারার ছবিতে হাত পাকিয়েছেন বাঙালি পরিচালকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে ন্যারেটিভ নিয়েও। গত দু’-তিন বছরে হিন্দি ছবি ইন্ডাস্ট্রিতে রমরমিয়ে চলছে বায়োপিক। নামী বা অনামী ব্যক্তিত্বের জীবনের অচেনা বাঁক হলে টানছে দর্শককে। কিন্তু বাংলায় গত দু’-তিন বছর কেন, বিগত দু’-তিন দশকেও উল্লেখযোগ্য কোনও বায়োপিকের কথা দর্শক মনে করতে পারবেন না।

কিন্তু বাংলায় বায়োপিক হয়নি, এমন নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগ থেকে আশির দশক পর্যন্ত রাজা রামমোহন রায়, ভগিনী নিবেদিতা, শ্রী অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনের আধারে ছবি তৈরি হয়েছে। পীযূষ বসুর ‘সুভাষচন্দ্র’ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। কিন্তু তার পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি ছবি হলেও বায়োপিক নিয়ে বাঙালি পরিচালকদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। তার কারণ কী? বাঙালি আইকনের অভাব? না কি পরিচালকদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার সাহসের অভাব?

হালে যদিও নবীনচন্দ্র দাসকে নিয়ে ‘রসগোল্লা’ বানিয়েছেন নতুন পরিচালক পাভেল। নিজের ছবিকে ‘ফিকশনাল বায়োপিক’ বলতে চান তিনি। বিনয়-বাদল-দীনেশ নিয়ে ছবি করছেন অঞ্জন দত্ত, মানস মুকুল পাল ও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। প্রবাদপ্রতিম পরিচালক হীরালাল সেনকে নিয়ে ছবি করেছেন অরুণ রায়। তবে বায়োপিকে টলিউডের অনীহা চোখে পড়ার মতো।

বায়োপিক মানেই বড় বাজেটের ছবি। আর বাজেটের সমস্যা বাংলায় বায়োপিক বানানোর ক্ষেত্রে প্রথম অন্তরায়। সে কথা একবাক্যে মানছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পাভেল ও মানস মুকুল পাল। কৌশিকের কথায়, ‘‘হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে বাজেটের সমস্যা হয় না। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে বায়োপিক হিট করাতে গেলে যে ধরনের চরিত্রদের নিয়ে কাজ করতে হবে, মানে যাদের সঙ্গে গ্রামবাংলার মানুষও একাত্মবোধ করবেন, সেই ধরনের ছবি বানানো অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ।’’ পাভেল বললেন, ‘‘সমসাময়িক আইকনদের নিয়ে সাধারণত বায়োপিক করা হয় না (ব্যতিক্রম, ‘এম এস ধোনি: দি আনটোল্ড স্টোরি’)। পিরিয়ড ছবি করতে গেলে খরচ বেড়ে যায়। অনেকেই সেই হিসেব আগে করে ফেলেন এবং সেই পথে এগোন না।’’ মানস মুকুলও মানছেন, ‘‘মার্কেট ছোট। হল কম। তাই বেশি বাজেটের ছবি করতে সমস্যা। তবে আমি যে বায়োপিক বানাচ্ছি, সেটা ব্যক্তিগত ভাল লাগা ও আবেগের জায়গা থেকে।’’

তবে বাজেটের বাধাই একমাত্র ফ্যাক্টর নয়। পাভেল জোর দিয়ে বলছেন, ‘‘যদি এমন কোনও স্ক্রিপ্ট লেখা যায় যা শুনে লোকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাবে, তা হলে ঝুঁকি নিয়েও প্রযোজক টাকা ঢালতে রাজি হবেন। তেমন লোকও বাংলায় আছেন।’’

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বাংলায় মৌলিক ভাবনার স্রোত অন্য জায়গার চেয়ে অনেক বেশি। মৌলিক গল্প লেখা হচ্ছে, তাই বায়োপিককে অবলম্বন করতে হয়নি। কিন্তু না করার সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। এটা সম্পূর্ণ লেখক বা পরিচালকের খিদের উপর নির্ভর করে। তাঁরা আগ্রহ পেলেই ছবি বানাবেন।’’

মৌলিক ভাবনার ছবির পাশাপাশি ফর্মুলা ছবিতেও ইন্ডাস্ট্রির অগাধ ভরসা। পাভেলের মতে, ‘‘একটা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ হওয়ার পরে ভূতের ছবির সংখ্যা বাড়তে লাগল। যে ভাবে গোয়েন্দা ছবি পরপর হয়। কিন্তু বাংলায় বায়োপিক করে সুপারহিট হওয়ার দৃষ্টান্ত সমসাময়িক সময়ে নেই। তাই সেই ঝুঁকি অনেকেই নিচ্ছেন না।’’

পরিচালক অতনু ঘোষের মতে, ‘‘বাংলার মনীষীদের নিয়ে কাজ আগে হয়েছে। তার পরে যাঁরা সাহিত্যিক, শিল্পী ছিলেন তাঁরা হয় খুব সাম্প্রতিক নয়তো খুব জরুরি নন। এমন কোনও উল্লেখযোগ্য চরিত্রের কথা মনে পড়ছে না, যাঁকে নিয়ে বায়োপিক বানানো জরুরি।’’

বায়োপিক মানেই যে নামজাদা ব্যক্তিত্বের জীবনী, তা নয়। ‘প্যাডম্যান’, ‘মাঁঝি’, ‘পান সিংহ তোমর’-এর মতো ছবি সাধারণ মানুষকেই অসাধারণ করে তুলেছে। ‘মানব-মাহাত্ম্যে’র সেই গল্প বড় পর্দায় বলেছেন কৌশিকও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছবি ‘শব্দ’কে আমি বলব তারকের বায়োপিক। বা ‘অপুর পাঁচালী’ হল সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বায়োপিক।’’

বাজেটের চিন্তাকে দূরে সরিয়ে, গল্প বলার মুনশিয়ানায় আস্থা রেখে বাঙালি পরিচালকরা যদি বায়োপিক বানানোর স্বপ্ন দেখেন, তা বাস্তবায়িত করা হয়তো অসাধ্যও নয়। সেই আশাই রাখছেন পাভেল।

হাতে গোনা যে ক’টা বায়োপিক এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হয়েছে বা হতে চলেছে তা ভবিষ্যতে আরও ছবির পথ প্রশস্ত করে কি না, সেটা সময়ই বলবে।

Cinema Tollywood Industry Biopic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy