Advertisement
E-Paper

দেব-উত্তর

দুর্দান্ত নাচেন। অভিনয়ে পারদর্শী। স্ক্রিন প্রেজেন্স চমৎকার। লোকসভা নির্বাচনে দেব ব্যস্ত হয়ে ওঠায় টলিউডের অনেকে অঙ্কুশ-এর ওপরই বাজি ধরছেন। কেন? উত্তর খুঁজলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত দুর্দান্ত নাচেন। অভিনয়ে পারদর্শী। স্ক্রিন প্রেজেন্স চমৎকার। লোকসভা নির্বাচনে দেব ব্যস্ত হয়ে ওঠায় টলিউডের অনেকে অঙ্কুশ-এর ওপরই বাজি ধরছেন। কেন? উত্তর খুঁজলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩০
ছবি: সোমনাথ রায় 
মেক আপ: বরুণ কুমার মণ্ডল

ছবি: সোমনাথ রায় মেক আপ: বরুণ কুমার মণ্ডল

ছোটবেলার সব ছবিতে তাঁর নাকি একটাই পোজ। পায়ের আঙুল খাচ্ছেন! বাড়িতে তন্নতন্ন করে খুঁজলেও হয়তো ওই পোজের বাইরে তাঁর কোনও ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আজও যে পায়ের নখ খাওয়ার অভ্যেসটা চলে গিয়েছে তা নয়। তবে না, ফোটোশ্যুট করতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়েও এমনটা করার ভুল আর তিনি করেন না। যতই হোক, টলিউডের নতুন তারকাদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা আজ তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই রাজ চক্রবর্তী, রাজীবের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, নুসরত বড় পর্দায় সবাই তাঁর হিরোইন। নাচে এতটাই পারদর্শী যে অনেকেই তাঁকে দেব-য়ের সঙ্গে তুলনা করতেও অস্বস্তি বোধ করেন না। এক-একটা মাচার শো-তে দু’আড়াই লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সামনে আরও একটা নতুন চমক। অশোক পতি পরিচালিত এসকে মুভিজ-এর প্রযোজনায় তাঁকে দেখা যাবে রোমিওর ভূমিকায়। ছবির নাম ‘রোমিও জুলিয়েট’। কেরিয়ারের এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে তাই ফোটোশ্যুটে নতুনত্ব থাকতেই হবে। বেয়ার-বডিড শ্যুট করবেন? আর তার সঙ্গে ছোট একটা পনি? বা হেয়ার-এক্সটেনশন!

সঞ্জয় লীলা বনশালীর ‘রোমিও জুলিয়েট’-এর অনুপ্রেরণায় তৈরি ‘রামলীলা’-তে তো রণবীর সিংহকে বহু দৃশ্যে দেখা গিয়েছে সে ভাবে। তেল চকচকে সুঠাম শরীর। ভাস্কর্যের কারুকাজের মতো পেশিবহুল চেহারা।

রণবীর সিংহকে নকল করে নয়। একটু অন্য ভাবে নিজেকে পেশ করার তাগিদেই না হয় এমনটা করলেন...

প্রশ্নটা শুনে প্রথমে একটু ইতস্তত করলেন। “এর আগে বহু বার বাবা যাদব আমাকে গানের দৃশ্যের সময় বলেছেন বেয়ার-বডিড শ্যুট করতে। আমি রাজি হইনি...,” বলেন অঙ্কুশ।

‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিতে অঙ্কুশ

পরের দিন হোয়াটস্অ্যাপে উত্তর এল। অঙ্কুশ রাজি। রবিবার ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’-য়ের শ্যুটিং সেরে সোজা চলে যাবেন ফোটোশ্যুটে। “সময় থাকলে একটু জিমটা ঘুরে আসব,” বললেন অঙ্কুশ।

কিন্তু তা আর করার সময় থাকল না। বরং জিমের সরঞ্জাম কাঁধে নিয়েই ঢুকলেন স্টুডিয়োয়। দু’টো দশ কেজি ওজনের ডাম্বেল হাতে! সোজা চলে গেলেন মেক আপ রুমে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেক আপ আর্টিস্টকে বললেন নিপুণ ভাবে রেজর দিয়ে বুকের লোম শেভ করে দিতে। “চুলটা এত ছোট করে কাটানো যে, পনিটা করা যাবে না। তবে হেয়ার এক্সটেনসন ব্যবহার করতেই পারি,” মেক আপ করতে করতে বলেন অঙ্কুশ।

আয়নার সামনে দাঁড়াতেই অঙ্কুশকে বলা হল নিজের রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে। এই ক’বছরে কোথায় উন্নতি করেছেন বলে তাঁর মনে হয়? কোথায়ই বা পিছিয়ে আছেন? “ডেডিকেশনটা বেড়েছে। তার সঙ্গে সাফল্যের খিদেও। অভিনয় করার সময় বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা পাল্টেছি। চেষ্টা করি সাবলীল ভাবে অভিনয় করতে। স্টাইল সম্পর্কে সচেতন। ফিজিকটাও ভাল হয়েছে...” বলে গায়ে জেল লাগাতে শুরু করলেন।

আর নাচ? “হ্যাঁ, ওটাও। আমার দারুণ লাগে যখন বলা হয় যে আমি দেবদার মতো নাচ করি। দেবদা এত ভাল ডান্সার। সত্যি এটা বড় কমপ্লিমেন্ট,” বলেই একগাল হেসে ওঠেন।

আচ্ছা, দেব-এর ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ দেখেছেন? অ্যাঙ্কর দেব না ডান্সার দেব কাকে বেশি পছন্দ? “ডান্সার হিসেবে তো দারুণ লাগেই। অ্যাঙ্করের রোলেও আমার ওকে বেশ ভাল লাগে। এক শতাংশ বেশি নম্বরে আমি ডান্সার দেবদাকেই এগিয়ে রাখব,” বলেন তিনি।

আর অভিনেতা দেব? “আমার মনে হয় ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ডেডিকেটেড অভিনেতা। কী সুন্দর ভাবে ক্রিটিসিজম হ্যান্ডল করে! আমার কাছে তা শিক্ষণীয়। এখন পর্যন্ত বছরে দু’টো করে ছবি করে এসেছি। দেবদাকে দেখেছি একসঙ্গে তিনটে ফিল্মের শ্যুটিং করতে। কাজের চাপ বাড়লে কী ভাবে সব কিছু হ্যান্ডল করতে হয়, সেটা ওর কাছ থেকেই শিখতে হবে।”

জেল মাখা শেষ। একদম তেল চকচকে চেহারা। যতক্ষণ চিত্রগ্রাহক আলো ঠিক করতে থাকেন, অঙ্কুশ হাতে তুলে নেন দুই ডাম্বেল। রিগোরাস ওয়ার্কআউট যাকে বলে। পেশি ফুলে ওঠে। আর তার পর শুরু হয় শ্যুট। দু’তিনটে শটের পরেই আবার গিয়ে খানিকটা ওয়ার্কআউট করে আসেন। কখনও ডেকে নেন মেক আপ আর্টিস্টকে। সটান হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে বলেন পিঠের ওপর তাঁকে চড়ে বসতে। তার পর খান পাঁচেক পুশ-আপস! কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম নেমে ভিজিয়ে দেয় গলা।

শুরু হয় ফোটোশ্যুট। তার ফাঁকে ফোনে ধরা হয় পরিচালক রাজীবকে। অঙ্কুশকে পরিচালনা করেছেন ‘ইডিয়ট’-য়ে। ‘কানামাছি’-র গানগুলো বিদেশে গিয়ে উনি শ্যুট করেছিলেন। আগামী জুলাইয়ে দেব অভিনীত ‘বিন্দাস’ ছবির পরিচালক এই রাজীব। দেবের পরের ব্যাচের অভিনেতাদের মধ্যে অঙ্কুশকে কোথায় ফেলবেন তিনি? “ভাল অভিনয় করে। নাচে ভাল। কথা শোনে। প্যাকেজিংটা ভাল। স্টারডম অবশ্য শুধু মাত্র এ সব দিয়েই হয় না। কপালটা বড় ফ্যাক্টর। অঙ্কুশের আরও বেশি করে খবরে থাকা দরকার। বছরে আরও বেশি সংখ্যায় ছবি করা উচিত ওর,” বললেন রাজীব।

আপাতত দেবের সঙ্গে কাজ করছেন পরিচালক রাজ। অঙ্কুশের কাজ রাজেরও বেশ পছন্দ। “অভিনয়, নাচ দু’টোতেই অঙ্কুশ ভাল। শুধু রোম্যান্টিক হিরো নয়, অন্য ধরনের রোলও করা উচিত ওর। যেখানে ওর অভিনয়ের রেঞ্জটা দর্শক বুঝতে পারবে। আমি জানি অল্পবয়সিদের মধ্যে অঙ্কুশের ডিম্যান্ড আছে। তবে কিছু দর্শক এমন আছেন, যাঁরা হলে গিয়ে সব সময় সিনেমা দেখেন না। দুর্ভাগ্যবশত অঙ্কুশের ছবি টেলিভিশনে বেশি দেখানো হয় না। সেটার দিকেও নজর দেওয়া উচিত,” বললেন রাজ।

কিন্তু টেলিভিশনে অঙ্কুশের সিনেমা না দেখতে পাওয়ার কারণ হল ধানুকারা অঙ্কুশের ছবির স্যাটেলাইট রাইটস বিক্রি করেননি। তার কারণ? “প্রচুর অফার আছে। ইটস জাস্ট আ ম্যাটার অব টাইম,” বলছেন হিমাংশু ধানুকা।

ততক্ষণে একটা ফোটোসেশন শেষ। অঙ্কুশ আবার নতুন উদ্যমে এক্সারসাইজে মেতে উঠলেন। পাশ থেকে কেউ সাবধান করে দিলেন এত ঘনঘন এক্সারসাইজ করলে যদি পেশিতে ক্র্যাম্প ধরে যায়... কিন্তু সে কথা অঙ্কুশের কানে গেল বলে মনেই হল না। ব্যথা, চোট পেয়ে যাওয়ার ভয়, পরিশ্রমে কাহিল হয়ে পড়া এ শব্দগুলো বোধহয় কেউ অঙ্কুশের ডিকশনারি থেকে সেই মুহূর্তে মুছে তার পরিবর্তে লিখে দিয়েছিল ‘যা করবে ঠিক করেছ, তা মন দিয়ে করবে।’

কিন্তু এই গুণটা দিয়েই কি টলিউডের প্রথম সারির স্টার হওয়া যায়? বা আসন্ন দিনে হওয়াটা সম্ভবপর? লোকসভা নির্বাচনের পরে যদি দেবের ব্যস্ততা বেড়ে যায়, তা হলে কি সেই জায়গাটায় অঙ্কুশকে নিয়ে কাজ করার কথা পরিচালক/প্রযোজকরা ভাববেন? না কি এটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দেওয়ার মতো অলীক কল্পনা মাত্র? “ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও খালি জায়গা থাকে না। আমাদের ছবি করে যেতে হবে। এমনটা যদি হয় যে দেব আগে বছরে ৪-টে ছবি করত আর এর পর ২-টো করতে পারবে, তা হলে বাকি ২-টো তে ছবির জন্য অঙ্কুশকে কাস্ট করার ভালই চান্স থাকবে। না হলে হয়তো প্রোডাকশন হাউসগুলোকে নতুন কোনও ছেলেকে খুঁজে বের করতে হবে,” জানান রাজীব।

এই মুহূর্তে দেবের সঙ্গে অঙ্কুশের তুলনায় যেতে চান না রাজ। “দেবের এই জায়গাতে পৌঁছতে অনেক সময় লেগেছে। আমি এটুকু বুঝি যে অঙ্কুশ অনেক দূর এগোবে। আর নতুনদের মধ্যে বলব বনির কথা। নতুন মুখ। আমার পরের ছবি ‘বরবাদ’য়ে ওর সঙ্গে কাজ করে ভাল লেগেছে,” বলেন রাজ।

আর অঙ্কুশ? যদি শোনেন কোনও পরিচালক তাঁর কাছে এমন একটা কাজ নিয়ে এসেছেন যার জন্য প্রথম চয়েস ছিলেন দেব? “চিত্রনাট্য ভাল হলে নিশ্চয়ই করব,” সাফ জবাব দিয়ে দেন এই খিলাড়ি।

আর তাতে যদি কেউ বলে যে দেখো, দেব রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার সুযোগটা অঙ্কুশ নিলেন? “এ রকম তো ফার্স্ট টাইম হবে না যে একজন হিরোর রিজেক্ট করা ফিল্ম অন্য একজন হিরোর কাছে গেল। বলিউডে কয়েক হাজার এ রকম ফিল্ম হয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ এই রকম সমালোচনা করবে। আমি এটা ভেবেই খুশি যে আপাতত যে ক’টা ছবি আমার কাছে এসেছে, সেগুলোতে আমি প্রথম চয়েস ছিলাম,” বলেন অঙ্কুশ।

এই যে রাজ বললেন যে অঙ্কুশের উচিত নানা ধরনের ছবি করা? মেনস্ট্রিম রোম্যান্টিক ছবি করার ফাঁকে দেব আবার ‘চাঁদের পাহাড়’ আর ‘বুনো হাঁস’-য়ের মতো কাজ করেছেন। ‘বুনো হাঁস’-এর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী এখনও পর্যন্ত অঙ্কুশের কোনও ছবি দেখেননি। “দেবের সঙ্গে ইদানীং কাজ করেছি। তবে এটা বলব যে ওর প্রথম দিকের একটা ছবিও আমি দেখেছিলাম। বহু বছর আগে একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেবকে দেখে মনে হয় ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু অঙ্কুশের কোনও ফিল্ম আমার দেখা হয়ে ওঠেনি। টেলিভিশনে অঙ্কুশের একটা গান দেখেছি। শ্রাবন্তীর সঙ্গে। ওর স্ক্রিন প্রেজেন্স আছে। আজকাল মেনস্ট্রিম আর আর্টহাউস সিনেমার তফাতটা কমে যাচ্ছে। আমার সোহম, অর্জুন আর গৌরবের কাজও বেশ লাগে।”

অঙ্কুশ অবশ্য কম্পিটিশন নিয়ে আপাতত সে রকম কিছু ভাবছেন না। “ছ’সাত জন না থাকলে কম্পিটিশন কী করে হবে? আমাদের এখানে তো ব্যাচে মাত্র দু’তিন জন রয়েছেন। নিজের জায়গা নিয়ে আমি বেশ সচেতন। ‘ইডিয়ট’ করার সময় লোকে বলেছে একটা নতুন ছেলে এসেছে। ‘কানামাছি’-র পর শুনলাম আমি ভাল অভিনয় করি। ‘খিলাড়ি’-র সাফল্যে লোকে আমাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে। অল্পবয়সিরা বলছে যে আমার ছবি এলে দেখতে হবে। তবে এখনও এটা বলছে

না যে পরীক্ষা থাকলেও আমার ছবিটা দেখতেই হবে। দেবের ছবির খারাপ প্রোমো হলেও ১০০ জনের মধ্যে ৩৫ জন দেখতে যাবে। আর ভাল হলে তো ৯৫ জন দেখতে যাবে। কিন্তু আমার ছবির প্রোমো খারাপ হলে ৫ জন দেখতে যাবে। আর ভাল হলে ৮৫ জন,” বিশ্লেষণ করে বলেন তিনি।

অঙ্কুশের পছন্দের জুটি

• কোয়েল-জিৎ

• শ্রাবন্তী-জিৎ

• শুভশ্রী-দেব

• নুসরত-অঙ্কুশ

আর কেরিয়ার প্ল্যান বলতে কমার্শিয়াল ছবির দুনিয়ায় নিজের জায়গাটা আরও শক্ত করার কথা ভাবছেন তিনি। “হয়তো ২-৩ বছর পরে অন্য ধরনের ফিল্ম নিয়ে ভাবব। আপাতত তাঁদের কথা ভাবছি যাঁরা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি বলতে পাগল। ওই ছবির গান হিট হলেই আমরা তো শো করে নিজের জায়গাটা আরও স্ট্রং করি,” বলেন তিনি।

তার সঙ্গে এটাও বলেন যে মাত্র চারটে ছবি করে ইতিমধ্যেই যে তাঁর কিছু গুণ নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি এবং বাইরের লোকেরা কথা বলছে, তা নিয়ে তিনি বেশ খুশি। “চেষ্টা করি সব অভিনেতার কাছ থেকেই কিছু শিখতে। হৃতিকের অভিনয়, শাহিদ-রণবীরের চেহারা, এসআরকের ডেডিকেশন। বলিউড তারকাদের এই গুণগুলো সব সময় অনুপ্রাণিত করে। আর আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বুম্বাদার ডেডিকেশনটা শিক্ষণীয়। আসলে কাউকে নকল করতে চাই না। শুধু বেসিক ব্যাপারগুলো মন দিয়ে নজর করে নিই,” বলেন তিনি।

বেসিক ব্যাপারগুলো নাহয় নজর করলেন তিনি নিজে। কিন্তু কেরিয়ার প্ল্যানিং করতে কোনও গডফাদারের ভূমিকা রয়েছে তাঁর জীবনে? ইন্ডাস্ট্রিতে তো বলা হয় যে অশোক আর হিমাংশু ধানুকা তাঁকে যা করতে বলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে করে দেখান তিনি। নতুন অভিনেতার ক্ষেত্রে একটা প্রযোজনা সংস্থার এই ধরনের ব্যাকিং খুবই উৎসাহদায়ক। কিন্তু তাতে কতটা নিজের ফ্রিডমকে বিসর্জন দিতে হয়? ধানুকাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না তাঁর? “না, হয় না। আর যারা আমায় চেনে, তারা সবাই আমাকে ওঁদের দেওয়া তিনটে ছবির জন্যই চেনে। প্রত্যেকটা ফিল্ম আগের ফিল্মের থেকে বেশি ব্যবসা করেছে। ‘খিলাড়ি’ তো দারুণ ভাল করেছে। তাই ওঁদের গাইডেন্সে এখনও পর্যন্ত আমার কোনও ক্ষতি হয়নি,” জবাব তাঁর।

হিমাংশুর বক্তব্য হল, “আজ পর্যন্ত প্রায় দশ কোটি টাকা অঙ্কুশের ওপর আমরা লগ্নি করেছি। ‘কেল্লা ফতে’ করার পরে ও দেড় বছর বসে ছিল। তবু আমরা ওর মধ্যে ট্যালেন্ট দেখেছি। ওকে দিয়েই ‘ইডিয়ট’-য়ের মতো ছবি করেছিলাম। আজ অবধি যা টাকা ওর ছবির জন্য খরচ করেছি, সেখানে লাভের কথা ভাবিনি। ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেই ভেবেছি। আমাদের একে অপরের ওপর আস্থা আছে। আজ যদি কোনও বড় পরিচালক ওর সঙ্গে কাজ করতে আসে, আমরা নিশ্চয়ই সে ছবি প্রযোজনা করতে চাইব। আর ক্যাম্পের কথা বলছেন? বলিউডের নতুন হিরোরাও তো একই ভাবে কাজ করে। যশরাজ-য়ের ট্যালেন্টরা তো একমাত্র সেই ছবিগুলোই করে, যেগুলো যশরাজ প্রযোজিত বা এমন কোনও সংস্থা যার সঙ্গে যশরাজ-য়ের টাই-আপ আছে।”

এ দিকে অঙ্কুশ খুশি যে আজ পর্যন্ত কেউ তাঁর মিথ্যে প্রশংসা করেননি। “প্রশংসার সঙ্গে আমার নেগেটিভ পয়েন্টসগুলো নিয়ে জিতদা আর বুম্বাদাও বলেছে আমাকে। ‘ইডিয়ট’ মুক্তি পাওয়ার আগে জিতদা ফোন করে বলেছিল কী ভাবে মনকে শান্ত রাখতে হয়। নিজের কেরিয়ারের নানা চড়াই-উতরাইয়ের অভিজ্ঞতার গল্প বলেছিল,” এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন তিনি।

সামনে শুরু হবে ধানুকাদের সেই ‘রোমিও-জুলিয়েট’। নাচ নিয়ে নাহয় দেবের সঙ্গে তুলনা চলতেই থাকে। কিন্তু তার সঙ্গে এখন যোগ হবে রোমিও কানেকশন। দুই রোমিওর তুলনাকে কী ভাবে সামলাবেন তিনি? “অপর্ণা সেনের এই ছবিটার কথা জানতামই না। মনে হয় না তুলনা হবে। দু’টো ছবিতে রোমিও চরিত্রগুলো আলাদা ভাবে নিশ্চয়ই দেখানো হবে। পাবলিসিটিও হবে অন্য রকম করে।”

এত অল্প সময় ইন্ডাস্ট্রিতে এসে বাণিজ্যিক ছবির জনপ্রিয় নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন অঙ্কুশ। ব্যতিক্রম একমাত্র কোয়েল। ‘রোমিও জুলিয়েট’য়ের জুলিয়েটকে বাছতে তিনি অবশ্য নারাজ। বরং বেছে নিলেন কোন নায়িকার কী গুণ তাঁকে মুগ্ধ করেছে। জানালেন, “শুভশ্রীর নাচ আর পেশাদারিত্ব। শ্রাবন্তীর অভিনয়। নুসরতের স্ক্রিন প্রেজেন্স। কোয়েলদির হাসিটা দারুণ লাগে!”

বাস্তব জীবনে নিজেকে কি রোমিও বলবেন? “রোমিও-র অ্যাটিটিউডটা আছে আর মনটা দেবদাসের মতো!” প্রেমে নাকি তিন-তিন বার দাগা খেয়েছেন তিনি। “এখন আমি একদম সিঙ্গল,” সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

তা হলে এই যে তাঁকে আর ঐন্দ্রিলা সেনকে ঘিরে ইন্ডাস্ট্রিতে এত গুজব রয়েছে? রাত তিনটের সময়ও তিনি যে ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তা কি শুধু ইউটিউবে ভিডিয়ো বা ‘কমেডি নাইটস্ উইথ কপিল’ দেখার জন্য? ফোনের ও পারে কি তখন কেউ থাকে না? “ঐন্দ্রিলা-র সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে ঠিকই। ও আমার জীবনে ঘনিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে একজন। আগে যখন প্রেম করেছি, তখনও ফেসবুকের স্টেটাসেও সেটা লিখে দিয়েছিলাম। সিরিয়াস কিছু হলে আমি ঢোল পিটিয়ে জানাব। একদিন হয়তো মন থেকেই কাউকে আবার বলে বসব ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’,” বলেন তিনি।

এটা ঐন্দ্রিলাকে বলতে আর কত দিন বাকি? “আমি বলছি না সেটা ঐন্দ্রিলাকে একদিন বলতে পারব না। ও তো আমার বোন নয়। কিন্তু এটাও বলছি না যে ঐন্দ্রিলাকেই সেটা বলব,” বলেই মুচকি হাসেন তিনি। তবু যে আপনাদের জড়িয়ে এত গুজব? “আসলে বিক্রম (চট্টোপাধ্যায়), ঐন্দ্রিলা আর আমি ভীষণ ভাল বন্ধু। আমি আর ঐন্দ্রিলা যেমন বেড়াতে যাই, বিক্রম আর ঐন্দ্রিলাও যায়। আমরা তিনজনেও মজা করি,” বলেন অঙ্কুশ।

মন মানে না

এটা বলছি না যে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ কথাগুলো ঐন্দ্রিলাকে
একদিন বলতে পারব না। ও তো আমার রক্তের সম্পর্কের বোন নয়

অঙ্কুশ

অঙ্কুশ ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। একসঙ্গে খেতে যাই, সিনেমা দেখি... কেউ
যদি জিজ্ঞেস করে আমাদের মধ্যে ‘নো-কমিটমেন্ট রিলেশনশিপ’
আছে কি না, তা হলে আমি বলব হয়তো তাই

ঐন্দ্রিলা সেন

ঐন্দ্রিলারও একই মত। তবু ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিরিয়ালের দুষ্টুকে যখন জিজ্ঞেস করা হল তাঁদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজে এমন কী আছে যা দেখে অনেকের মনে হয় যে, তাঁরা ডেট করলেও স্বীকার করতে চান না? বন্ধুত্ব রয়েছে ঠিকই। তবে তার সঙ্গে রয়েছে কমিটমেন্ট-ফ্রি সম্পর্কও যেখানে বিয়ে করা নিয়ে আপাতত কোনও চিন্তা নেই... কথাবার্তাও হয়নি... “হ্যাঁ, তা হয়তো রয়েছে। অঙ্কুশ ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড,” বলেন ঐন্দ্রিলা।

তা হলে কি রিলেশনশিপ স্টেটাসটা ‘আনডিসাইডেড’ লেখাই ভাল? “সেটাই লিখুন,” বলেন অঙ্কুশ।

ইতিমধ্যে অঙ্কুশ বারংবার বলেছেন যে রোম্যান্টিক ছবি করলেও কোনও দিন কিসিং সিনে রাজি হবেন না। “শুভশ্রীর সঙ্গে এই ছবিতেও আমাদের একটা চুম্বনদৃশ্য ছিল। কিন্তু আমরা দু’জনেই তা করতে রাজি হইনি। আমার প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ডকে কথা দিয়েছিলাম স্ক্রিনে চুমু খাব না। সেই সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু আমার কথার একটা দাম থাকা উচিত। হঠাৎ যদি রাজি হয়ে যাই, তা হলে লোকে বলবে যে, আমার নিশ্চয়ই হিরোইনের সঙ্গে কিছু অফস্ক্রিন কেমিস্ট্রি চলছে!” হেসে বলেন অঙ্কুশ।

তবে এ শুনে রাজ বলেন যে তাঁর ছবিতে যদি সে রকম প্রয়োজন পড়ে অঙ্কুশকে দিয়ে উনি কিসিং সিন করিয়ে নিতে পারবেন। “রাজদাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি। ও বললে সেটা আমার কাছে অর্ডার হবে। তবে আমিও ওর পায়ে পড়ে গিয়ে বোঝাব কেন এটা করতে চাই না...”

তবে এখনও সে দিন আসেনি।

আপাতত এটাই বলা যায় যে, ঠোঁটে অঙ্কুশের পায়ের নখের সম্পূর্ণ অধিকার... সেখানে হিরোইনের ঠোঁটকে জায়গা করে নিতে গেলে এখনও বেশ কসরত করে নিতে হবে।

ankush priyanka dashgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy