এখানেই বসে লিখতেন বঙ্কিমচন্দ্র।
সংস্কারের পরে নতুন করে সেজে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র সংগ্রহশালা। বঙ্কিমচন্দ্রের ১৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে গত শনিবার সেখানে শুরু হয়েছে জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান। বুধবার তার শেষ দিন। ওই দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হবে দু’টি বই— বঙ্গদর্শন (ষোড়শ সংখ্যা), বঙ্কিম অভিধান (প্রবন্ধ খণ্ড) এবং ‘বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়ি ও বঙ্কিমভবন গবেষণা কেন্দ্র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা।
সংগ্রহশালার কিউরেটর গৌতম সরকার বলেন, “বঙ্কিমচন্দ্রের বৈঠকখানা বাড়িকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে এই সংগ্রহাশালা। সংস্কারের পরে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে তিনটি গ্যালারিকে। এ ছাড়াও সংগ্রহশালার বাইরের দিকের সংস্কার করা হয়েছে।”
প্রথম গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের জীবন ও বঙ্গদর্শনের মজলিস শীর্ষক একটা ধারণা। রয়েছে নানা দুর্লভ আলোকচিত্র। এ সবের পাশাপাশি রাখা হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্কিমবাবুর টেবল-চেয়ারের প্রতিরূপ। যে ঘরকে কেন্দ্র করে এই গ্যালারিটি গড়ে উঠেছে সেটি ছিল তাঁর লেখার ঘর। এখানে বসেই ১৮৭৫ সালে তিনি রচনা করেছিলেন ‘বন্দেমাতরম’। মূল বসতবাড়ির ভিতরে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মস্থান ও শোওয়ার ঘর। সেখানে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত পালঙ্ক, দেরাজ-আলমারি ও ঘড়ি। পরিবার পরিজনদের নিয়ে কিছু দিন এখানে তিনি ছিলেন।
পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দফতর নৈহাটিতে একটি সংগ্রহালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় সাহিত্য পরিষদ নৈহাটি শাখার সহ-সম্পাদক ছিলেন অতুল্যচরণ দে পুরাণরত্ন। তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের মেজদা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পৌত্র সতঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলি সংগ্রহালয়ে দান করার জন্য।
এর পরে সেই সব জিনিসপত্র নিয়ে ১৯৫৪ সালে ‘ঋষি বঙ্কিম গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তবে বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে সংগ্রহালয় তৈরি হলেও, কালের স্রোতে তাঁর বসত বাড়িটির জরাজীর্ণ অবস্থা হয়। ভেঙে পড়ে পুজোর দালান। ১৯৮৮ সালে রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর বসতবাড়ির সদর এবং পূর্ব দিকের অংশের সংস্কার করে।
১৯৯৯ সালে উচ্চশিক্ষা বিভাগের আর্থিক সাহায্যে গড়ে ওঠে ‘বঙ্কিমভবন গবেষণা কেন্দ্র’। এর পর থেকেই শুরু হয় বঙ্কিমচন্দ্রের বসত বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ। এর পাশাপাশি বঙ্কিমভবন গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে জুড়ে যায় সংগ্রহালয়টিও। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাড়িটির পশ্চিম অংশের সংস্কার ও সংরক্ষণের। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলে সেই সংস্কার পর্ব। ২০০০ সাল থেকে পুনরায় শুরু হয় বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশ।
বুধবার বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকার কথা।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy