Advertisement
E-Paper

হিন্দি সিনেমায় বাঙালি কম্যান্ডো

নাম দীপাঞ্জন চক্রবর্তী। বাঙালি পরিচালকের তৈরি হিন্দি ছবি ‘চওকি’-তে অভিনয় করছেন তিনি। লিখছেন সুনন্দ ঘোষকল্যাণীতে জন্ম। ‘কম্যান্ডো’ দীপাঞ্জন চক্রবর্তীকে এ বার সত্যি সত্যি রুপোলি পর্দায় এনে ফেলেছেন আরও এক বাঙালি। কোমরের হোলস্টারে ‘গ্লক’ পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই ডাকাবুকো কম্যান্ডোকে পেড়ে ফেলেছেন একেবারে পুলিশেরই চরিত্রে।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২১

এই ৪৮ বছর বয়সেও পাঁচ ফুট সাড়ে আট ইঞ্চি-র চেহারাটা সুঠাম।

এখনও খালি হাতে পাঁচ-ছ’জনকে একা ঘায়েল করে দিতে পারেন।

মার্শাল আর্ট করতে গিয়ে এক সময়ে ভেঙে ফেলেছেন বুকের পাঁজর। আজও জোড়া লাগেনি তা।

তাঁর চোখের সামনে ভিআইপি কনভয়ের তিনটে গাড়ি উড়ে গিয়েছে বিস্ফোরণে। চতুর্থ গাড়িতে থাকা অচৈতন্য ভিআইপি-কে কাঁধে ফেলে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন নিরাপদ স্থানে।

অশান্ত পঞ্জাবে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে গুলির লড়াই চালিয়েছেন। এমপি ফাইভ-এর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছেন আততায়ীর বুক। সেই সময়ে ২৬ বছর বয়সি সেই ‘ব্ল্যাক ক্যাট কমাণ্ডো’-র মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা!

কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য হতে পারে তাঁর জীবনে ফেলে আসা যে-কোনও একটি দিন! তাঁর কথায়, “মাঝে মধ্যেই দেখা হয়ে যেত মৃত্যুর সঙ্গে, কোনও না কোনও ভাবে। এখনও একা বসে অবাক হয়ে ভাবি, আমি এখনও বেঁচে আছি!”

একদা আধা-সামরিক বাহিনীর অফিসার, পরে কালো পোশাকের ‘ব্ল্যাক ক্যাট কমাণ্ডো’ সেই বাঙালি যুবক এখন প্রবাসে থিতু হয়ে বসেছেন নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদের চাকরিতে।

কল্যাণীতে জন্ম। ‘কম্যান্ডো’ দীপাঞ্জন চক্রবর্তীকে এ বার সত্যি সত্যি রুপোলি পর্দায় এনে ফেলেছেন আরও এক বাঙালি। কোমরের হোলস্টারে ‘গ্লক’ পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই ডাকাবুকো কম্যান্ডোকে পেড়ে ফেলেছেন একেবারে পুলিশেরই চরিত্রে। ‘অনুসন্ধান’য়ের অমিতাভ বচ্চন নন, ‘অব তক ছপ্পন’-এর নানা পাটেকর নন, অভিনয়ে এ বার একেবারে আসল বন্দুক ব্যবহার করা আসল কম্যান্ডো! যাঁর রক্ত আজও গরম। আজও যিনি রাতের ট্রেনে একা উঠতে ভয় পান এটা ভেবে যে, চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতী তাঁর চোখের সামনে মহিলাদের উত্যক্ত করতে গেলে খুনের দায়ে পড়ে যাবেন তিনি!

কেমন ছিল দীপাঞ্জনের অভিজ্ঞতা?

’৯৩ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল মাঝ আকাশ থেকে। দিল্লি থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পথে। অমৃতসরের বিমানবন্দরে সেই বিমানকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ‘অপারেশন’-এর দায়িত্বে ছিলেন দীপাঞ্জন। আকাশে বায়ুসেনার বিমান থেকে দড়ি বেয়ে নেমে আসেন দলবল নিয়ে। প্রথমে দু’জন কম্যান্ডো নেমে ‘লো ইনটেনসিটি এক্সপ্লোসিভ ডোর ফ্রেম’ লাগিয়ে বিমানের দুটো দরজা উড়িয়ে দেন। তার পরেই নেমে আসেন দীপাঞ্জন ও তাঁর সঙ্গী। বিমানের ডানায় নামার পরে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া দরজা-পথ দিয়ে দেখতে পান এক আততায়ী দাঁড়িয়ে বিজনেস ক্লাসে। বিপদ বুঝে হাতে ধরা গ্রেনেডের পিন খুলছে সে।

দীপাঞ্জনের ডান হাতে ধরা গ্লক-এর নল থেকে গুলি ছিটকে বেরোতে তাই বেশি সময় লাগেনি। ‘শার্প-শুটার’-এর গুলি লাগে আততায়ীর মাথায়। কিন্তু, ততক্ষণে গ্রেনেডের পিনও খুলে ফেলেছে সে। ক্ষিপ্রতায় দূর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীপাঞ্জন। রক্তে, ঘিলুতে মাখামাখি হয়ে যায় তাঁর চোখ-মুখও। জানতেন, পিন খোলা গ্রেনেড সমেত আততায়ী বিমানের মেঝেতে পড়ে গেলেই বিস্ফোরণ! উড়ে যাবেন ১১০ জন যাত্রী, ৬ জন বিমানকর্মীর সঙ্গে দীপাঞ্জন ও তাঁর সঙ্গীও। তাই, প্রায় মুণ্ডহীন সেই আততায়ীকে জড়িয়ে ধরে, তার হাতে ধরা পিন-খোলা গ্রেনেড তুলে নেন নিজের হাতে।

নিজস্ব কায়দায় সেই গ্রেনেডকে নিষ্ক্রিয় করে দেন।

ক্ষিপ্র সেই কম্যান্ডো এ বার পুলিশের ভূমিকায়। হিন্দিতে ‘চৌকি’ তৈরি করেছেন বাঙালি পরিচালক শেখর ওরফে কিটু ঘোষ। দিল্লির একটি পুলিশ থানার একটি রাতের ঘটনা। পড়াশোনা করা এক অপরাধী-র সঙ্গে সেই রাতে থানায় রয়ে যাওয়া এক পুলিশ অফিসারের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই-এর গল্প। দেখা যাচ্ছে, রাজেন শ্রীবাস্তব অপরাধী। তিনি আবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম-এ ফার্স্ট ক্লাস। ‘উস্তরা’ বা ক্ষুর চালাতেও তিনি ওস্তাদ। সেই রাতে আচমকা খবর আসে, এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বোমা রাখা আছে। থানা থেকে সবাই বেরিয়ে পড়েন বোমার খোঁজে। থানার দায়িত্বে থেকে যান সাব-ইন্সপেক্টর মহিন্দর সিংহ। বদমেজাজি, মদ্যপ, স্যাডিস্ট, ‘ট্রিগার-হ্যাপি’ এক অফিসার। সেই রাতে রাজেনের সঙ্গে মহিন্দরের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হয়। মহিন্দরের সামনে মদের গেলাস। হাতে খোলা পিস্তল। রাজেনের সঙ্গে শুধুমাত্র মগজাস্ত্র। দু’জনে ভাগ করে নিতে থাকেন নিজেদের জীবনের গল্প। আর দু’জনের গল্পেই উঠে আসেন একটি নির্দিষ্ট নারী চরিত্র। দু’জনেই আগে থেকে জানতেন অন্যের জীবনে সেই মহিলার উপস্থিতি। তাই নিয়ে চলে মানসিক টানাপোড়েন।

দিল্লিতে পুলিশের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিটুর এক সাইকোলজিস্ট বন্ধু-র ধারণা হয় বেশির ভাগ পুলিশই সাইকো। বিষয়টি কিটু-কে ভাবায়। তখনই ঠিক করেন এই বিষয় নিয়ে সিনেমা করার। নিজেও থানায় ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু গবেষণা করেন কিটু। তাঁর দাবি, বেশির ভাগ সিনেমায় পুলিশকে দেখানো হয় হিরো বা ভিলেনের ভূমিকায়। তিনি পুলিশের চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করেছেন।

কিটু বলছেন, “কিছুটা হলেও খ্যাপাটে এই পুলিশের ভূমিকায় দীপাঞ্জনকে পেয়ে যাই। ওঁর জীবনের এক-একটা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, খ্যাপামো ছাড়া ওই কাজটা করা সম্ভব ছিল না। মনে হয়েছে, এই চরিত্রে কোনও অভিনেতা নয়, দীপাঞ্জনের মতো আসল একজনকে নামিয়ে দেখাই যাক না।”

পরিচালক কিটু-র বাবা-মা এক সময়ে কলকাতার পূর্ণদাস রোডে থাকতেন। পরে চলে যান দিল্লি। কিটুর পড়াশোনাও তাই দিল্লিতে। সেখান থেকে মুম্বই। যোগাযোগ হয় সিনে জগতের সঙ্গে। রিলিজ করা প্রথম ছবি ‘সুপার সে উপার’-এর স্টোরি-লাইনও একটু ভিন্ন ধাঁচের। রাজস্থানী এক ছেলে, যে কখনওই রাজস্থানে থাকেনি বা যায়নি, সে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে সম্পত্তির আশায় মামার খোঁজে পাড়ি দেয় রাজস্থানে। কিটু-র কথায়, “ভাল সাড়া পেয়েছিলাম। তবে, ওই সিনেমা শুরুর আগেই ‘চৌকি’-র কাজ শুরু। সে অর্থে চৌকি-ই আমার প্রথম মুভি।”

সিনেমার শু্যটিং শেষ। সুধীর মিশ্র প্রোডাকশনের এই সিনেমার প্রোমো-র জন্য কিছু দিনের মধ্যেই কলকাতায় আসবেন কিটু। সঙ্গে দীপাঞ্জন, শিক্ষিত সেই অপরাধীর ভূমিকায় অভিনয় করা যুধিষ্ঠির ওরস এবং নায়িকা সন্ধ্যা মৃদুল। কিটু জানাচ্ছেন, তিন মাস প্রোমো চলবে। তার পরে জুলাইয়ের শেষে রিলিজ করার কথা ‘চওকি’র।

ফোনের ও পার থেকে দীপাঞ্জন বলেন, “সিনেমাটা মন দিয়ে যদি দেখেন দেখবেন সেখানে মহিন্দর সিংহ কোনও খেলনার পিস্তল ব্যবহার করেনি। আমার নিজের লাইসেন্সড ব্যারেটা (ইতালিতে তৈরি) ব্যবহার করা হয়েছে।”

স্বাভাবিক! গ্লক ব্যবহার করা কম্যান্ডো-র হাতে নকল পিস্তল মানাবে কেন!

আনাচে কানাচে

‘তারক’-এর সংসার: বাড়িতে ছেলে উপমন্যু ও স্ত্রী অপরাজিতা-র সঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তী। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

deepanjan chakraborty hindi film
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy