Advertisement
E-Paper

সুনীল-শক্তি সুরে মাতল জেলার প্রথম কবিতা উৎসব

স্মৃতি, আবেগ, অভিমান, ক্ষোভ, বিতর্ক। শনি ও রবিবাসরীয় কবিতা উৎসবের ভেতর ও বাইরের দেখা মিলল সবকিছুরই। ১৯৮৫ সালের এক সন্ধ্যায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আগ্রহে, শুরু হয়েছিল কবিতা উৎসব। প্রিয় বন্ধুকে উৎসাহ দিতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। শক্তি চলে গিয়েছেন ১৯৯৫ সালের মার্চে। ২০১২ সালের অক্টোবরে অচিনপুরে যাত্রা করেছেন সুনীল। কিন্তু কবিতা উৎসব বন্ধ হয়নি।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০২:০২
কবিতা পড়ছেন শ্রীজাত। নিজস্ব চিত্র।

কবিতা পড়ছেন শ্রীজাত। নিজস্ব চিত্র।

স্মৃতি, আবেগ, অভিমান, ক্ষোভ, বিতর্ক। শনি ও রবিবাসরীয় কবিতা উৎসবের ভেতর ও বাইরের দেখা মিলল সবকিছুরই।

১৯৮৫ সালের এক সন্ধ্যায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আগ্রহে, শুরু হয়েছিল কবিতা উৎসব। প্রিয় বন্ধুকে উৎসাহ দিতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। শক্তি চলে গিয়েছেন ১৯৯৫ সালের মার্চে। ২০১২ সালের অক্টোবরে অচিনপুরে যাত্রা করেছেন সুনীল। কিন্তু কবিতা উৎসব বন্ধ হয়নি। কখনও কলকাতার নাগরিক কোলাহলের মাঝে, কখনও শান্তিনিকেতনের লাল মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। এ বছর ডাক এসেছিল বর্ধমানের। জেলার লোক সংস্কৃতি মঞ্চে শনি ও রবিবার হয়ে গেল ২০১৪ সালের কবিতা উৎসব। উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, কবি শ্রীজাত-সহ কলকাতা ও জেলার অনেক কবি ও সাহিত্যিক। এ বছর উৎসবের আয়োজক ছিল ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক, বাংলা সাহিত্য অ্যাকাডেমি, কলকাতার সাংস্কৃতিক সংস্থা আবৃত্তিলোক ও বর্ধমানের সাংস্কৃতিক সংস্থা আয়না।

এ বারের কবিতা উৎসবে কলকাতার কবিরা যেমন কবিতা পড়েছেন, তেমনই কবিতা পড়েছেন বর্ধমানের কবি রাজকুমার রায়চৌধুরী, স্বপ্নকমল সরকার, শ্যামলবরণ সাহা, ঋষিগোপাল মণ্ডল, সংঘমিত্রা চক্রবর্তী-সহ অনেকে। আবৃত্তিও করেছেন অনেকে। কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন, “এই কবিতা উৎসব উদ্বোধন করতে এসে আমার শক্তিদার (শক্তি চট্টোপাধ্যায়) নানা স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।” তিনি জানান, কবিতা নিয়ে ছবি করার জন্য শক্তিবাবু তাঁর কাছে এক প্রযোজককে নিয়ে এসেছিলেন। রবিবার দুপুরে ‘কবিতায় কল্পলতা’ নামের একটি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কবি শ্রীজাত। সেখানে তিনি বাদ্য যন্ত্রের সাহায্য কবিতা পাঠের বিরোধিতা করেন। এরপরে দর্শকাসন থেকে এক দর্শক তার মন্তব্যের বিরোধিতা করে প্রশ্ন করেন, “যদি সুর করে আবৃত্তি করা অপরাধ হয়, তাহলে শের বা শায়েরি কী কবিতা নয়?” যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে তখন সরগরম হয়ে ওঠে সংস্কৃতি লোকমঞ্চ।

শুধু প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে তর্কই নয়, বাইরেও জমা হয়েছে ক্ষোভ ও অভিমান। কবিতা উৎসবে ডাক না পাওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন জেলার কয়েকজন কবি। জেলার ধ্রুবতারা পত্রিকার সম্পাদক মুশাররফ আজমের দাবি, “স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি করতে যাঁদের ডাকা হয়েছিল, তাঁদের বাইরেও অনেক কবি ও আবৃত্তিকার ছিলেন, যাঁদের ডাকলে হয়তো অনুষ্ঠানের মর্যাদাহানি হতো না।” তবে কবিতা উৎসবের স্থানীয় সংগঠক দেবেশ ঠাকুর ও অংশুমান করের অবশ্য দাবি, “উৎসবের কবি ও আবৃত্তিকার কলকাতা থেকে বাছাই করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।” কবিতা উৎসবে আসার কথা থাকলেও আসেননি কবি সুবোধ সরকার। উদ্যোক্তারা জানান, সুবোধবাবু অসুস্থ। তবে, উৎসব উপলক্ষ্যে প্রকাশিত পুস্তিকায় অবশ্য সুবোধবাবুর প্রবন্ধ রয়েছে। অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি সুনীলবাবুর স্ত্রী তথা কৃত্তিবাস পত্রিকার সম্পাদক স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা শুনতে বেশিরভাগ সময়েই ভরা ছিল প্রেক্ষাগৃহ। ‘পদ্যের প্রভূর প্রতি’ অনুষ্ঠানে কবিরা যখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি করলেন, তখন বিতর্ক ভুলে উপস্থিত অনেক দর্শককেই আড়ালে চোখের জল মুছতে দেখা গেল। যা দেখে জেলার এক কবি মুচকি হেসে বলে উঠলেন, “যত বিতর্কই হোক, শেষ পর্যন্ত জয় হল কবিতারই।”

festival rana sengupta bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy