Advertisement
১১ মে ২০২৪
Satish Kaushik Death Controversy

মাথায় ১৫ কোটির দেনা, তার উপরে সতীশ কৌশিককে খুনের অভিযোগ, কে এই ‘কুবের’ বিকাশ মালু?

সতীশ কৌশিকের মৃত্যুতে অভিযুক্ত তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতাকে খুনের অভিযোগ তুলেছেন দিল্লিবাসী ব্যবসায়ীর স্ত্রী নিজে।

Who is this Delhi businessman Vikas Malu whose wife accused him of poisoning Satish Kaushik

সতীশ কৌশিকের মৃত্যুতে জড়াল দিল্লির ব্যবসায়ী বিকাশ মালুর নাম। — ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৪
Share: Save:

৯ মার্চ জীবনাবসান হয়েছে বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ও পরিচালক সতীশ কৌশিকের। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে অভিনেতার প্রয়াণের পর থেকেই তাঁর মৃত্যুর কারণ ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। উঠে আসছে একাধিক তথ্য। ৭ ও ৮ মার্চ সুস্থ শরীরে, হাসিমুখে হোলির পার্টিতে দেখা গিয়েছিল অভিনেতা-পরিচালককে। ৮ মার্চ সন্ধের মধ্যেই কী ভাবে শারীরিক অবস্থার এতটা অবনতি ঘটতে পারে? দিল্লির খামারবাড়ির পার্টি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে হার্ট অ্যাটাকে সতীশ কৌশিকের মৃত্যু হয় বলে খবর। ইতিমধ্যেই ওই খামারবাড়ি থেকে বেশ কিছু সন্দেহজনক ওষুধ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। তবে কি খামারবাড়িতেই এমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন বর্ষীয়ান অভিনেতা? উঠছে প্রশ্ন।

অন্য দিকে, ঘটনা নাটকীয় মোড় নিয়েছে খামারবাড়ির মালিক, তথা দিল্লির ব্যবসায়ীর স্ত্রীর অভিযোগে। সতীশ কৌশিককে নাকি বিষ প্রয়োগ করে খুন করে থাকতে পারেন তাঁর স্বামী, অভিযোগ ব্যবসায়ী বিকাশ মালুর দ্বিতীয়া স্ত্রী সানভি মালুর। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্যও দিল্লি পুলিশের তরফে ডাকা হয়েছে সানভিকে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কে এই বিকাশ মালু? তাঁর সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ সতীশ কৌশিকের?

photograph of a farm house.

এই খামারবাড়িতেই হোলির পার্টিতে দেখা গিয়েছিল সতীশ কৌশিককে। ছবি: সংগৃহীত।

দুবাই-কেন্দ্রিক ‘কুবের গ্রুপ’-এর শীর্ষকর্তা বিকাশ মালু। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে দামি বিলাস সামগ্রী— বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে এই সংস্থার। বিকাশ মালুর কুবের গ্রুপের ছাতার তলায় তৈরি হয়েছে ‘কুবের শপ’, ‘এনভি লাইফস্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মতো একাধিক শাখা-সংস্থা। দুবাই-কেন্দ্রিক সংস্থা হলেও ভারতের উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এখন দেশের প্রথম সারির সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম কুবের গ্রুপ। অতিমারি ও লকডাউনের মাঝে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বাজারে আসে ‘কুবের শপ’। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাধারণ নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কুবের শপ নিয়ে আসেন বিকাশ মালু। ২০২২ সালের মধ্যে দিল্লিতে ১২টি বিপণি ছিল কুবের শপের। গোটা দেশে ২০০টি বিপণি তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এই সংস্থা। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দেওয়াই নয়, দেশের সাধারণ মানুষকে বিশ্বমানের পণ্যের অভিজ্ঞতা দেওয়ার লক্ষ্যেই তৈরি কুবের শপ, এক সাক্ষাৎকারে জানান সংস্থার ডিরেক্টর বিকাশ মালু।

পাশাপাশি, বিলাস সামগ্রীর ব্যবসাতেও ইতিমধ্যেই হাত পাকিয়েছে কুবের গ্রুপ। ‘এনভি লাইফস্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মাধ্যমে বিদেশি সিগার ও সুরার সন্ধান পাবেন দেশের মানুষ। শুধু ভারত নয়, মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাতেও ব্যবসা বাড়াচ্ছে বিকাশ মালুর সংস্থা।

কুবের গ্রুপের আরও একটি শাখা হল ‘কুবের এন্টারটেনমেন্ট’। চলতি বছরেই রাজস্থানের চুরু জেলার সর্দার শহরে একটি মোবাইল থিয়েটার উদ্বোধন করেন প্রয়াত অভিনেতা সতীশ কৌশিক। সেই প্রেক্ষাগৃহের নেপথ্যে ছিল এই কুবের এন্টারটেনমেন্ট। উদ্বোধনের পর সেই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয় এই বছরের সব থেকে বেশি চর্চিত ছবি ‘পাঠান’। শুধু রাজস্থানেই নয়, লেহ, লাদাখ, তেলঙ্গানা ও অরুণাচল প্রদেশেও মোবাইল থিয়েটার তৈরি করেছে বিকাশ মালুর এই সংস্থা। দুর্গম লেহ-লাদাখের মতো জায়গার বাসিন্দারা ওই থিয়েটারেই দেখেছেন শাহরুখ খানের ছবি। তা সম্ভব হয়েছে বিকাশ মালুর কুবের এন্টারটেনমেন্টের দৌলতেই।

শুধু একাধিক সংস্থার সূচনাই নয়, কুবের গ্রুপের মাধ্যমে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) সংক্রান্ত কার্যকলাপেও এগিয়ে এসেছেন বিকাশ মালু। অতিমারি ও লকডাউনের সময় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং হুইলচেয়ার বিতরণ করেছে তাঁর গোষ্ঠী। ভবিষ্যতেও এই ধরনের কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেবে তাঁর সংস্থা, দাবি বিকাশ মালুর।

বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও কুবের এন্টারটেনমেন্ট সংস্থার বিনোদনের জগতে পা রাখার সুবাদে সতীশ কৌশিকের সঙ্গে পরিচয় বিকাশ মালুর। সুসম্পর্কের সুবাদে ৮ মার্চ দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লিতে বিকাশ মালুর খামারবাড়িতে হোলির পার্টিতে আমন্ত্রিত ছিলেন সতীশ কৌশিক। সেখানেই শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। তার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। অভিনেতার মৃত্যুর দিন তিনেক পরে ব্যবসায়ী বিকাশ মালুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তাঁরই স্ত্রী সানভি মালু। তাঁর অভিযোগ, বিকাশ মালুকে ১৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছিলেন সতীশ কৌশিক। সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে ওঁদের দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছিল বলে দাবি ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। সতীশকে টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন বলে নাকি কথাও দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সানভির ধারণা, টাকা ফেরত দিতে আগ্রহী ছিলেন না বিকাশ। তাই তিনি অভিনেতাকে বিষজাতীয় কিছু দিয়েছিলেন। তা থেকেই নাকি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সতীশ কৌশিকের, দাবি সানভি মালুর।

প্রসঙ্গত, দিল্লির ওই খামারবাড়ি থেকেই বেশ কিছু সন্দেহজনক ওষুধ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। বিকাশের স্ত্রী সানভি মালুর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য ওঁকে তলব করেছে তারা। সতীশের মৃত্যু নিয়ে ঘনাচ্ছে রহস্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE